Best destinations for free stay and food: ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় দেশে ট্যুরিজম মানেই শুধু ব্যয়বহুল হোটেল বা রিসোর্টে থাকা নয়! দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ধর্মীয় আশ্রম, গুরুদ্বার, ধর্মশালা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যেখানে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার সুযোগ পাবেন। এখানে রইল এমন ১০টি গন্তব্যের তালিকা, যেখানে এক পয়সা খরচ না করেই উপভোগ করতে পারবেন আধ্যাত্মিক শান্তি থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
১. দক্ষিণ ভারতে আধ্যাত্মিক আশ্রম
আনন্দাশ্রম, কেরালা
কেরালার কাসারগোড জেলায় অবস্থিত এই আশ্রমটি প্রকৃতির কোলে এক নিরিবিলি অভিজ্ঞতার প্রতীক। এখানে বিনামূল্যে থাকার পাশাপাশি দিনে তিনবার সরল ও স্বাস্থ্যকর খাবার পরিষেবা দেওয়া হয়। সাধু-সন্ন্যাসী এবং সাধারণ অনুগামীদের জন্য আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে। স্বল্প সময়ের জন্য স্বেচ্ছাসেবী কাজে যোগ দিলে বিনামূল্যে থাকার সুযোগ মেলে।
ভারতের শীতকালীন সেরা ১০ তুষারপাত স্থান: অসাধারণ হিমাচ্ছাদিত গন্তব্য
মাতা অমৃতানন্দময়ী আশ্রম, চেন্নাই
মানবসেবায় নিবেদিত এই আশ্রমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করলে যত দিন ইচ্ছা থাকতে পারবেন। খাবার ও থাকার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ফ্রি। আশ্রমের পরিবেশ আপনাকে আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কেও শিক্ষা দেবে।
২. উত্তর ভারতের গুরুদ্বার ও ধর্মশালা
গীতা ভবন, ঋষিকেশ
গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই বিশাল কমপ্লেক্সে একসাথে ২,০০০ ভক্তের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বিনামূল্যে থাকা ও খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিনের সৎসঙ্গ (আধ্যাত্মিক আলোচনা) এবং ধ্যান সেশনে অংশ নেওয়া যায়। গ্রীষ্মকালীন সময়ে বিশেষ প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়।
গুরুদ্বার গোবিন্দ ঘাট, উত্তরাখণ্ড
হেমকুন্ড সাহিব যাত্রার পথে অবস্থিত এই গুরুদ্বারে তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের জন্য ফ্রি থাকার সুযোগ। আলাদা টয়লেট ব্লক, চিকিৎসাকেন্দ্র এবং কমিউনিটি কিচেনের ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে কাত্রা শহরের নিহারিকা কমপ্লেক্সে ভিড়ের সময় বিনামূল্যে থাকার সুযোগ মেলে।
কেদারনাথ ধর্মশালা
উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথে গুজরাত ভবন, রাজস্থান সেবা ভবন, পাঞ্জাব সিন্ধু আবাসসহ একাধিক ধর্মশালায় বিনামূল্যে থাকতে পারেন। অনলাইন বুকিংয়ের সুবিধা থাকলেও সরাসরি উপস্থিত হয়ে জায়গা পেতে পারেন।
৩. স্বেচ্ছাসেবার বিনিময়ে থাকা-খাওয়া
আইএসপিআইসিই (iSpiice) ভলান্টিয়ার প্রোগ্রাম
হিমাচলের পাহাড়ি গ্রামে শিশুদের ইংরেজি শেখানো, নারী স্বাবলম্বন প্রকল্প বা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের কাজ করলে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রোগ্রামের সময়সীমা ২ সপ্তাহ থেকে ৩ মাস। তিন বেলা স্থানীয় খাবার ও নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
আর্ট অফ লিভিং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার, বেঙ্গালুরু
ইয়োগা, মেডিটেশন এবং সামাজিক প্রকল্পে অংশ নিলে এই কেন্দ্রে বিনামূল্যে থাকতে পারবেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত এখানে প্রতিবছর হাজারও বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী আসেন।
৪. হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডের বিশেষ সুযোগ
মানিকরণ সাহিব গুরুদ্বার, হিমাচল প্রদেশ
পার্বত্য অঞ্চলের এই গুরুদ্বারে যত দিন ইচ্ছা থাকতে পারবেন। পর্যটকদের জন্য বিশেষ হিটেড রুমের ব্যবস্থা রয়েছে। পার্বত্য নদীর ধারে অবস্থিত এই স্থানটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ।
ন্যিংমাপা মোনাস্ট্রি, রেওয়ালসার
হিমাচলের রেওয়ালসার লেকের পাশে অবস্থিত এই বৌদ্ধ মঠে মাত্র ২০০-৩০০ টাকায় থাকা যায়। আশেপাশের পাহাড় ও হ্রদের মনোরম দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
৫. গুজরাত ও অন্যান্য অঞ্চল
গুরুদ্বার ভাই মোহকাম সিং জি, দ্বারকা
গুজরাতের বেট দ্বারকায় অবস্থিত এই গুরুদ্বারে লঙ্গরের মাধ্যমে বিনামূল্যে খাওয়ার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কক্ষে থাকার সুযোগ মেলে। ধর্মীয় স্থান হলেও সকল ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত।
তিব্বতি বৌদ্ধ মঠ, সারনাথ
উত্তরপ্রদেশের সারনাথে অবস্থিত এই মঠে রাত্রিযাপনের খরচ মাত্র ৫০ টাকা। শাক্যমুনি বুদ্ধের বিশাল মূর্তি ও প্রার্থনা কক্ষের মাধ্যমে বৌদ্ধ সংস্কৃতির গভীরতা উপলব্ধি করতে পারবেন।
টিপস অ্যান্ড ট্রিকস
- অগ্রিম বুকিং: কেদারনাথ বা ঋষিকেশের মতো জনপ্রিয় স্থানে আগে থেকে অনলাইন বুকিং করুন।
- স্থানীয় সংস্কৃতি মেনে চলুন: ধর্মীয় স্থানগুলিতে শালীন পোশাক ও শৃঙ্খলা বজায় রাখুন।
- স্বেচ্ছাসেবার সময়সীমা: কিছু আশ্রমে ৩-৭ দিনের জন্য স্বেচ্ছাসেবী কাজের বিনিময়ে থাকতে পারবেন।
সহজ বাংলায় পরিসংখ্যান:
- গীতা ভবনে প্রতিদিন ২,০০০+ পর্যটক থাকেন।
- iSpiice প্রোগ্রামে গত ৫ বছরে ৪০+ দেশের ৩,২০০+ স্বেচ্ছাসেবী অংশ নিয়েছেন।
- উত্তরাখণ্ডের গুরুদ্বার গোবিন্দ ঘাটে বছরে ১ লক্ষ+ তীর্থযাত্রী থাকেন।
এই গাইডটি আপনাকে শুধু অর্থ সাশ্রয়ই করবে না, বরং ভারতের গভীর আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় জানতে সাহায্য করবে। পরবর্তী ট্রিপে এই তালিকা কাজে লাগিয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে ভুলবেন না!