Bangladesh Flood: বাংলাদেশের ১২টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই বন্যায় প্রায় ৩৬ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।বন্যাকবলিত ১২টি জেলার মধ্যে রয়েছে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ।
এই জেলাগুলোতে বন্যার তাণ্ডবে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে কক্সবাজারের রামুতে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, “দেশের বন্যাকবলিত জেলা ১০টি। আর প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। বন্যায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। টেলিযোগাযোগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে না।”বন্যার কারণ সম্পর্কে শফিকুল আলম বলেন, “আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশে টানা বৃষ্টি হয়েছে এবার। ১৬ আগস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছিল।”বন্যার প্রভাব যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও পড়েছে। চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
Assam Floods: কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে বন্যার তাণ্ডব, ১২৯টি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেক স্থানে পানি জমে আছে। ফেনী ও খাগড়াছড়ির অর্ধেক মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে।বন্যার্তদের সহায়তায় পাঁচ জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাসদস্যরা বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ করছেন। তবে এই সাহায্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন অনেকেই।বন্যার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থাও ব্যাহত হয়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে আরও বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।বন্যার জন্য অনেকে ত্রিপুরার ডুম্বুর বাঁধ থেকে জল ছাড়াকে দায়ী করছেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তাঁদের মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকালে সাক্ষাৎ হয়। এই সাক্ষাৎকে ‘স্বাভাবিক’ বলে জানিয়েছে ভারত। তবে এই বৈঠকে সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির কথাও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।বন্যা মোকাবিলা করার জন্য সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মতন নতুন কোনও ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলেও জানান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এটি দুই দেশের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।তবে এই বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করার বিষয়ে ত্রিপুরা মোথার প্রধান প্রদ্যোত মাণিক্য দেববর্মা ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “যদি ভারতীয় বাঁধ ভেঙে যেত, তাহলে ১০ গুণ বেশি ক্ষতি হত।” এটি দেখায় যে বন্যার কারণ নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
বন্যার প্রভাব শুধু মানুষের জীবনেই নয়, কৃষি ও পশুপালন খাতেও পড়েছে। হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।বন্যার কারণে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিও বেড়েছে। দূষিত পানি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস এ-সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে।বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আগামীকাল শনিবার নাগাদ বৃষ্টি একটু কমতে পারে। এটি বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটাতে পারে।সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠাচ্ছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, এই সাহায্য যথেষ্ট নয়। তাই বন্যাপ্লাবিত জেলাসমূহকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দাবি উঠেছে।বন্যার প্রভাব মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা বাড়তে পারে। তাই নদী খনন, বাঁধ নির্মাণ ও মজবুতীকরণ, বন্যা প্রতিরোধী ফসল চাষ, সতর্কীকরণ ব্যবস্থা উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।এই বন্যা পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সঙ্কট মোকাবিলা করা সম্ভব। তবে এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতাও জরুরি।
বন্যার এই ভয়াবহতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বসবাস ও উন্নয়ন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও স্থানীয় উদ্যোগ – দুটোই সমানভাবে প্রয়োজন। আশা করা যায়, এই দুর্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকবে বাংলাদেশ।