ঢাকার কাচুখেত এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় একটি সেনাবাহিনীর গাড়ি এবং একটি পুলিশের ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এই ঘটনা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। হাজার হাজার কারখানা শ্রমিক, প্রধানত পোশাক শিল্পে, বিভিন্ন ধরনের বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তাদের প্রধান দাবি হল বেতন বৃদ্ধি। এছাড়াও ঔষধ শিল্পের কর্মীরাও অনুরূপ বিক্ষোভ করেছেন।
২৪ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার এবং শ্রমিকদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া সত্ত্বেও, বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। আদমজীনগর, আশুলিয়া, ধামরাই, গাজীপুর এবং সাভার সহ প্রধান শিল্প এলাকাগুলিতে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ চলছে।
দার্জিলিংয়ে চা শ্রমিকদের বোনাস দাবিতে বন্ধ: মুখ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি
এই অশান্তির প্রতিক্রিয়ায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, সাভার উপজেলার আশুলিয়া এলাকায় ৬৫টি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
আগামী দিনগুলিতে ধর্মঘট এবং রাস্তা অবরোধ সহ বিভিন্ন ধরনের সমাবেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাব্য বিক্ষোভের স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে কারখানা, সরকারি ভবন, খেলার মাঠ, জনসভার স্থান এবং প্রধান সড়কগুলি। এই বিক্ষোভগুলিতে শত শত থেকে হাজার হাজার অংশগ্রহণকারী যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বিক্ষোভগুলি পর্যবেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করার সম্ভাবনা রয়েছে। পুলিশ অশান্ত জনতা ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে পারে। কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী জনসমাবেশ নিষেধাজ্ঞার মতো বর্ধিত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বাস্তবায়ন করতে পারে। শ্রমিক এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ সহ বিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা ঘটনা ঘটতে পারে। পরিবহন ও ব্যবসায়িক বিঘ্ন, শিপিং বিলম্ব সহ সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলি সম্ভাব্য।
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরেও শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ২২ অক্টোবর থেকে কার্গো পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করেছেন, যা শিপিংয়ে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এই ধর্মঘটের কারণে বন্দর এবং সকল ২০টি অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোর মধ্যে কার্গো চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
ছাত্রদের হুঙ্কারে কেঁপে উঠল রাজপথ: কোটা আন্দোলনের অজানা কাহিনী!
শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে পরিচয়পত্র প্রদান। ধর্মঘট ২৩ অক্টোবর সকাল ৬টা পর্যন্ত চলার কথা ছিল, কিন্তু যদি শ্রমিকরা ধর্মঘট দীর্ঘায়িত করে, তাহলে ব্যাপক শিপিং বিলম্ব হতে পারে যা আগামী দিনগুলিতে সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
বন্দরের অফিসগুলির বাইরে ধর্মঘট সমর্থকরা বিক্ষোভ করতে পারে। যদিও অসম্ভব, পুলিশ জোরপূর্বক সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করলে সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, নিরাপত্তা বিধান হিসেবে সকল প্রকার বিক্ষোভ এড়িয়ে চলা উচিত। যেকোনো নিরাপত্তা বিঘ্নের প্রথম লক্ষণেই এলাকা ত্যাগ করা উচিত। সম্ভাব্য ব্যবসায়িক ও পরিবহন বিঘ্নের জন্য পরিকল্পনা করা উচিত; সময়-সংবেদনশীল অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা শিপমেন্টের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা বিবেচনা করা উচিত। সব সময় আপনার কূটনৈতিক মিশনের সাথে যোগাযোগ রাখা উচিত। সকল সরকারি পরিবহন ও নিরাপত্তা পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এই শিল্পে প্রায় ৪০ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত, যাদের মধ্যে ৮০% নারী। গত বছর এই খাত থেকে ৪২.৬১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫%।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, শ্রমিকদের দাবি ও অধিকার নিয়ে সরকার, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক নেতাদের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা জরুরি। একই সাথে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে দাবি আদায়ের জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানানো উচিত। সহিংসতা এড়ানো এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পোশাক শিল্পের উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা, কর্মস্থলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখার জন্য উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করা প্রয়োজন।
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ একটি জটিল সমস্যা। এর সমাধান না হলে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই সকল পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই সমস্যার দ্রুত ও টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি।
মন্তব্য করুন