Economic situation in Bangladesh Inflation rate: বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ১১.৬৬% এ পৌঁছেছে, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪.১০% এবং অখাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯.৬৮% এ পৌঁছেছে। এর আগে জুন মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ১০.৪২% এবং ৯.১৫%।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও অশান্তির কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় মূল্যস্ফীতি এত বেড়েছে।জুলাই মাসে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন ও বিক্ষোভের কারণে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে কারফিউ জারি করা হয় এবং কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকে। এতে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রেল ও বন্দর সেবাও ব্যাহত হয়। এসব কারণে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়।ট্রেডিং ইকোনমিক্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ১৯৯৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গড়ে ৬.৫৬% ছিল। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে এটি সর্বোচ্চ ১২.৭২% এ পৌঁছেছিল। তবে বর্তমানে এটি আবার ১২ বছরের রেকর্ড ছুঁয়েছে।
Money Printing Machine: ইচ্ছে মতো কেন টাকা ছাপানো যায় না? অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা ও প্রভাব
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, “বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরা মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবেলায় অনেক দেরিতে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফলে শহর ও গ্রাম উভয় এলাকায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে।”মাস্টারকার্ড ইকোনমিক ইনস্টিটিউট (এমইআই) এর সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি উভয়ই কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের মতে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৭% এ নেমে আসবে, আর মূল্যস্ফীতি ২০২৪ অর্থবছরের ৯.৮% থেকে কমে ২০২৫ অর্থবছরে ৮% এ নামবে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই ২০২৪ এ দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা জুন মাসে ছিল ২১.৭৮ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি ও অন্যান্য পেমেন্টের জন্য বেশি পরিমাণে ডলার ব্যয় হওয়ায় রিজার্ভ কমেছে।উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে। খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারছেন না। এছাড়া ঔষধ, শিক্ষা, পরিবহন ইত্যাদি খাতেও ব্যয় বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মুদ্রানীতি কঠোর করতে হবে। তবে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।তুলনামূলকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির হার কম। ভারতের মূল্যস্ফীতি নভেম্বর ২০২৩ এ ৫.৫৫%, নেপালে ৫.৩৮%, ভুটানে ৫.০৭% ছিল।
শ্রীলঙ্কা তাদের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে মূল্যস্ফীতি ৩.৪% এ নামিয়ে এনেছে।বাংলাদেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতির পিছনে বাইরের ও অভ্যন্তরীণ কারণ রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়াও মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর কারণ হয়েছে।বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস, রপ্তানি আয় কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা রয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চাপের মধ্যে রয়েছে।সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদ হার বাড়িয়েছে।
এশিয়ার ১০টি দেশের জাতীয় সংগীত: যা আপনি জানতেন না!
পাশাপাশি বাজারে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপের ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।সামগ্রিকভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় অর্থনৈতিক সমস্যা। এটি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মন্তব্য করুন