Beklo 10 এর কাজ কি ব্যবহার, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ডোজ এবং সতর্কতা | সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

Beklo 10 Uses Side Effects: বেকলো ১০ (Beklo 10) হলো একটি বহুল ব্যবহৃত প্রেসক্রিপশন ড্রাগ, যার মূল উপাদান ব্যাকলোফেন (Baclofen)। এটি প্রধানত একটি পেশী শিথিলকারী (muscle relaxant) বা অ্যান্টিস্পাসমোডিক (antispasmodic)…

Debolina Roy

 

Beklo 10 Uses Side Effects: বেকলো ১০ (Beklo 10) হলো একটি বহুল ব্যবহৃত প্রেসক্রিপশন ড্রাগ, যার মূল উপাদান ব্যাকলোফেন (Baclofen)। এটি প্রধানত একটি পেশী শিথিলকারী (muscle relaxant) বা অ্যান্টিস্পাসমোডিক (antispasmodic) ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এই ঔষধটি মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ড বা মেরুরজ্জুতে কাজ করে পেশীর অস্বাভাবিক টান, খিঁচুনি এবং আড়ষ্টতা কমাতে সাহায্য করে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় স্প্যাস্টিসিটি (Spasticity) নামে পরিচিত। বিভিন্ন স্নায়বিক রোগ যেমন মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis), মেরুদণ্ডের আঘাত (Spinal Cord Injury), সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) এবং অন্যান্য কিছু রোগের কারণে সৃষ্ট কষ্টদায়ক স্প্যাস্টিসিটি নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকরা প্রায়শই বেকলো ১০ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন (National Library of Medicine) দ্বারা পরিচালিত MedlinePlus এর তথ্য অনুসারে, ব্যাকলোফেন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে দমন করে কাজ করে, যা পেশীগুলোকে শিথিল হতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

এই আর্টিকেলটিতে আমরা বেকলো ১০ এর কার্যপ্রণালী, এর প্রধান ও অপ্রধান ব্যবহার, সঠিক ডোজ, সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, সতর্কতা এবং অন্যান্য ঔষধের সাথে এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করব। আমাদের লক্ষ্য হলো এই ঔষধটি সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য চিত্র তুলে ধরা, যা আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ সঠিকভাবে বুঝতে এবং অনুসরণ করতে সাহায্য করবে।

বেকলো ১০ (ব্যাকলোফেন) আসলে কী এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

বেকলো ১০ হলো একটি ব্র্যান্ডের নাম, যার জেনেরিক বা রাসায়নিক নাম হলো ব্যাকলোফেন (Baclofen)। প্রতিটি ট্যাবলেটে ১০ মিলিগ্রাম ব্যাকলোফেন থাকে। এটি মূলত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (Central Nervous System – CNS) উপর প্রভাব ফেলে কাজ করে।

কার্যপ্রণালী: মস্তিষ্কের গভীরে এর প্রভাব

আমাদের শরীরে পেশী সংকোচন এবং প্রসারণের জন্য মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ড থেকে ক্রমাগত সংকেত আসতে থাকে। কিছু স্নায়বিক রোগে এই সংকেতগুলো অতিরিক্ত এবং অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে, যার ফলে পেশীগুলো ক্রমাগত সংকুচিত বা টানটান অবস্থায় থাকে। এই অবস্থাকেই স্প্যাস্টিসিটি বলা হয়।

বেকলো ১০ এর মূল উপাদান ব্যাকলোফেন, গামা-অ্যামিনোবিউটিরিক অ্যাসিড (Gamma-Aminobutyric Acid বা GABA) নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটারের মতো কাজ করে। GABA হলো আমাদের শরীরের প্রধান “নিরোধক” (inhibitory) নিউরোট্রান্সমিটার, যার কাজ হলো স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপকে শান্ত বা ধীর করা। ব্যাকলোফেন নির্দিষ্ট GABA-B রিসেপ্টরকে সক্রিয় করে, যা স্পাইনাল কর্ডের মধ্যে থাকা স্নায়ু কোষ থেকে আসা উত্তেজক সংকেতগুলোকে বাধা দেয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এটি পেশীগুলোকে অতিরিক্ত সংকুচিত হওয়ার জন্য যে সংকেত পাঠানো হচ্ছিল, সেই সংকেতগুলোকে ব্লক করে দেয়। ফলস্বরূপ, পেশী শিথিল হয়, খিঁচুনি কমে এবং স্প্যাস্টিসিটির সাথে সম্পর্কিত ব্যথা ও অস্বস্তি থেকে রোগী মুক্তি পায়।

বেকলো ১০ এর প্রধান ব্যবহারসমূহ

বেকলো ১০ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। এর প্রধান ব্যবহারগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis – MS) জনিত স্প্যাস্টিসিটি

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস একটি অটোইমিউন রোগ যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের স্নায়ুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে স্প্যাস্টিসিটি একটি সাধারণ এবং কষ্টদায়ক উপসর্গ। পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত খিঁচুনি এবং ব্যথার কারণে তাদের হাঁটাচলা, দৈনন্দিন কাজ এবং ঘুমের সমস্যা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, বিশ্বে প্রায় ১৮ লক্ষেরও বেশি মানুষ মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত, এবং তাদের একটি বড় অংশ স্প্যাস্টিসিটির শিকার। বেকলো ১০ এই রোগীদের পেশীর টান কমিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি পেশীকে শিথিল করে গতিশীলতা বাড়াতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

মেরুদণ্ডের আঘাত বা রোগ (Spinal Cord Injury or Disease)

যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা, পতন বা রোগের কারণে মেরুদণ্ডে আঘাত লাগলে স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই আঘাতের ফলে মস্তিষ্ক থেকে শরীরে সংকেত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়, যা থেকে তীব্র স্প্যাস্টিসিটি তৈরি হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ২,৫০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ মানুষ মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হন (WHO Spinal Cord Injury Fact Sheet)। বেকলো ১০ এই ধরনের রোগীদের অনৈচ্ছিক পেশী সংকোচন এবং খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ করে পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে সহজতর করে এবং তাদের সামগ্রিক স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ায়।

অন্যান্য স্নায়বিক রোগ (Other Neurological Conditions)

বেকলো ১০ অন্যান্য কিছু স্নায়বিক রোগের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন:

  • সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy): বিশেষত শিশুদের মধ্যে পেশীর অস্বাভাবিক টান এবং নড়াচড়ার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে এটি ব্যবহার করা হয়।
  • অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (ALS): এই প্রগতিশীল স্নায়বিক রোগে পেশীর দুর্বলতা এবং স্প্যাস্টিসিটি দেখা যায়, যা নিয়ন্ত্রণে ব্যাকলোফেন সহায়ক হতে পারে।
  • ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি (Traumatic Brain Injury): মস্তিষ্কে আঘাতের ফলেও স্প্যাস্টিসিটি দেখা দিতে পারে, এবং বেকলো ১০ এক্ষেত্রেও একটি কার্যকরী চিকিৎসা।

বেকলো ১০ এর অফ-লেবেল ব্যবহার (Off-Label Uses)

“অফ-লেবেল” ব্যবহার বলতে বোঝায় যখন কোনো ঔষধকে সেইসব রোগের জন্য ব্যবহার করা হয়, যার জন্য সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) বা স্থানীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বারা অনুমোদিত নয়। তবে চিকিৎসকরা তাদের অভিজ্ঞতা এবং ক্লিনিকাল গবেষণার ভিত্তিতে কিছু ক্ষেত্রে বেকলো ১০ অফ-লেবেল হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।

  • অ্যালকোহল ইউজ ডিসঅর্ডার (Alcohol Use Disorder – AUD): কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যাকলোফেন অ্যালকোহলের প্রতি আসক্তি এবং क्रेভিং কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমকে প্রভাবিত করে অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। তবে এই ব্যবহারটি এখনও বিতর্কিত এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে, যেমনটি PubMed Central এ প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
  • ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া (Trigeminal Neuralgia): এটি মুখের একপাশে তীব্র ব্যথার একটি রোগ। ব্যাকলোফেনকে প্রায়শই কার্বামাজেপিনের মতো প্রথম সারির ঔষধের সাথে বা বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  • দীর্ঘস্থায়ী হেঁচকি (Persistent Hiccups): যে হেঁচকি ৪৮ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়, তাকে ইন্ট্র্যাক্টেবল বা দীর্ঘস্থায়ী হেঁচকি বলা হয়। এই ধরনের জটিল ক্ষেত্রে ব্যাকলোফেন হেঁচকি সৃষ্টিকারী স্নায়বিক সংকেতকে বাধা দিয়ে উপশম দিতে পারে।

ডোজ এবং সঠিক ব্যবহারবিধি

বেকলো ১০ এর ডোজ রোগীর অবস্থা, বয়স এবং ঔষধের প্রতি তার প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। এটি একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ এবং কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া বা ডোজ পরিবর্তন করা উচিত নয়।

সাধারণত, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানোর জন্য খুব কম ডোজ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয় এবং ধীরে ধীরে ডোজ বাড়ানো হয়।

অবস্থা সাধারণ প্রারম্ভিক ডোজ সর্বোচ্চ প্রস্তাবিত দৈনিক ডোজ গুরুত্বপূর্ণ নোট
প্রাপ্তবয়স্কদের স্প্যাস্টিসিটি দিনে ৩ বার ৫ মিলিগ্রাম (প্রতি ৮ ঘণ্টা) দিনে ৮০ মিলিগ্রাম (কখনো কখনো চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আরও বেশি) প্রতি ৩ দিন অন্তর ডোজ ধীরে ধীরে বাড়ানো যেতে পারে।
অ্যালকোহল উইথড্রয়াল (অফ-লেবেল) চিকিৎসকের দ্বারা নির্ধারিত হয়। পরিবর্তনশীল কঠোরভাবে মেডিকেল তত্ত্বাবধানে থাকা প্রয়োজন।

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:

  • ঔষধ হঠাৎ বন্ধ করবেন না: হঠাৎ করে বেকলো ১০ খাওয়া বন্ধ করলে মারাত্মক উইথড্রয়াল সিন্ড্রোম দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে হ্যালুসিনেশন, বিভ্রান্তি, খিঁচুনি, জ্বর এবং স্প্যাস্টিসিটি আরও বেড়ে যাওয়া। ঔষধ বন্ধ করার প্রয়োজন হলে চিকিৎসক ধীরে ধীরে ডোজ কমিয়ে আনবেন।
  • খাবার সময়: এটি খাবারের সাথে বা খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে। তবে পেটের সমস্যা এড়াতে খাবারের সাথে খাওয়াই শ্রেয়।

বেকলো ১০ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সতর্কতা

যেকোনো ঔষধের মতোই বেকলো ১০ এরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলি হালকা থেকে মাঝারি ধরনের হয় এবং শরীর ঔষধের সাথে মানিয়ে নিলে কমে যায়।

সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Common Side Effects)

এগুলি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং সাধারণত গুরুতর হয় না:

  • তন্দ্রা বা ঝিমুনি (Drowsiness)
  • মাথা ঘোরা (Dizziness)
  • শারীরিক দুর্বলতা (Weakness)
  • ক্লান্তি (Fatigue)
  • মাথাব্যথা (Headache)
  • বমি বমি ভাব (Nausea)
  • ঘুমের সমস্যা (Insomnia)
  • কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation)

গুরুতর কিন্তু বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Serious but Rare Side Effects)

এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে:

  • তীব্র মানসিক বিভ্রান্তি বা হ্যালুসিনেশন (Seeing or hearing things that are not there)
  • শ্বাসকষ্ট বা ধীর শ্বাস-প্রশ্বাস (Difficulty breathing)
  • খিঁচুনি (Seizures)
  • মনোভাবের আকস্মিক পরিবর্তন (Mood swings, depression)
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (Fainting)
  • পেশীর তীব্র ব্যথা
  • প্রস্রাব করতে অসুবিধা

কাদের বেকলো ১০ ব্যবহারে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত?

  • কিডনি রোগী: ব্যাকলোফেন মূলত কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়। তাই যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে কম ডোজ প্রয়োজন হতে পারে।
  • বয়স্ক রোগী: বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রায়শই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রতি বেশি সংবেদনশীল হন, বিশেষ করে তন্দ্রা এবং মাথা ঘোরার মতো সমস্যা।
  • মৃগীরোগী (Epilepsy): ব্যাকলোফেন খিঁচুনির ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই এই রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।
  • গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলা: গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যদানের সময় বেকলো ১০ ব্যবহারের আগে এর সুবিধা এবং ঝুঁকি নিয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করতে হবে। NHS UK এর মতে, শুধুমাত্র অপরিহার্য হলেই এটি ব্যবহার করা উচিত।

অন্যান্য ঔষধের সাথে বেকলো ১০ এর প্রতিক্রিয়া (Drug Interactions)

বেকলো ১০ অন্যান্য কিছু ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে, যা এর কার্যকারিতা কমাতে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাড়াতে পারে। তাই আপনি যদি অন্য কোনো ঔষধ গ্রহণ করেন, তবে তা অবশ্যই আপনার চিকিৎসককে জানান।

  • কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে এমন ঔষধ: ঘুমের ঔষধ (যেমন, ডায়াজেপাম), অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, ওপিঅয়েড ব্যথানাশক (যেমন, মরফিন, ট্রামাডল) এবং অ্যালকোহলের সাথে বেকলো ১০ গ্রহণ করলে তন্দ্রা, মাথা ঘোরা এবং শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।
  • উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ: ব্যাকলোফেন রক্তচাপ কমাতে পারে। তাই যারা ইতিমধ্যেই উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ নিচ্ছেন, তাদের রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • ডায়াবেটিসের ঔষধ: এটি রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত ব্লাড সুগার পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (Frequently Asked Questions – FAQ)

প্রশ্ন ১: বেকলো ১০ কি একটি ব্যথানাশক ঔষধ?

উত্তর: সরাসরি নয়। বেকলো ১০ একটি পেশী শিথিলকারী ঔষধ। তবে এটি স্প্যাস্টিসিটির কারণে সৃষ্ট পেশীর টান এবং খিঁচুনি কমায়, যার ফলে পরোক্ষভাবে ব্যথা উপশম হয়।

প্রশ্ন ২: বেকলো ১০ কি আসক্তি সৃষ্টি করে?

উত্তর: বেকলো ১০ ওপিঅয়েডের মতো প্রচলিত আসক্তি সৃষ্টিকারী ঔষধ নয়। তবে, শরীর এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। একারণেই হঠাৎ করে এটি বন্ধ করলে তীব্র উইথড্রয়াল উপসর্গ দেখা দেয়। এটি সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে বন্ধ করতে হয়।

প্রশ্ন ৩: বেকলো ১০ খাওয়ার পর কি গাড়ি চালানো বা ভারী মেশিন চালানো নিরাপদ?

উত্তর: না। এই ঔষধটি খেলে তন্দ্রা, ঝিমুনি এবং দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে, যা আপনার প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। তাই বেকলো ১০ খাওয়ার পর গাড়ি চালানো বা ভারী মেশিন চালানো থেকে বিরত থাকা উচিত, যতক্ষণ না আপনি নিশ্চিত হন যে এটি আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করছে।

প্রশ্ন ৪: আমি একটি ডোজ নিতে ভুলে গেলে কী করব?

উত্তর: যদি আপনার পরবর্তী ডোজের সময় কাছাকাছি না হয়, তবে মনে পড়ার সাথে সাথে ভুলে যাওয়া ডোজটি গ্রহণ করুন। কিন্তু যদি পরবর্তী ডোজের সময় হয়ে যায়, তবে ভুলে যাওয়া ডোজটি এড়িয়ে যান এবং আপনার নিয়মিত সময়সূচী অনুসরণ করুন। কখনোই দুটি ডোজ একসাথে গ্রহণ করবেন না।

প্রশ্ন ৫: অ্যালকোহলের সাথে বেকলো ১০ খাওয়া যাবে কি?

উত্তর: একেবারেই না। অ্যালকোহল এবং বেকলো ১০ উভয়ই কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে দমন করে। একসাথে গ্রহণ করলে অতিরিক্ত তন্দ্রা, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট এবং এমনকি কোমায় চলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

বেকলো ১০ (ব্যাকলোফেন) স্প্যাস্টিসিটি নিয়ন্ত্রণে একটি অত্যন্ত কার্যকরী এবং বহুল ব্যবহৃত ঔষধ। এটি মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, মেরুদণ্ডের আঘাত এবং অন্যান্য স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের পেশীর খিঁচুনি, আড়ষ্টতা এবং ব্যথা কমিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এর কার্যকারিতার পাশাপাশি সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সতর্কতা সম্পর্কেও সচেতন থাকা জরুরি।

সর্বদা মনে রাখবেন, বেকলো ১০ একটি শক্তিশালী ঔষধ এবং এটি শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত। নিজের থেকে ডোজ পরিবর্তন করা বা ঔষধ বন্ধ করার চেষ্টা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে স্প্যাস্টিসিটির মতো জটিল অবস্থাও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।