Bangladeshi Vlogger Illegal Entry Video India: একজন বাংলাদেশি ইউটিউবার সম্প্রতি একটি ভিডিওতে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের পদ্ধতি দেখিয়েছেন, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে এবং ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। “DH Travelling Info” নামক চ্যানেলের এই ভিডিওতে ভ্লগার বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের বিভিন্ন পথ এবং কৌশল দেখিয়েছেন, যা নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।
ভিডিওর বিস্তারিত বিবরণ
ভিডিওতে দেখা যায়, ভ্লগার সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্ত এলাকায় দাঁড়িয়ে আছেন, যা বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের একটি প্রধান পথ। তিনি একটি রাস্তা দেখান যা সরাসরি ভারতে যায় এবং সতর্ক করেন যে এই পথে যাওয়া মানে বিএসএফ অফিসারদের হাতে পড়া।
ভ্লগার আরও দেখান কিভাবে কিছু সুড়ঙ্গের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করা যায়। তিনি ভারতীয় বিএসএফ ক্যাম্পও দেখান। ভিডিওর শেষে তিনি দর্শকদের সতর্ক করেন যে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করা উচিত নয় এবং এটি বাংলাদেশের নাম নষ্ট করে।
Aadhar Verification: ভুল হওয়ার আগে দ্রুত কাজটি করে ফেলুন, না হলে বিপদে পড়বেন
প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
এই ভিডিও ইন্টারনেটে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা হলে এটি ২ লক্ষেরও বেশি ভিউ পেয়েছে এবং ৭,০০০ এরও বেশি লাইক পেয়েছে। অনেক ব্যবহারকারী সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
একজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “বিএসএফ কি এ ব্যাপারে ঘুমিয়ে আছে? যদি একজন ইউটিউবার এই পথ জানে, তাহলে সবাই জানে। তাহলে বিএসএফ সীমান্তে এতদিন কী করছে?”
অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “হ্যাঁ, তাদের ভিসা বা পাসপোর্টের প্রয়োজন নেই। একবার সুড়ঙ্গ পার হলে, প্যান কার্ড এবং আধার কার্ড বিক্রি হয়। আসুন, সংগ্রহ করুন এবং আপনার ভোটের কর্তব্য পালন করুন।”
অবৈধ অনুপ্রবেশের পরিসংখ্যান
ভারতের প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী অজয় ভাট্ট সম্প্রতি সংসদে জানিয়েছেন যে ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৪৪১টি অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭৪০ জন অনুপ্রবেশকারীকে আটক করা হয়েছিল এবং একজন নিহত হয়েছিলেন।
গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা উঠানামা করেছে:
– ২০১৬: ১,৬০১ জন
– ২০১৭: ৯০৭ জন
– ২০১৮: ৮৮৪ জন
– ২০১৯: ১,১০৯ জন
– ২০২০: ৯৫৫ জন[5]
এই পাঁচ বছরে সর্বাধিক অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে, তারপর ত্রিপুরায়। মিজোরামে কোনো অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি।
শহরতলীর আগুন: কলকাতার বুকে জ্বলছে অদৃশ্য দাবানল!
সীমান্ত নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৪,০৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১,১১৬ কিলোমিটার নদী সীমান্ত। বাংলাদেশকে পাঁচটি ভারতীয় রাজ্য – পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা – তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে।
সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর (বিএসএফ) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় অনেক ফাঁক রয়েছে যা অনুপ্রবেশ এবং সীমান্তপার অপরাধ যেমন গরু পাচার এবং মাদক ও মানব পাচারকে সহজ করে তোলে।
সীমান্তের অনেক অংশে এখনও বেড়া দেওয়া হয়নি। বিএসএফের প্রাক্তন অতিরিক্ত মহাপরিচালক পি.কে. মিশ্র বলেছেন, “সীমান্তের কাছে অনেক গ্রাম রয়েছে যেখানে ‘নো-ম্যানস-ল্যান্ড’ চিহ্নিত করা সম্ভব নয়, তাই সম্পূর্ণভাবে সীমান্ত সিল করা অসম্ভব।”
অর্থনৈতিক তুলনা
বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্প্রতি ভারতের চেয়ে ভালো করছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশের অনুমানিত প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮%, যেখানে ভারতের ছিল ৫.৩%। এর ফলে বাংলাদেশ তার ‘স্বল্পোন্নত দেশ’ ট্যাগ ছাড়িয়ে এসেছে।
তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু উদ্বেগজনক লক্ষণও রয়েছে। ২০১৮ সালের মুদ্রাস্ফীতির তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের হার ছিল ৫.৮%, যেখানে ভারতের ছিল ৩.৪%।
সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি
বাংলাদেশ তার সামাজিক উন্নয়ন সূচকগুলিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মকালীন প্রত্যাশিত আয়ুতে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ভালো করছ।
– বাংলাদেশে একটি নবজাতক শিশু তার ভারতীয় বা পাকিস্তানি প্রতিপক্ষের তুলনায় পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
– ২০১৭ সালের হিসাবে বাংলাদেশে গড় আয়ু ৭২.৫ বছর, যেখানে ভারতে ৬৮.৬ বছর এবং পাকিস্তানে ৬৬.৫ বছর।
গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স ২০২০ অনুসারে, ভারত ১০৮তম স্থান থেকে ১১২তম স্থানে নেমে গেছে, যেখানে বাংলাদেশ ৫০তম স্থানে রয়েছে। সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ (২২%) ভারতের (১৩%) চেয়ে এগিয়ে আছে।
বাংলাদেশি ইউটিউবারের এই ভিডিও ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। যদিও ভ্লগার অবৈধ প্রবেশ উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে ভিডিওটি তৈরি করেননি, তবুও এটি সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকের পার্থক্য কমে আসা সত্ত্বেও, অবৈধ অনুপ্রবেশ এখনও একটি বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় উভয় দেশের সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
মন্তব্য করুন