বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে আধার কার্ড বানানোর ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। এই প্রবণতা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশী নাগরিকদের আধার কার্ড বানানোর প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। গত বছর শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে ৫০০০ এরও বেশি জাল আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশী নাগরিকদের বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আধার কার্ড আপডেট না করলে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা, জেনে নিন কী করতে হবে
আধার কার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় অনুপ্রবেশকারীরা এর সুযোগ নিচ্ছে। তারা স্থানীয় দালালদের সাহায্যে জাল ঠিকানা ও পরিচয়পত্র জোগাড় করে আধার কার্ডের জন্য আবেদন করছে। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তারা আধার কার্ড পেয়ে যাচ্ছে।
আধার কার্ড পাওয়ার পর এসব অনুপ্রবেশকারী সহজেই ভারতীয় নাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারছে। এর ফলে তারা সরকারি সুবিধা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল সিম কার্ড সহ নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তারা ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতেও সক্ষম হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আধার কার্ড বানানোর প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।
বর্তমানে ভারতে প্রায় ২ কোটি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। এদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে আধার কার্ড পেয়ে গেছে। এটি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
অনুপ্রবেশ রোধে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সীমান্তে বেড়া নির্মাণ, নজরদারি বৃদ্ধি, বর্ডার গার্ড সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত পদক্ষেপ। সীমান্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি আধার কার্ড বানানোর প্রক্রিয়ায় আরও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
আধার কার্ড বানানোর ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া আবেদনকারীর পূর্বপুরুষদের তথ্য যাচাই করা প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আবেদনকারীর পরিচয় যাচাই করা যেতে পারে।
অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা নেওয়া প্রয়োজন। দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি করা যেতে পারে যাতে অনুপ্রবেশকারীদের সহজে ফেরত পাঠানো যায়।
আপনার আধার কার্ডের ছবি পরিবর্তন করতে চান? জানুন বিস্তারিত প্রক্রিয়া
সীমান্তবর্তী এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো প্রয়োজন। এতে করে অর্থনৈতিক কারণে অনুপ্রবেশের প্রবণতা কমবে। এছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে যাতে তারা অনুপ্রবেশকারীদের সহযোগিতা না করে।
সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা অনুপ্রবেশকারীদের সহযোগিতা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া দালাল চক্রের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুপ্রবেশ রোধে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এতে সীমান্ত নিরাপত্তা, আধার কার্ড বিতরণ, অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণ ও প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টিও এতে থাকা উচিত।
বর্তমানে ভারতে প্রায় ১৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এই পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশকারীদের কারণে দেশের সম্পদের ওপর আরও চাপ পড়ছে। তাই অনুপ্রবেশ রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
অনুপ্রবেশ রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি। সরকারকে এ ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোকেও সহযোগিতা করতে হবে। জাতীয় স্বার্থে সকল দলের ঐক্যমত্য প্রয়োজন।
গণমাধ্যমকেও এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। অনুপ্রবেশের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি সরকারের ব্যর্থতাগুলোও প্রকাশ করতে হবে যাতে প্রশাসন চাপের মুখে পড়ে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। অনুপ্রবেশের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। পাশাপাশি মিথ্যা তথ্য ও গুজব প্রতিরোধেও সতর্ক থাকতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, অনুপ্রবেশ রোধে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। শুধুমাত্র সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সরকার, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম ও সাধারণ নাগরিক – সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তবেই এই জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।