Benefits and drawbacks of Kadbel: কদবেল বা বেল ফল বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর দেশীয় ফল। শক্ত খোলসের ভিতরে লুকিয়ে থাকা এই ফলের স্বাদ টক-মিষ্টি। কিন্তু এর পুষ্টিগুণ অসাধারণ। কদবেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।কদবেল খাওয়ার নানা উপকারিতা রয়েছে। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তবে অতিরিক্ত কদবেল খাওয়ার কিছু অপকারিতাও রয়েছে যা সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।কদবেলের পুষ্টিগুণকদবেল পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।
প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলে রয়েছে:
- ক্যালোরি: ১৩৭ কিলোক্যালোরি
- কার্বোহাইড্রেট: ৩১.৮ গ্রাম
- আঁশ: ২.৯ গ্রাম
- প্রোটিন: ১.৮ গ্রাম
- ভিটামিন সি: ৮ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ৮৫ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম: ৬০০ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম: ৪১ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস: ৫২ মিলিগ্রাম
এছাড়াও কদবেলে রয়েছে ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৩ ইত্যাদি। এসব পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।কদবেলের উপকারিতাকদবেল খাওয়ার নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে।
এর প্রধান উপকারিতাগুলো হল:
হজমশক্তি বাড়ায়:
কদবেলে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় এটি হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত কদবেল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকে। এতে থাকা ট্যানিন নামক উপাদান দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া ও পেট ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
কদবেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত কদবেল খেলে সর্দি-কাশি, ফ্লু ইত্যাদি রোগের প্রকোপ কমে।
আপেল খেলেই বিপদ বাড়বে এই ব্যক্তিদের, পাবেন না সুফল
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:
কদবেলে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত কদবেল খেলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:
কদবেলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কদবেল খাওয়া উপকারী।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
কদবেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ লবণ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত কদবেল খেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে।
ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে:
কদবেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। নিয়মিত কদবেল খেলে ত্বক উজ্জ্বল ও কমনীয় হয়।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়:
কদবেলে থাকা ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
কদবেলে ক্যালোরি কম কিন্তু আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমায়:
কদবেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত কদবেল খেলে মন প্রফুল্ল থাকে।
কদবেলের অপকারিতা
কদবেলের অনেক উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যেমন:
- অতিরিক্ত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে: কদবেলে প্রচুর আঁশ থাকায় অতিরিক্ত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে: ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত কদবেল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমে যেতে পারে।
- এলার্জি হতে পারে: কিছু মানুষের কদবেল খেয়ে এলার্জি হতে পারে। এক্ষেত্রে চুলকানি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
- পেটে গ্যাস হতে পারে: অতিরিক্ত কদবেল খেলে পেটে গ্যাস জমতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা:
গর্ভবতী মহিলাদের অতিরিক্ত কদবেল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
কাঁচা ছোলা খেয়ে মোটা হওয়ার রহস্য: জানুন এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
কদবেল খাওয়ার সঠিক পরিমাণ
কদবেলের উপকারিতা পেতে হলে সঠিক পরিমাণে খাওয়া উচিত। প্রতিদিন ১-২টি কদবেল খাওয়া যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো রোগে ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কদবেল খাওয়ার সেরা সময়
কদবেল যে কোনো সময় খাওয়া যায়। তবে সকালে খালি পেটে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া দুপুরের খাবারের পর কদবেল খেলে হজমে সাহায্য করে।
কদবেল সংরক্ষণের উপায়
কদবেল সংরক্ষণের জন্য ঠাণ্ডা ও শুষ্ক জায়গায় রাখতে হবে। ফ্রিজে রাখলে ৭-১০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। কদবেলের শাঁস বের করে ফ্রিজে রাখলে ১-২ মাস পর্যন্ত খাওয়া যায়।উপসংহারকদবেল একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর ফল। এর নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। তবে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। সুষম খাদ্যতালিকার অংশ হিসেবে নিয়মিত কদবেল খেলে শরীর সুস্থ ও নিরোগ থাকবে। তাই আজই থেকে আপনার খাদ্যতালিকায় কদবেল যুক্ত করুন এবং এর উপকারিতা উপভোগ করুন।