ভারতের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের জীবন থেকে শেখার মতো পাঠ”সফলতা কাকে বলে? কীভাবে সফল হওয়া যায়? এই প্রশ্নগুলি সবার মনেই ঘুরপাক খায়। কিন্তু সত্যিকারের সফল মানুষদের জীবনযাত্রা লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে তাদের মধ্যে কিছু সাধারণ অভ্যাস রয়েছে যা তাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। আসুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের সবচেয়ে সফল ব্যক্তিত্বদের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস যা আপনার জীবনকেও বদলে দিতে পারে।
ভারতের অধিকাংশ সফল ব্যক্তিত্বই ভোরে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। রিলায়ান্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি সকাল ৫টায় ওঠেন। টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রতন টাটা সকাল ৫:৩০ নাগাদ জেগে ওঠেন। এর ফলে তারা দিনের শুরুতেই নিরিবিলি সময় পান যা পরিকল্পনা ও ধ্যানের জন্য ব্যবহার করেন।
পড়াশোনার অভ্যাস সফল মানুষদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিদিন কমপক্ষে ১ ঘণ্টা পড়াশোনা করেন। ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি প্রতি সপ্তাহে একটি নতুন বই পড়েন। এটি তাদের জ্ঞান বাড়াতে এবং নতুন ধারণা পেতে সাহায্য করে।
সাফল্যের পাঁচ স্তম্ভ: বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের অনুসরণীয় অভ্যাস
নিয়মিত ব্যায়াম সফল ব্যক্তিদের একটি অপরিহার্য অভ্যাস। যোগ গুরু বাবা রামদেব প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা যোগব্যায়াম করেন। ক্রিকেট কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকার এখনও প্রতিদিন ১-২ ঘণ্টা ব্যায়াম করেন। এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে।
সফল মানুষরা সবসময় স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, পেটিএম-এর প্রতিষ্ঠাতা বিজয় শেখর শর্মা প্রতি বছর নিজের জন্য কিছু বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। এটি তাদের ফোকাস ধরে রাখতে এবং অগ্রগতি পরিমাপ করতে সাহায্য করে।
সময়ের সঠিক ব্যবহার সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি। টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেসের সিইও রাজেশ গোপীনাথন প্রতিদিন সকালে একটি টু-ডু লিস্ট তৈরি করেন এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজগুলি সম্পন্ন করেন।
সম্পর্ক তৈরি ও রক্ষা করা সফল ব্যক্তিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। উইপ্রোর চেয়ারম্যান অজিম প্রেমজি নিয়মিত বিভিন্ন শিল্প সম্মেলনে যোগ দেন এবং নতুন সম্পর্ক তৈরি করেন। এটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে এবং জ্ঞান বিনিময়ে সাহায্য করে।
মানসিক শান্তি বজায় রাখা সফলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রী শ্রী রবিশংকর প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ মিনিট ধ্যান করেন। এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে।
অনেক সফল ব্যক্তিই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করেন। অজিম প্রেমজি তার সম্পদের ৩৯% দান করেছেন। সুধা মূর্তি ইনফোসিস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখছেন। এটি তাদের জীবনে অর্থ ও সন্তুষ্টি আনে।
সফল মানুষরা নিজেদেরকে সবসময় নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেন। ফ্লিপকার্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সচিন বানসাল প্রতি বছর একটি নতুন দক্ষতা আয়ত্ত করার চেষ্টা করেন। এটি তাদের নিজেদের সীমানা অতিক্রম করতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের মহাকাব্য: আপনার সন্তানের প্রতিভা বিকাশের ১০টি অমোঘ কৌশল
সফল ব্যক্তিরা ভুলকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখেন। ওয়ান৯৭ কমিউনিকেশনসের প্রতিষ্ঠাতা কৈলাশ কাথুরিয়া বলেন, “প্রতিটি ব্যর্থতা আমাকে আরও শক্তিশালী করেছে।” এই মনোভাব তাদের দ্রুত উন্নতি করতে সাহায্য করে।
ব্যস্ততার মধ্যেও পরিবারের সাথে সময় কাটানো সফল ব্যক্তিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। বায়োকনের চেয়ারপার্সন কিরণ মজুমদার-শ প্রতি সপ্তাহান্তে পরিবারের সাথে সময় কাটান। এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে।
নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অভিনেত্রী দীপিকা পাদুকোন নিয়মিত স্পা ট্রিটমেন্ট নেন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান। এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার সফল ব্যক্তিদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। ফ্লিপকার্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিন্নি বানসাল নিয়মিত নতুন অ্যাপ ও সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। এটি তাদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
সৃজনশীলতা চর্চা করা সফল মানুষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। অভিনেতা আমির খান প্রতি সপ্তাহে কিছু সময় ছবি আঁকেন। এটি তাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সফল ব্যক্তিদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। মাইক্রোসফট ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট অনন্ত মাহেশ্বরী প্রতিদিন ৫টি জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এটি তাদের ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে।
অভ্যাস | উদাহরণ |
---|---|
প্রত্যুষে জাগরণ | মুকেশ আম্বানি সকাল ৫টায় ওঠেন |
নিয়মিত পড়াশোনা | নরেন্দ্র মোদি প্রতিদিন ১ ঘণ্টা পড়েন |
শারীরিক ব্যায়াম | বাবা রামদেব প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা যোগব্যায়াম করেন |
লক্ষ্য নির্ধারণ | বিজয় শেখর শর্মা প্রতি বছর বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করেন |
সময় ব্যবস্থাপনা | রাজেশ গোপীনাথন প্রতিদিন টু-ডু লিস্ট তৈরি করেন |
উপরোক্ত অভ্যাসগুলি ভারতের সবচেয়ে সফল ব্যক্তিত্বদের জীবন থেকে নেওয়া। এই অভ্যাসগুলি অনুসরণ করে আপনিও আপনার জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, সফলতা রাতারাতি আসে না।
মন্তব্য করুন