সামনেই দুর্গাপুজো, আর তার ঠিক আগে রাজ্যের কোটি কোটি মহিলার জন্য বড় খবর। লক্ষ্মীর ভান্ডার (Lakshmir Bhandar) প্রকল্পের টাকা পাওয়ার দিনক্ষণে সামান্য পরিবর্তন আনা হল। সেপ্টেম্বর মাসের টাকা যা অক্টোবরের শুরুতে পাওয়ার কথা ছিল, তা নির্দিষ্ট দিনের বদলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে উপভোক্তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে বলে নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছে। সোমবার অর্থ দপ্তরের জারি করা এক সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা করা হয়েছে, যা নিয়ে উপভোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
রাজ্য সরকারের পূর্ববর্তী ঘোষণা অনুযায়ী, লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং জয় বাংলা-র মতো অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের টাকা উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখেই ঢুকে যায়। দুর্গাপুজো এবং উৎসবের মরসুমের কথা মাথায় রেখে প্রথমে জানানো হয়েছিল যে সেপ্টেম্বর মাসের টাকা আগামী ১লা অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার (DBT) করা হবে। কিন্তু ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ অর্থ দপ্তর একটি নতুন সংশোধনী বা ‘Corrigendum’ (Memo No. 3475-F(Y)) জারি করে সেই তারিখে সামান্য পরিবর্তন এনেছে। নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট একদিনের পরিবর্তে, অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ধাপে ধাপে এই টাকা দেওয়া হবে।
এই সিদ্ধান্ত বদলের কারণ হিসেবে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, পুজোর ছুটির কারণে ব্যাংকিং কাজকর্ম এবং সরকারি দপ্তরগুলির কার্যক্রমে কিছু রদবদল আনা হয়েছে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন যেখানে ২৪ এবং ২৫শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির বিপুল সংখ্যক উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে। তাই ১ অক্টোবরের পরিবর্তে সপ্তাহব্যাপী এই সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে যাতে মসৃণভাবে সমস্ত উপভোক্তার কাছে টাকা পৌঁছানো যায়।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (Key Facts)
- টাকা পাওয়ার নতুন সময়সীমা: অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে।
- পূর্ববর্তী তারিখ: প্রথমে ১লা অক্টোবর, ২০২৫ তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়েছিল।
- কারণ: দুর্গাপুজোর ছুটি এবং বিপুল সংখ্যক উপভোক্তার লেনদেন মসৃণভাবে সম্পন্ন করা।
- সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি নম্বর: Memo No. 3475-F(Y), তারিখ: ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫। (সূত্র: WBPAY.IN)
- প্রকল্পের উপভোক্তা: প্রায় ২ কোটির বেশি মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধা পান।
- সহায়তার পরিমাণ: সাধারণ মহিলারা মাসিক ১০০০ টাকা এবং তপশিলি জাতি ও উপজাতির মহিলারা মাসিক ১২০০ টাকা করে পান।
সরকারি পদক্ষেপ
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পটি রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী মহিলারা (সরকারি চাকরি বা পেনশনভোগী ব্যতীত) এই প্রকল্পের আওতায় আর্থিক সহায়তা পান। এর মূল উদ্দেশ্য হল মহিলাদের আর্থিক सशक्तीকরণ এবং তাদের হাতে সরাসরি নগদ পৌঁছে দেওয়া।
উৎসবের মরসুমে রাজ্যের মানুষ যাতে আর্থিক সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন এবং পেনশনভোগীদের পেনশন পুজোর আগেই মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপভোক্তাদের টাকাও যাতে পুজোর কেনাকাটা বা অন্যান্য খরচের জন্য সঠিক সময়ে ব্যবহার করা যায়, সেই লক্ষ্যেই এই সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান ও প্রকল্পের প্রভাব
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প শুরুর পর থেকে রাজ্যের অর্থনীতিতে, বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে, এর একটি ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।
- মোট উপভোক্তার সংখ্যা: রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২ কোটির বেশি মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। (সূত্র: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন সাংবাদিক সম্মেলন)
- वार्षिक বাজেট বরাদ্দ: ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, যা রাজ্যের সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ের একটি বড় অংশ। (সূত্র: পশ্চিমবঙ্গ বাজেট নথি)
- আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি: চলতি বছরেই রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়েছে। সাধারণ মহিলাদের জন্য মাসিক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা এবং তপশিলি জাতি ও উপজাতি মহিলাদের জন্য ১০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করা হয়েছে। (সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস)
এই বিপুল সংখ্যক উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পাঠানো একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ, যা মূলত ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT) পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
বিশেষজ্ঞ ও আধিকারিকদের বক্তব্য
নবান্নের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “পুজোর আগে বিপুল সংখ্যক লেনদেন থাকে। প্রযুক্তিগত কোনো সমস্যা যাতে না হয় এবং প্রত্যেকেই যাতে উৎসবের আগে টাকা পান, তা নিশ্চিত করতেই ১ অক্টোবরের পরিবর্তে প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে। এটি একটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ।”
অর্থনীতিবিদ ডঃ অভিরূপ সরকারের মতে, “লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পগুলি সরাসরি চাহিদা বৃদ্ধি করে, যা উৎসবের মরসুমে বাজারকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করে। এই টাকা সরাসরি প্রান্তিক মানুষের হাতে পৌঁছানোর ফলে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য লাভবান হয়।” (মতামত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে)
উপভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের বাসিন্দা আমিনা বিবি বলেন, “পুজোর আগে টাকাটা হাতে পেলে ছেলেমেয়ের জন্য নতুন জামাকাপড় কেনা যায়। প্রতি মাসেই আমরা এই টাকার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পেলেও কোনো অসুবিধা নেই, যতক্ষণ পাই।” (সূত্র: স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম)
এরপর কী?
উপভোক্তাদের এখন তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের দিকে নজর রাখতে হবে। অক্টোবর মাসের ১ তারিখ থেকেই টাকা ঢোকা শুরু হতে পারে এবং ৭ তারিখের মধ্যে সকলের অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। টাকা জমা না হলে, উপভোক্তারা স্থানীয় ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পে বা সংশ্লিষ্ট ব্লক অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
উপসংহার
সামান্য তারিখ বদল হলেও, রাজ্য সরকার যে উৎসবের মরসুমে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা সময়মতো পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর, তা এই বিজ্ঞপ্তি থেকে স্পষ্ট। এই আর্থিক সহায়তা রাজ্যের কোটি কোটি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে এবং উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে আশা করা যায়।