রক্তে ইনফেকশন হলে এই খাবারগুলো খেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হবেন

Foods for blood infection recovery: রক্তে ইনফেকশন একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে। এই অবস্থায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উপযুক্ত খাবার আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। রক্তে ইনফেকশন বা সেপসিস হতে পারে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের কারণে, যা জ্বর, ক্লান্তি এবং প্রদাহের মতো লক্ষণ সৃষ্টি করে1। সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে আপনি দ্রুত সুস্থ হতে পারেন।

রক্তে ইনফেকশন কী এবং কেন হয়?

রক্তে ইনফেকশন বা সেপসিস হল একটি মারাত্মক সংক্রমণ যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি সাধারণত ফুসফুস, কিডনি, খাদ্যনালি বা অন্য যে কোনও অঙ্গের সংক্রমণ যখন রক্তে প্রবেশ করে, তখন সেপ্টিসেমিয়া বা রক্তে বিষক্রিয়া হয়8। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ঠান্ডা লাগা, জ্বর, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি এবং ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া8।

বছরে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হতে পারে সেপ্টিসেমিয়ার কারণে8। এমন পরিস্থিতিতে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস আপনার সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

রক্তে ইনফেকশন হলে যে খাবারগুলো খাবেন

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এই পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবারগুলো হল:

• আমলকি (গুজবেরি)
• লেবু
• কমলালেবু
• স্ট্রবেরি
• ব্রকলি2

সকালবেলা হালকা গরম জলে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খালি পেটে পান করলে শরীরে জমে থাকা বিভিন্ন দূষিত পদার্থ বা টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এতে চাইলে সামান্য মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন3।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ডি অপরিহার্য। নিচের খাবারগুলো নিয়মিত খাবার তালিকায় রাখুন:

• দুধ
• মাছ
• ডিম2

এছাড়াও সকালে কিছু সময় সূর্যালোকে থাকার চেষ্টা করুন, যাতে শরীরে ভিটামিন ডি উৎপাদন হতে পারে2।

প্রোবায়োটিক খাবার

প্রোবায়োটিক খাবার আপনার পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলি হল:

• দই
• ঘোল (মাঠা)
• কেফির
• কম্বুচা
• কিমচি
• আচার
• টেম্পেহ2

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে:

• সবুজ চা
• হলুদ
• ডার্ক চকোলেট
• ব্লুবেরি
• স্ট্রবেরি
• বিনস (শিম)
• বিট (বিটরুট)2

বিশেষ করে বিটরুট মূলত আপনার দেহে রক্ত সঞ্চালন ভালভাবে সম্পন্ন করতে এবং অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো3।

বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার

বিটা-ক্যারোটিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আপনার ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে:

• গাজর
• পালংশাক
• কেল
• ক্যান্টালুপ
• এপ্রিকট
• মিষ্টি আলু
• কুমড়ো
• শাকসবজি2

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে:

• অ্যাভোকাডো
• পালংশাক
• বাদাম
• বীজ
• সবুজ শাকসবজি2

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার

রক্তে আয়রনের পর্যাপ্ত মাত্রা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে রক্তে সংক্রমণ থাকলে:

• মাছ (বিশেষত সামুদ্রিক মাছ)4
• শিং মাছ, টেংরা মাছ4
• মসুর ডাল, মুগ ডাল, মাসকলাই ডাল4
• টমেটো4
• চীনাবাদাম4
• ডিম (বিশেষ করে কুসুম)4

বিশেষ সুপারফুড

কিছু বিশেষ খাবার রয়েছে যা রক্তে সংক্রমণের সময় বিশেষভাবে উপকারী:

• রসুন – এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে1
• হলুদ – এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে1
• আদা – এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে1
• ডালিম – রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে9

বিশেষ করে ডালিম এবং বিটরুট রক্তে ইনফেকশনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে সুপারিশ করা হয়5।

রক্তে ইনফেকশন হলে যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন

রক্তে ইনফেকশন হলে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত:

কাঁচা খাবার

• কাঁচা ফল ও সবজি – এগুলি সব সময় রান্না করে বা স্টিম করে খাওয়া উচিত2
• কাঁচা মাংস – সবসময় ভালোভাবে রান্না করা মাংস খাবেন2
• অপাস্তুরিকৃত দুধজাত খাবার2
• কাঁচা বা অপাস্তুরিকৃত ডিম2
• কাঁচা সামুদ্রিক খাবার যেমন মাছ2

সাদা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার

• মাখন – এতে চর্বি ও সোডিয়াম বেশি থাকে8
• অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত দুধ8
• চিনি – শরীরের জন্য বিষ, প্রচুর শর্করা থাকে8
• ময়দা – রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়8
• অতিরিক্ত নুন – রক্তচাপ বাড়ায়, বিশেষ করে কাঁচা নুন খাবেন না8

গরম পানীয়

• কফি
• চা
• গরম চকোলেট2

একটি আদর্শ খাদ্য পরিকল্পনা

রক্তে ইনফেকশন হলে আপনি একটি সুষম খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করতে পারেন:

সকালের নাশতা:

• হালকা গরম লেবু ও মধুযুক্ত পানি
• দই ও তাজা ফল
• ডিমের অমলেট সবজি দিয়ে

দুপুরের খাবার:

• রান্না করা মাছ
• সিদ্ধ সবজি
• মসুর ডাল
• রান্না করা বিটরুট

বিকেলের নাশতা:

• হাতে তৈরি ডালিমের জুস
• বাদাম ও বীজ

রাতের খাবার:

• সুপ (রসুন ও আদাযুক্ত)
• রান্না করা সবজি
• ভাত বা রুটি

সতর্কতা ও বিশেষ নির্দেশনা

রক্তে ইনফেকশন একটি গুরুতর সমস্যা এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যদি কোনো ব্যক্তি রক্তে ইনফেকশন সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে কোনো কিছু খাওয়ার আগে তাদের চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত2। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাদ্যাভ্যাসে কোনো পরিবর্তন করা উচিত নয়2।

সেপসিস বা রক্তে বিষক্রিয়া হলে তার দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। ঠান্ডা লাগলে, জ্বর থাকলে, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন বাড়লে, ত্বক হলুদ হয়ে গেলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন8।

রক্তে ইনফেকশন একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা সঠিক চিকিৎসা এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। উপরে উল্লিখিত খাবারগুলি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার, প্রোবায়োটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন।

তবে মনে রাখবেন, খাবারের পরিবর্তন চিকিৎসার পরিপূরক হিসেবে কাজ করে, এটি চিকিৎসার বিকল্প নয়। কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। রক্তে ইনফেকশন নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা না করে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।