Effects of raisin water in the morning: খালি পেটে কিসমিস ভেজানো জল পান করা একটি অত্যন্ত উপকারী অভ্যাস যা আপনার স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রাচীন প্রথাটি আজকাল অনেকেই অনুসরণ করছেন কারণ এর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সামগ্রিক সুস্থতা বজায় থাকে। আসুন জেনে নেই কেন সকালে খালি পেটে কিসমিস ভেজানো জল পান করা উচিত এবং এর কী কী উপকারিতা রয়েছে।
কিসমিস ভেজানো জলের পুষ্টিগুণ
কিসমিস হল শুকনো আঙ্গুর যা পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যখন আপনি কিসমিস রাতভর পানিতে ভিজিয়ে রাখেন, তখন এর পুষ্টি উপাদানগুলি পানিতে মিশে যায়। ফলে আপনি যখন সকালে এই পানি পান করেন, তখন আপনার শরীর সহজেই এই পুষ্টি উপাদানগুলি শোষণ করতে পারে।কিসমিস ভেজানো জলে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদানগুলি থাকে:
- আয়রন
- পটাসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন বি৬
- ফাইবার
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
কিসমিস ভেজানো জলের উপকারিতা
১. হজম ক্রিয়া উন্নত করে
কিসমিস ভেজানো জল পান করলে হজম ক্রিয়া উন্নত হয়। এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত এই পানীয় পান করলে আপনি হজমজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
২. শরীরে শক্তি যোগায়
সকালে খালি পেটে কিসমিস ভেজানো জল পান করলে শরীরে প্রচুর শক্তি যোগায়। কিসমিসে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে যা শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয়। এটি আপনাকে সারাদিন সক্রিয় ও উদ্যমী রাখতে সাহায্য করে।
৩. রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়ায়
কিসমিস আয়রনের একটি ভালো উৎস। রাতভর ভেজানো কিসমিসের পানি পান করলে শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়ে। এটি রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে।
৪. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
কিসমিস ভেজানো জলে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই পানীয় পান করলে আপনি একটি সুস্থ হৃদয় পেতে পারেন।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য কিসমিস ভেজানো জল খুবই উপকারী। এতে থাকা ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে আপনি কম খাবার খেতে পারেন। এছাড়া এটি মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে যা ওজন কমাতে সহায়ক।
৬. ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে
কিসমিস ভেজানো জলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
৭. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে
কিসমিস ভেজানো জলে থাকা ভিটামিন সি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি আপনাকে রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।
৮. লিভার ডিটক্স করে
সকালে খালি পেটে কিসমিস ভেজানো জল পান করলে লিভার ডিটক্স হয়। এটি লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
৯. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
যদিও কিসমিসে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে, তবুও এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিসমিসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, ফলে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বাড়তে দেয় না।
১০. হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে
কিসমিস ভেজানো জলে থাকা ক্যালসিয়াম ও বোরন হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়ক এবং হাড়কে শক্তিশালী করে।
কিভাবে কিসমিস ভেজানো জল তৈরি করবেন
কিসমিস ভেজানো জল তৈরি করা খুবই সহজ। নিচের পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন:১. ১৫-২০টি কিসমিস নিন।
২. এগুলিকে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
৩. একটি গ্লাস পানিতে কিসমিসগুলি ডুবিয়ে রাখুন।
৪. রাতভর (কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা) এভাবে রেখে দিন।
৫. সকালে কিসমিসগুলি ছেঁকে নিয়ে পানিটা পান করুন।
৬. ইচ্ছা করলে ভেজানো কিসমিসগুলিও খেতে পারেন।
অতিরিক্ত ঠান্ডা জল খেলে হতে পারে মারাত্মক – বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন
সতর্কতা
যদিও কিসমিস ভেজানো জল অত্যন্ত উপকারী, তবুও কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত:
- ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এটি পান করা উচিত।
- অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে পেটে গ্যাস হতে পারে।
- কিসমিসে অ্যালার্জি থাকলে এড়িয়ে চলুন।
- দাঁতের যত্ন নিন, কারণ কিসমিসে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে।
সকালে খালি পেটে কিসমিস ভেজানো জল পান করা একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকরী স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এটি আপনার শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে মনে রাখবেন, কোনো একটি খাবার বা পানীয় সব স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান নয়। সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের সাথে এই অভ্যাসটি যুক্ত করলে আপনি সর্বোত্তম ফল পেতে পারেন। আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন।