“সার্জিক্যাল স্ট্রাইক: ভারতের পদক্ষেপে বাংলাদেশের সমর্থন”

Bangladesh India surgical strike impact: ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পরিচালনা করে। এই অভিযানের পর বাংলাদেশ সরকার ভারতের পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা…

Chanchal Sen

 

Bangladesh India surgical strike impact: ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পরিচালনা করে। এই অভিযানের পর বাংলাদেশ সরকার ভারতের পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল চৌধুরী বলেন, “ভারতের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের উপর যেকোনো আক্রমণের জবাব দেওয়ার আইনগত ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকার রয়েছে।”

ভারতের এই সামরিক অভিযান ১৮ সেপ্টেম্বর উরি সেনা ছাউনিতে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিচালিত হয়। সেই হামলায় ১৯ জন ভারতীয় সৈনিক নিহত হয়েছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং জানান, তাদের কাছে “খুবই বিশ্বাসযোগ্য ও নির্দিষ্ট তথ্য” ছিল যে সন্ত্রাসীরা জম্মু ও কাশ্মীর এবং অন্যান্য রাজ্যের বড় শহরগুলোতে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

Ajit Doval: আইপিএস থেকে ভারতের প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ভারতীয় সেনাবাহিনী এই অভিযানকে “সার্জিক্যাল স্ট্রাইক” হিসেবে অভিহিত করেছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হলো একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান, যার উদ্দেশ্য হলো আশপাশের এলাকায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি না করে শুধুমাত্র টার্গেটকে আঘাত করা। প্রাক্তন ভারতীয় বিমান বাহিনী প্রধান ফালি হোমি মেজর এই অভিযানকে “সুপরিকল্পিত ও সফল” বলে অভিহিত করেছেন।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, উরি হামলার পর সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল এবং তিনি সেনাবাহিনীকে “মুক্ত হাত” দিয়েছিলেন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য। তিনি সৈন্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন সফলতা বা ব্যর্থতার কথা না ভেবে “সূর্যোদয়ের আগে” ফিরে আসতে।

বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ইকবাল চৌধুরী বলেন, “কাশ্মীর ইস্যুটি একটি দ্বিপাক্ষিক বিরোধ এবং অন্য পক্ষ থেকে লঙ্ঘন হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “বাংলাদেশ সবসময় মনে করে যে কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার উপর আগ্রাসন বা আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয় এবং যেকোনো দেশের উচিত তৃতীয় কোনো দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা ও মর্যাদা দেওয়া।”চৌধুরী আরও উল্লেখ করেন যে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়া হবে না এবং ভারতের বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণ বা কার্যকলাপ পরিকল্পনা করতে দেওয়া হবে না। তিনি এ ব্যাপারে “শূন্য সহনশীলতার” নীতি গ্রহণ করেছেন।
তবে চৌধুরী শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীত্বের স্বার্থে সকল পক্ষের কাছ থেকে “সংযম” আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সবসময় মনে করে যে এই ধরনের ঘটনায় সব পক্ষের থেকে সংযম প্রয়োজন, কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে সার্ক দেশগুলোতে আমাদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করা প্রয়োজন, প্রতিটি সদস্য দেশের সার্বভৌম অধিকারকে সম্মান করে।”
ভারতের এই সামরিক অভিযান এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলেও, বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশের সমর্থন ভারতের জন্য কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা যেতে পারে।এই ঘটনা প্রমাণ করে যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে যে দেশটি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।তবে এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে তা সমগ্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তাই সকল পক্ষের কাছ থেকে সংযম ও কূটনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নেওয়া জরুরি।ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন জানিয়েছেন যে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে কোনো “নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে গুলি বিনিময়” প্রত্যক্ষ করেনি। তবে ভারতের জাতিসংঘ দূত স্যেদ আকবরুদ্দিন এই বক্তব্য খারিজ করে বলেন, “কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, মাটিতে বাস্তবতা পরিবর্তিত হয় না।”এই ঘটনা প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সামরিক কার্যক্রম এবং কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া কতটা জটিল ও সংবেদনশীল হতে পারে। বাংলাদেশের মতো দেশের সমর্থন ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এটি পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবতা নাকি অলীক কল্পনা?

সামগ্রিকভাবে, এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতির জটিলতা তুলে ধরে। এটি প্রমাণ করে যে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে সকল দেশের মধ্যে সংলাপ, সহযোগিতা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এই ধরনের উত্তেজনা এড়াতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
About Author
Chanchal Sen

চঞ্চল সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। তিনি একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি পলিটিক্স নিয়ে লেখালিখিতে পারদর্শী। চঞ্চলের লেখায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গভীর বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর সঠিক উপস্থাপন পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ এবং মতামতমূলক লেখা বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্লেষণধর্মিতার কারণে পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। চঞ্চল সেনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর গবেষণা তাকে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার জগতে একটি স্বতন্ত্র স্থান প্রদান করেছে। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।