ভারতের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং জীবনযাত্রার মানের উন্নতির সাথে সাথে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এর সাথে বাড়ছে বিদ্যুৎ খরচও। ভারতীয় পরিবারগুলির জন্য এসির বিদ্যুৎ খরচ একটি বড় আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করে এই খরচ অনেকটাই কমানো সম্ভব। আসুন জেনে নেই সেই দশটি উপায়:
১. তাপমাত্রা সঠিক রাখুন:
ভারতের জলবায়ু অনুযায়ী, এসির আদর্শ তাপমাত্রা হল 24-26°C। এর চেয়ে কম তাপমাত্রায় রাখলে বিদ্যুৎ খরচ অনেক বেড়ে যায়। ভারতীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের (Ministry of Power) নির্দেশিকা অনুযায়ী, সরকারি অফিসগুলিতে এসির তাপমাত্রা 24-25°C রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো আর্দ্র অঞ্চলে 25-27°C রাখা যেতে পারে।
২. থার্মোস্ট্যাট সেটিংস অপ্টিমাইজ করুন:
ব্যুরো অফ এনার্জি এফিশিয়েন্সি (BEE) এর গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমানোর সাথে সাথে প্রায় 6% বিদ্যুৎ খরচ বাড়ে। তাই, থার্মোস্ট্যাট 1-2 ডিগ্রি বাড়িয়ে রাখলেই মাসে 12-15% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।
৩. নিয়মিত ফিল্টার পরিষ্কার করুন:
ময়লা ফিল্টার এসির দক্ষতা কমিয়ে দেয়। ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ হিটিং, রেফ্রিজারেটিং অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং ইঞ্জিনিয়ার্স (ISHRAE) এর মতে, মাসে একবার ফিল্টার পরিষ্কার করলে এসির দক্ষতা 5-15% পর্যন্ত বাড়ে। এটি শুধু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ই করে না, বাতাসের গুণগত মানও উন্নত করে।
৪. এনার্জি এফিশিয়েন্ট এসি ব্যবহার করুন:
ভারতে BEE স্টার রেটিং সিস্টেম চালু আছে, যেখানে 5 স্টার সর্বোচ্চ দক্ষতার নির্দেশক। 2023 সালের BEE নির্দেশিকা অনুযায়ী, 5 স্টার রেটেড এসি 3 স্টার রেটেড এসির তুলনায় প্রায় 20-25% কম বিদ্যুৎ খরচ করে। যদিও প্রাথমিক খরচ বেশি, দীর্ঘমেয়াদে এটি অর্থ সাশ্রয় করে।
৫. ঘরের আকার অনুযায়ী এসি নির্বাচন করুন:
ভারতীয় জলবায়ুর জন্য, সাধারণত প্রতি 100 বর্গফুট জায়গার জন্য 1 টন ক্ষমতার এসি প্রয়োজন। তবে, এটি ঘরের উচ্চতা, জানালার সংখ্যা, দেওয়ালের পুরুত্ব ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। ছোট ঘরে বড় এসি ব্যবহার করলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হয়।
৬. সূর্যের আলো থেকে ঘর বাঁচান:
ভারতের গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপ ঘরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পর্দা বা ব্লাইন্ড ব্যবহার করে এই তাপ প্রতিরোধ করা যায়। ভারতীয় গ্রীন বিল্ডিং কাউন্সিল (IGBC) এর মতে, এটি ঘরের তাপমাত্রা 3-5°C পর্যন্ত কমাতে পারে, যা এসির কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
৭. সিলিং ফ্যান সাথে এসি ব্যবহার করুন:
এসির সাথে সিলিং ফ্যান ব্যবহার করলে ঠান্ডা বাতাস ভালভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় বৈদ্যুতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান (CPRI) এর একটি অধ্যয়নে দেখা গেছে, এভাবে 3-5% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়।
৮. এসির কম্প্রেসর নিয়মিত পরিষ্কার করুন:
ভারতের ধূলিময় পরিবেশে এসির কম্প্রেসর দ্রুত ময়লা জমে যায়। ISHRAE সুপারিশ করে যে, বছরে অন্তত দুইবার পেশাদার দ্বারা এসি সার্ভিসিং করানো উচিত। এতে এসির দক্ষতা বজায় থাকে এবং বিদ্যুৎ খরচ কমে।
৯. স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট ব্যবহার করুন:
স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট ব্যবহার করে তাপমাত্রা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ভারতীয় বাজারে উপলব্ধ বিভিন্ন স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট ব্যবহার করে 10-15% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।
১০. রাতে এসির তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিন:
রাতে বাইরের তাপমাত্রা কমে যায়। তখন এসির তাপমাত্রা 1-2 ডিগ্রি বাড়িয়ে দিলে 3-5% বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এছাড়া, ঘুমের সময় শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়, তাই একটু বেশি তাপমাত্রায় আরাম পাওয়া যায়।
এই সহজ কৌশলগুলি অবলম্বন করে আপনি শুধু বিদ্যুৎ খরচই কমাবেন না, পরিবেশ রক্ষায়ও অবদান রাখবেন। মনে রাখবেন, প্রতিটি ছোট পদক্ষেপই বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তাই আজই শুরু করুন এসির বুদ্ধিমান ব্যবহার, দেখবেন আপনার বিদ্যুৎ বিল অনেকটাই কমে গেছে।