বাংলার রেল ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। শিয়ালদা থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত চলবে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম এসি লোকাল ট্রেন। পূর্ব রেলের শিয়ালদা ডিভিশন এই পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে। এই ট্রেনের ভাড়া সাধারণ লোকাল ট্রেনের তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক যাত্রার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। সূত্রের খবর, এই পরিষেবা শীঘ্রই পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হতে পারে, এবং ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। এই উদ্যোগে লক্ষ্য হলো যাত্রীদের গরম ও ভিড়ের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেওয়া।
পশ্চিমবঙ্গে লোকাল ট্রেনে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন। বিশেষ করে শিয়ালদা ডিভিশনের রুটগুলোতে যাত্রীদের ভিড় থাকে অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে এসি লোকাল ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা অনেক দিন ধরেই আলোচনায় ছিল। অবশেষে, শিয়ালদা থেকে কৃষ্ণনগর রুটে এই পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ব রেল। জানা গেছে, এই ট্রেনটি চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি থেকে আনা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে একটি এসি রেক চালানো হবে। এর সফলতার ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে আরও রুটে এই পরিষেবা বাড়ানো হতে পারে। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ট্রেনে দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে এবং ভিতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ থাকবে, যা যাত্রীদের জন্য একটি বড় স্বস্তি হয়ে উঠবে।
এই উদ্যোগ নতুন নয়। ভারতের অন্যান্য শহরে, যেমন মুম্বই, ইতিমধ্যেই এসি লোকাল ট্রেন চলছে। মুম্বইয়ে প্রথম এসি লোকাল চালু হয় ২০১৭ সালে। সেখানে শুরুতে ভাড়া ছিল ৫০ টাকা, কিন্তু যাত্রীদের সাড়া না মেলায় পরে তা কমিয়ে ২৫ টাকা করা হয়। এরপর থেকে এই ট্রেনগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কলকাতার ক্ষেত্রেও একই ধরনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শিয়ালদা-কৃষ্ণনগর রুটটি প্রায় ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এটি দৈনিক যাতায়াতকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। এই রুটে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শিয়ালদা থেকে কৃষ্ণনগর ও তার আশেপাশের এলাকায় যাতায়াত করেন। তাই এই এসি ট্রেন চালু হলে যাত্রীদের মধ্যে এর চাহিদা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই ট্রেনে ভাড়া কেন বেশি হবে? সাধারণ লোকাল ট্রেনে এসি থাকে না, তাই ভাড়া কম। কিন্তু এসি লোকালে শীতল বাতাস আর আরামদায়ক আসন থাকবে, যার জন্য একটু বেশি টাকা দিতে হবে। তবে এই ভাড়া এত বেশি নয় যে সাধারণ মানুষের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না হবে। রেলের লক্ষ্য হলো, যারা একটু বেশি আরাম চান, তারা এই ট্রেন বেছে নিতে পারেন। এছাড়া, এই ট্রেনে ভিড় কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ সবাই এসি টিকিট কাটতে পারবেন না। ফলে যাত্রা আরও সহজ ও দ্রুত হবে।
শিয়ালদা থেকে কৃষ্ণনগর রুটে বাংলার প্রথম এসি লোকাল ট্রেন চালু হওয়া যাত্রীদের জন্য একটি বড় উপহার হতে চলেছে। এটি কেবল আরামই দেবে না, রেলের আয়ও বাড়াবে। তবে এই পরিষেবা কবে থেকে শুরু হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। রেল বোর্ডের অনুমোদনের পরই চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করা হবে। এই ট্রেন চালু হলে বাংলার লোকাল ট্রেনের যাত্রাপথে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে, এবং যাত্রীরা গরমের হাত থেকে মুক্তি পাবেন।
মন্তব্য করুন