বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল (৫ আগস্ট, ২০২৪) পদত্যাগ করেছেন এবং দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এর ফলে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর এই পদত্যাগ ঘটেছে।
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকাল শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশের সামনে এখন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
রাজনৈতিক অস্থিরতা
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। তিনি নাগরিকদের ধৈর্য ধরতে এবং সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা রাখতে অনুরোধ করেছেন।
বিরোধী দলগুলো এখন ক্ষমতায় আসার সুযোগ খুঁজছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দুর্বল ও বিভক্ত অবস্থায় রয়েছে। ফলে কোন দল ক্ষমতায় আসবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
Bangladesh Metro Rail: মেট্রো রেলের ক্ষতি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন শেখ হাসিনা
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, “এখানে রাজনীতি থাকছে না এবং সংসদে যারা বসবেন তাদের মধ্যে সত্যিকারের রাজনীতিবিদের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন।”
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন একটি নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, বিনিয়োগ ও ডলার সংকট মিলিয়ে অর্থনীতির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে নির্বাচন প্রক্রিয়াটি হলো সেটার মধ্যে দিয়ে সরকার কি এমন কোনো রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে বেরোতে পারবে কিনা, যেটার ভেতর দিয়ে সে তার প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করতে পারবে?”
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার
শেখ হাসিনার শাসনামলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তার সরকারের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক নিখোঁজ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং বিরোধী মত দমনের অভিযোগ ছিল।
নতুন সরকারের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হলো গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন করা। এছাড়া বিগত মাসে প্রতিবাদকারীদের উপর নিপীড়নের জন্য দায়ীদের বিচারের দাবিও উঠেছে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
গত কয়েক সপ্তাহে হিংসাত্মক বিক্ষোভে কমপক্ষে ২৮০ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।
নতুন সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। পাশাপাশি হিংসাত্মক ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনাও জরুরি।
বেকারত্ব সমস্যা
বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ বেকার। এটি একটি বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। বিশেষ করে যুব সমাজের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন থেকেই বর্তমান সংকটের সূত্রপাত। নতুন সরকারের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং বেকারত্ব কমানো।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। পাশাপাশি চীনের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছিল।
নতুন সরকারের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখা। বিশেষ করে ভারত ও চীনের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। ভারত সম্ভবত বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করে তার স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করবে।
West Bengal Cpim: বঙ্গ সিপিএমের ঘুম ভাঙবে কবে? ভোটের ময়দানে কি আবার ফিরবে লাল পতাকা?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন
বর্তমানে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো একটি গ্রহণযোগ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা। এই সরকারের উপর দায়িত্ব থাকবে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন যে তিনি রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের সাথে আলোচনা করবেন এবং বিরোধী দলগুলোর সাথেও কথা বলবেন। তিনি দিনের শেষের মধ্যে একটি সমাধান বের করার আশা প্রকাশ করেছেন।
শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বেকারত্ব সমস্যা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক – এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
একটি গ্রহণযোগ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। তবে সঠিক নেতৃত্ব ও সুশাসনের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। এজন্য সকল পক্ষের সহযোগিতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
