গত ৮ ই অক্টোবর হলে মুক্তি হয়েছে শাস্ত্রী। বর্তমানে সগৌরবে চলছে এই ছবি। এই ছবি নিয়েই আমরা কথা বলেছিলাম বাঘাযতীন খ্যাত জনপ্রিয় অভিনেতা কোলাজ সেনগুপ্তের সাথে। বাঘা যতীনের রাসবিহারী বসু থেকে এই ছবিতে অভিনেতা আমাদের ধরা দেবেন মিন্টু চরিত্রে। ঐতিহাসিক গৌরবময় চরিত্রের বাঁধন খুলে কোলাজ এখানে কাউন্সিলরের ডান হাত যাকে আমরা বাংলা ভাষায় বলি পাড়ার রকবাজ গুন্ডা। নিজের চরিত্রের মধ্যে একাধিক বিভিন্নতা তুলে ধরতেই কোলাজের এই চরিত্র নির্বাচন। শাস্ত্রী ছবি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে কোলাজ সরাসরি বলেন,“ শাস্ত্রী আমার কাছে চির স্মরণীয় একটি ছবি হয়ে থাকবে। শাস্ত্রী ছবির গল্পটি তৈরি হয়েছে দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ঢোলগোবিন্দবাবুর চশমাকে কেন্দ্র করে। ছবি জুড়ে বিজ্ঞান ও অ-বিজ্ঞান খেলা করে। মানুষ নিয়তির দাস নাকি নয়, সেই নিয়েই গল্প। পরিমল শাস্ত্রীর জীবনে ঘটে যায় এক অভূতপূর্ব ঘটনা! একটি চশমাকে ঘিরেই এগিয়ে চলে গল্প। শুনে ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে না? খুবই ইন্টারেস্টিং! ভালো সময় কাটবে ছবিটি দেখলে। সপরিবারে দেখার ছবি।”
১। দেবশ্রী রায় মিঠুন চক্রবর্তীর সাথে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা নিয়ে কী বলবেন?
কোলাজ: মিঠুন চক্রবর্তী একজন লিভিং লেজেন্ড। অভিনয়ের প্রতিষ্ঠান! শুধু চোখের ভাষায় ম্যাজিক তৈরি করে দিতে পারেন স্ক্রিনে! তার সঙ্গে ছবিতে স্ক্রিন শেয়ার করা, যে কোন অভিনেতারই স্বপ্ন বটে! তাও আবার এতগুলো দৃশ্য! মিঠুন চক্রবর্তী অত্যন্ত প্রফেশনাল। শুধুমাত্র অসামান্য অভিনয় দক্ষতায় পারদর্শী বলে নন, আনুষঙ্গিক আরো প্রচুর কারণ রয়েছে। ওনাকে কোনদিন লেট করতে দেখিনি। ওনাকে কোনদিন শট দেওয়ার সময় গড়িমসি করতে দেখিনি। শরীর খারাপ নিয়েও এনার্জিতে এতটুকু ঘাটতি হতে দেখিনি। মিঠুনদা শট দিচ্ছেন মানে একটাই টেক হবে। পুরো ইউনিটের উপর চাপটা বুঝতে পারছেন? বিশেষত ওনার সহ অভিনেতাদের? (হাসি)। দেবশ্রী রায়ে ম্যামের সঙ্গে আমার পুরো সিনেমায় একটাই দৃশ্য ছিলো। তাই ওনার সঙ্গে তেমনভাবে কথা বা আলাপ হওয়ার সুযোগ হয়নি। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই হবে।
২। তিলোত্তমার পরই দেবীপক্ষের সূচনাতেও বাচ্চা মেয়েটির গণধর্ষণ এই নিয়ে কী বলবেন?সমাজ কী আদৌ বদলাবে?
কোলাজ: এই নিয়ে কোন কথা বলতেই আমার কষ্ট হচ্ছে। লজ্জা লাগছে। সংক্ষেপে বলি, সমাজ বদলায় না। বদলায় মানুষ। একজন দুজন থেকে ৫০০/১০০০ জন মানুষের সমষ্টি বদলায়। তবেই আস্তে আস্তে সমাজ বদলায়। এখন সবকিছু অত্যন্ত সহজ হয়ে গেছে। অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়াটাও। সুতরাং ধরা পড়ার ভয় থাকলেও, সাজা পাবার ভয় খুব একটা নেই। দুর্বৃত্তের এই মনোভাবটা ভাঙতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ দিয়ে। হয় ভালোবাসা নাহলে ভয়, এই দুটো জিনিসে মানুষকে আটকানো যায়। যারা এমন কাজ করছে তারা নরাধম। সুতরাং তাদের ভালবাসার প্রশ্নই আসে না, তাদের আটকাতে প্রয়োজন হবে ভয়ের।
৩। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মেয়েদের প্রতিরক্ষা বিষয়ে আপনি একটি বই বের করেছেন ও সেটি বিনামূল্যেই সকলকে প্রদান করছেন। কিন্তু আপনার কি মনে হয় বইটি পরলেই সকলে সাবলম্বী হয়ে উঠবে?
উ: শুধুমাত্র পড়লেই হবে না। সাথে ট্রেনিং প্রয়োজন। তবে এটাও ঠিক আমি যে বইটি লিখেছি, তাতে অত্যন্ত সহজ ভাবে কিছু পরিস্থিতির উদাহরণ দেওয়া আছে। প্রত্যেকটি লেখার সাথে ভিডিওগ্রাফিক রেফারেন্স দেওয়া আছে। কেউ যদি সত্যিই শিখতে চায়, তাহলে সে একেকটা ভিডিও, বারবার দেখলে, কিছুটা আন্দাজ পাবে বটেই। তবে এই দশটি পরিস্থিতির বাইরেও, বাস্তবে আরও হাজার হাজার রকম পরিস্থিতি হতে পারে। সেইক্ষেত্রে যেটা সবচাইতে বেশি প্রয়োজন, সেটা হল মাথা ঠান্ডা রেখে মোকাবিলা করা। আত্মরক্ষার কৌশলগুলো নিজের শরীরে এবং মাথার মধ্যে এমনভাবে বসিয়ে নেওয়া, যাতে সহজাতভাবেই, সেগুলো কার্যকর করা যায়। তার জন্য প্রয়োজন ট্রেনিং। আমার ব্যক্তিগত অভিমত বলে, প্রত্যেকটি মানুষের জীবনের অন্তত তিনটি বছর, মার্শাল আর্ট শেখা উচিত। মানসিকতার উন্নতি হয়। পজিটিভিটি বাড়ে। সাহস বাড়ে। সবচাইতে বেশি যেটা বাড়ে সেটা হল মনের জোর এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব। আত্মরক্ষা অনেকটাই প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের উপর নির্ভর করছে, এর কোনও গ্রামার নেই। একটা বিজ্ঞান আছে। সেই বিজ্ঞানটা আয়ত্ত করতে পারলে বিষয়গুলো সহজ হয়। তার জন্য প্রয়োজন, সঠিকভাবে রেগুলার প্র্যাকটিস। করার জন্য করা নয়, শেখার জন্য করা।
৫। আপনার বইটি নিয়ে এবার কিছু বলুন।
কোলাজ: আমি অভিনেতা হওয়ার আগে একজন মার্শাল আর্টিস্ট। আমি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি এবং পুরস্কৃত হয়েছি। দীর্ঘদিন মার্শাল আর্ট শিখেছি। ক্লাস প্র্যাকটিস করিয়েছি। তখন থেকেই আমার মনের মধ্যে প্রচুর মানুষের মধ্যে মার্শাল আর্টস ছড়িয়ে দেওয়ারএকটা সুপ্ত বাসনা ছিল। নানান মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। বিভিন্ন থিয়েটার দলকে অ্যাপ্রোচ করেছিলাম সেল্ফ ডিফেন্সের ওয়ার্কশপ করানোর জন্য। নিঃশুল্কভাবেই করাতাম। কেউ বিশেষ আমল দেননি তখন। এখন আস্তে আস্তে পায়ের নীচে মাটি শক্ত হচ্ছে। মানুষ এখন ভালবাসা ও গুরুত্ব, দুটোই দিচ্ছেন। এই সময়টাই সঠিক সময় মনে করে, এই বইটি লেখার সিদ্ধান্ত নিই। তবে কাজটা খুব দ্রুততার সাথে করেছি কারণ অবশ্য ছিল আর জি করের ঘটনাটি। এটি একটি ফ্রি ই-বুক। যে কেউ, যে কোনও জায়গা থেকে পড়তে পারবেন। বইটি লঞ্চ করেছি বিডি মেমোরিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। ওখানকার প্রিন্সিপাল বইটি উদ্বোধন করেন। সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একটি ঘন্টা দুয়েকের সেল্ফ ডিফেন্স ওয়ার্কশপও করেছি। ভবিষ্যতে এমন আরও ওয়ার্কশপ করার ইচ্ছে রয়েছে।
৬। রাসবিহারী বসুর পরে মিন্টুর মতো চরিত্র কেন বেছে নিলেন?
কোলাজ: প্রথম কারণটা অবশ্যই ছিল মিঠুনদা, রণিদার মত ব্যক্তিত্বদের সাথে অভিনয় করা আর দ্বিতীয় কারণটা ছিল রাসবিহারী বসুর চরিত্রের মধ্যে তো একটা ওজন আছে, চরিত্রটা এমনই যে আমি কোনও ডায়লগ না বলে চেয়ারে বসে থাকলেও মানুষ আমাকে সম্মান করবেন ভালোবাসবেন, সে জায়গায় মিন্টু চরিত্রটাকে কিন্তু জীবন্ত করতে হবে, তবেই মানুষ তাকে আপন করে নেবে অথবা অভিশাপ দেবে, আমার মনে হয়েছে মিন্টু চরিত্রটার মধ্যে একটা প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপার আছে আর রাসবিহারী বসুর চরিত্রটা তো প্রণম্য একটা চরিত্র, তো সেখান থেকে মিন্টু চরিত্র বেছে নিয়েছি,দর্শক যাতে রাসবিহারী বসু এবং মিন্টুর বাইরে বেরিয়ে কোলাজকে চিনতে পারেন,সেইজন্যই।