Bangladesh Quota Movement: রক্তাক্ত ক্যাম্পাস, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম হামলা

Bangladesh quota reform movement: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্যাম্পাস আজ রক্তে ভেসে গেল। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের বর্বর হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী…

Chanchal Sen

 

Bangladesh quota reform movement: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্যাম্পাস আজ রক্তে ভেসে গেল। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের বর্বর হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীরাও রেহাই পাননি। হামলার তীব্রতা এতটাই ছিল যে, আন্দোলনকারীরা পালিয়ে বাঁচতে বাধ্য হন।

১৫ জুলাই ২০২৪, সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, দোয়েল চত্বর, টিএসসি এলাকা, বিজয় একাত্তর হল এবং ইডেন মহিলা কলেজে এই হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা হেলমেট পরে এবং লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ওপর চতুর্মুখী হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবে কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে আহতের সংখ্যা দুই শতাধিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ৬ জন ছাত্রী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি শাহিনুর সুমিকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া সায়েমা, তামান্না, ফাহমিদা, সানজিদা, মিমসহ আরও কয়েকজন ছাত্রী আহত হয়েছেন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ জানান, “কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আমাদের কর্মসূচি ছিল। ইডেন কলেজ থেকে কয়েকজন সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে সেখানে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের ২০-৩০ জন আমাদের ওপর হামলা ও মারধর করে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের সামনেও ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ৫০ জন আন্দোলনকারী আহত হন। হামলাকারীরা মাথায় হেলমেট পরে এবং হাতে লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই হামলায় নারী শিক্ষার্থীরাও আহত হন।

বাড্ডা-নতুন বাজার মোড়েও কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছিলেন। পুলিশের বাড্ডা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা জানান, “কোটা সংস্কারের দাবিতে বাড্ডা-নতুন বাজার মোড়ে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। তাঁদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।”

এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও (চবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার খবর পাওয়া গেছে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার ও কাটাপাহাড় সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলায় শাটল ট্রেন চলাচলেও বাধা সৃষ্টি হয়।

কুড়িগ্রামেও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলায় আহত তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পটভূমি:

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থায় স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে গত কয়েক বছর ধরে এই আন্দোলন চলে আসছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের মূল দাবি হলো সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার সংস্কার।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬% পদ কোটার মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০%, মহিলা কোটা ১০%, জেলা কোটা ১০%, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা ৫% এবং প্রতিবন্ধী কোটা ১%। বাকি ৪৪% পদ মেধার ভিত্তিতে পূরণ করা হয়।

আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, এই কোটা ব্যবস্থা মেধাবী প্রার্থীদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। তারা চাইছেন কোটা ব্যবস্থা সংশোধন করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের হার বাড়ানো হোক।

বামপন্থার পুনরুত্থান: বাংলার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমত

সরকারের প্রতিক্রিয়া:

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন যে, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে সে সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোটা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এর সংস্কার করা যেতে পারে। এ জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তার সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের অবস্থান:

আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা কোটা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ তুলে দেওয়ার দাবি করছেন না। তারা চাইছেন কোটার হার কমিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের হার বাড়ানো হোক। তাদের প্রস্তাব হলো, সব ধরনের কোটা মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০% রাখা হোক এবং বাকি ৯০% পদ মেধার ভিত্তিতে পূরণ করা হোক।

আন্দোলনকারীরা আরও বলছেন, বর্তমান কোটা ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে কোটার সুবিধা পাওয়ার যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায় না। ফলে অনেক পদ খালি থেকে যায়। এতে সরকারি কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। তাই কোটা সংস্কার করা জরুরি।

Arvind Kejriwal’s Arrest: অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি এবং বিতর্ক, এর শেষ কোথায়?

বিশেষজ্ঞদের মতামত:

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করা প্রয়োজন। তবে এটি সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া উচিত নয়। কারণ সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য কিছু সুযোগ রাখা দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “কোটা ব্যবস্থা সংশোধন করা দরকার। তবে এটি সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ আমাদের সমাজে এখনও অনেক বৈষম্য রয়েছে। তাই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু সুযোগ রাখা উচিত।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন মনে করেন, “কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করা দরকার। তবে এটি করতে হবে সব পক্ষের মতামত নিয়ে। হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।”

 

About Author
Chanchal Sen

চঞ্চল সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। তিনি একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি পলিটিক্স নিয়ে লেখালিখিতে পারদর্শী। চঞ্চলের লেখায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গভীর বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর সঠিক উপস্থাপন পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ এবং মতামতমূলক লেখা বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্লেষণধর্মিতার কারণে পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। চঞ্চল সেনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর গবেষণা তাকে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার জগতে একটি স্বতন্ত্র স্থান প্রদান করেছে। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।