Bangladesh quota movement Student Death: বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আবারও রাস্তায় নেমেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের স্মৃতি এখনও তাজা, যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় সরকার বাধ্য হয়েছিল কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে। তবে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আবারও কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের আদেশ দেওয়া হয়েছে, যা নতুন করে আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে। এই আন্দোলনের সময়ে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলেছে।
বাংলাদেশের কোটা ব্যবস্থা ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য, ১০ শতাংশ মহিলাদের জন্য, ১০ শতাংশ পিছিয়ে পড়া জেলার জন্য, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত। এই ব্যবস্থা মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ার সুযোগকে সীমিত করে দেয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দেয়।
২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের প্রধান দাবিগুলো ছিল:
এই আন্দোলনের ফলস্বরূপ, সরকার ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির জন্য কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে।
২০২৪ সালের জুন মাসে হাইকোর্ট কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের আদেশ দেয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে অসন্তোষের জন্ম দেয়। জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু হয়, যা দ্রুত সহিংস রূপ নেয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। এই সময়ে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয় এবং কয়েকজন নিহত হয়।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র পুলিশের সাথে সংঘর্ষে নিহত হয়। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাথে সংঘর্ষে আরও দুইজন নিহত হয়। ঢাকার মোহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা, যা ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ উঠেছে, যা আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ বলে অভিহিত করেছেন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ আন্দোলনকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, সরকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সহ্য করবে না। সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
তারিখ | ঘটনা | স্থান | হতাহতের সংখ্যা |
---|---|---|---|
১ জুলাই ২০২৪ | আন্দোলন শুরু | ঢাকা | অসংখ্য আহত |
৫ জুলাই ২০২৪ | হাইকোর্টের আদেশ | ঢাকা | – |
১২ জুলাই ২০২৪ | সংঘর্ষ | চট্টগ্রাম | ২ জন নিহত |
১৫ জুলাই ২০২৪ | সংঘর্ষ | রংপুর | ১ জন নিহত |
১৬ জুলাই ২০২৪ | ব্যাপক সংঘর্ষ | ঢাকা | ৪০০+ আহত |
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের সময় ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে তার বক্তব্য এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিচে উপস্থাপন করা হলো:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কোটা সংরক্ষণ করা উচিত, কারণ তারা দেশের স্বাধীনতার জন্য অসামান্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “তাদের বর্তমান রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান সর্বোচ্চ সম্মানের দাবিদার।” শেখ হাসিনা আরও বলেন, “নিজেদের স্বপ্ন ত্যাগ করে, পরিবার এবং সবকিছু পিছনে ফেলে তারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন” ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ বলে অভিহিত করেছেন। ‘রাজাকার’ শব্দটি বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতা করা ব্যক্তিদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। শেখ হাসিনা বলেন, “যদি মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা না পায়, তাহলে কি রাজাকারদের নাতি-নাতনিরা এই সুবিধা পাবে?”।
সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ রাবার বুলেট এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। রংপুরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে একজন ছাত্র নিহত হয়েছেন। ঢাকায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষে আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার আন্দোলনকারীদের উপর সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার যে কোনো সুষ্ঠু গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।” যুক্তরাষ্ট্রের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, “ছাত্র আন্দোলনে কেউ মারা যায়নি” এবং যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে ।
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের সময় ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সরকার শান্তি ফেরাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপগুলো আন্দোলনকারীদের শান্ত করতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নেওয়া হয়েছে। নিচে এই পদক্ষেপগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
সরকার আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ রাবার বুলেট এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে যাতে আন্দোলনকারীরা রাস্তা অবরোধ করতে না পারে এবং সহিংসতা না ছড়ায়।
ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং অন্যান্য শহরে ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষে কয়েকজন নিহত এবং বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য কোটা সংরক্ষণের পক্ষে কথা বলেছেন এবং আন্দোলনকারীদের দাবিকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন।
সরকার কোটা সংস্কার নিয়ে আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে এবং আদালতের আদেশ মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, “সরকার আদালতকে পাশ কাটিয়ে কিছুই করবে না।” তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারীরা চাইলে তাদের বক্তব্য আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারে।
Indian Historical Event: ২ রা জুলাই ভারতের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন
সরকার শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজতে চায়। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে একটি যৌক্তিক সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগও শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজতে উদ্যোগ নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহল থেকে সহিংসতার নিন্দা জানানো হলেও, সরকার তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে যে, “ছাত্র আন্দোলনে কেউ মারা যায়নি” এবং যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে
বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন একটি জটিল ও সংবেদনশীল বিষয়, যা শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ার অধিকারকে কেন্দ্র করে। ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা এই আন্দোলনকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। সরকারের উচিত হবে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা এবং একটি স্থায়ী সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়া। অন্যথায়, এই আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে এবং দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।