Best Spine Surgery Techniques: মেরুদণ্ডের ব্যথা – একটি যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা যা লাখ লাখ ভারতীয়কে প্রতিদিন পীড়িত করে। কিন্তু আর নয়। আধুনিক স্পাইন সার্জারি কৌশলগুলি এখন রোগীদের দ্রুত আরোগ্য লাভ এবং কম ব্যথার সাথে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দিচ্ছে। আসুন জেনে নেই, কোন পদ্ধতিটি আপনার জন্য সেরা হতে পারে।
ভারতে স্পাইন সার্জারির ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটেছে। পারম্পরিক ওপেন সার্জারির পাশাপাশি, এখন মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি (এমআইএসএস) নামে একটি নতুন পদ্ধতি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই পদ্ধতিতে ছোট কাটা দিয়ে অপারেশন করা হয়, যার ফলে পেশী ও টিস্যুতে কম ক্ষতি হয়।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় স্পাইন সার্জন ডঃ জি. বালামুরালি জানান, “এমআইএসএস পদ্ধতিতে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং হাসপাতালে থাকার সময়ও কম লাগে। এটি বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের জন্য উপকারী।”
• কম রক্তপাত
• কম ব্যথা
• দ্রুত সুস্থতা
• ছোট দাগ
• সংক্রমণের ঝুঁকি কম
তবে সব ক্ষেত্রেই এমআইএসএস করা যায় না। গুরুতর স্পাইনাল ডিফরমিটি বা টিউমার থাকলে ওপেন সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
ভারতের অন্যতম শীর্ষ স্পাইন সার্জন ডঃ সজন হেগড়ে বলেন, “প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রে আলাদা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কখনও কখনও দুটি পদ্ধতির সমন্বয় করতে হয়।”
১. টিউবুলার মাইক্রোডিসকেক্টমি: হার্নিয়েটেড ডিস্ক সারাতে ব্যবহৃত হয়। ১ সেমি কাটা দিয়ে করা হয়।
২. এন্ডোস্কোপিক ডিসকেক্টমি: ক্যামেরা ব্যবহার করে ডিস্ক অপসারণ করা হয়। ৭ মিমি কাটা দিয়ে করা হয়।
৩. পারকিউটেনিয়াস ফিক্সেশন: স্ক্রু ও রড দিয়ে মেরুদণ্ড স্থির করা হয়। কয়েকটি ছোট ছিদ্র দিয়ে করা হয়।
৪. এক্সট্রিম ল্যাটারাল ইন্টারবডি ফিউশন (XLIF): পার্শ্ব দিক থেকে মেরুদণ্ডের হাড় জোড়া লাগানো হয়।
৫. রোবোটিক স্পাইন সার্জারি: কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রোবট ব্যবহার করে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে অপারেশন করা হয়।
ডঃ বিকাশ গুপ্তে, যিনি ভারতের অন্যতম পথিকৃৎ রোবোটিক স্পাইন সার্জন, তিনি জানান, “রোবোটিক সার্জারি অত্যন্ত নির্ভুল এবং নিরাপদ। এতে জটিল কেসগুলিও সহজে করা যায়।”
এমআইএসএস এর সাফল্যের হার ৮০-৯০%। তবে এর জন্য সঠিক রোগী নির্বাচন এবং দক্ষ সার্জন প্রয়োজন।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় স্পাইন সেন্টারগুলিতে এমআইএসএস এর খরচ ৭-৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে ওপেন সার্জারির খরচ ১০-১২ লাখ টাকা।
ডঃ এস. করুণাকরণ, চেন্নাইয়ের বিখ্যাত স্পাইন সার্জন বলেন, “এমআইএসএস এ প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি সাশ্রয়ী। কারণ রোগীরা দ্রুত কাজে ফিরতে পারেন।”
• স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
• সংক্রমণ
• রক্তপাত
• অ্যানেস্থেসিয়া জনিত জটিলতা
ডঃ প্রকাশ সিং, দিল্লির একজন বিশিষ্ট স্পাইন সার্জন সতর্ক করে দেন, “যেকোনো সার্জারির মতোই এমআইএসএস এরও কিছু ঝুঁকি আছে। তবে অভিজ্ঞ সার্জনের হাতে এই ঝুঁকি অনেক কম।”
• ভালো স্পাইন সার্জন বেছে নিন
• সার্জারির আগে ও পরে ফিজিওথেরাপি করুন
• ধূমপান ত্যাগ করুন
• স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
• নিয়মিত ব্যায়াম করুন
মেরুদণ্ডের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে দুটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে – ঐতিহ্যগত ওপেন সার্জারি এবং মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি (এমআইএসএস)। আপনার জন্য কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে উপযুক্ত হবে তা নির্ভর করে আপনার নির্দিষ্ট অবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শের উপর। তবে সাধারণভাবে এমআইএসএস পদ্ধতিটি অনেক ক্ষেত্রেই বেশি সুবিধাজনক:
১. ছোট কাটা: এমআইএসএস-এ ১-২ সেন্টিমিটারের ছোট কাটা দেওয়া হয়, যা ওপেন সার্জারির ৫-৬ ইঞ্চি কাটার তুলনায় অনেক কম।
২. কম ব্যথা: ছোট কাটা এবং পেশীতে কম ক্ষতির কারণে অস্ত্রোপচারের পরে ব্যথা কম হয়।
৩. দ্রুত সুস্থতা: এমআইএসএস-এর পর রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে আসতে পারেন।
৪. কম রক্তপাত: ছোট কাটার কারণে রক্তপাতের পরিমাণ কম হয়।
৫. সংক্রমণের ঝুঁকি কম: ছোট কাটা থাকায় সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে।
৬. কম হাসপাতাল বাস: অনেক ক্ষেত্রে এমআইএসএস বহির্বিভাগে করা যায় বা ১-২ দিনের মধ্যেই ছাড়া পাওয়া যায়।
৭. কম দাগ: ছোট কাটার কারণে অস্ত্রোপচারের পর দাগ প্রায় অদৃশ্য থাকে।
১. সংক্রমণ: যেকোনো অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেই সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। মেরুদণ্ডের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে এটি ১% এর কম ঘটে।
২. রক্তপাত: অস্ত্রোপচারের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে।
৩. স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া: মেরুদণ্ডের কাছাকাছি থাকা স্নায়ুগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা অবশতা বা দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. ডুরাল টিয়ার: মেরুরজ্জুর আবরণ ছিঁড়ে গিয়ে স্পাইনাল ফ্লুইড লিক হতে পারে।
৫. ব্যথা অব্যাহত থাকা: কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পরেও ব্যথা কমাও না যেতে পারে।
৬. রক্তের জমাট: পায়ে রক্তের জমাট বাঁধতে পারে (ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস)।
৭. ইমপ্লান্ট সমস্যা: ব্যবহৃত ইমপ্লান্ট আলগা হয়ে যাওয়া বা ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৮. অ্যানেস্থেসিয়া জটিলতা: অ্যানেস্থেসিয়া থেকে অ্যালার্জি বা অন্যান্য প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
৯. ফিউশন ব্যর্থতা: কিছু ক্ষেত্রে হাড় সঠিকভাবে জুড়ে না লাগতে পারে।
১০. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।তবে এই ঝুঁকিগুলি খুবই কম এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার নিরাপদে সম্পন্ন হয়। একজন অভিজ্ঞ সার্জন আপনার নির্দিষ্ট অবস্থা বিবেচনা করে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে আপনাকে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।
স্পাইন সার্জারির পর নিম্নলিখিত ব্যায়ামগুলি করা যেতে পারে:
১. হাঁটা: সার্জারির পরদিন থেকেই ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করা উচিত। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন।
২. এঙ্কল পাম্পস: শুয়ে থেকে পায়ের গোড়ালি উপরে-নিচে নাড়ান। ১০ বার করুন।
৩. হিল স্লাইডস: শুয়ে থেকে একটি হাঁটু ভাঁজ করে সোজা করুন। ১০ বার করুন।
৪. পেটের পেশী শক্ত করা: শুয়ে থেকে পেটের পেশী ৫ সেকেন্ড শক্ত করে ধরে রাখুন। ১০ বার করুন।
৫. ব্রিজ: শুয়ে থেকে কোমর উপরে তুলুন। ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ১০ বার করুন।
৬. সোজা পা তোলা: শুয়ে থেকে একটি পা সোজা করে ৬-১২ ইঞ্চি উপরে তুলুন। ১০ বার করুন।
৭. হাঁটু বুকের কাছে আনা: শুয়ে থেকে একটি হাঁটু বুকের কাছে আনুন। ২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ৫ বার করুন।
৮. স্ট্যাশনারি বাইক চালানো: ২০-৩০ মিনিট স্ট্যাশনারি বাইক চালান।এই ব্যায়ামগুলি ধীরে ধীরে শুরু করুন এবং সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়ান। কোনো ব্যথা হলে অবশ্যই থামিয়ে দিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যাবে এবং মেরুদণ্ড শক্তিশালী হবে।
মেরুদণ্ডের অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত এবং কার্যকরী পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমরা আলোচনা করব কোন ধরনের ব্যায়াম এবং খাদ্য আপনার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
স্পাইন সার্জারির পর ব্যায়াম শুরু করা উচিত ধীরে ধীরে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। কিছু সাধারণ ব্যায়াম যা আপনি করতে পারেন:
এই ব্যায়ামগুলি ধীরে ধীরে শুরু করুন এবং সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়ান। কোনো ব্যথা হলে অবশ্যই থামিয়ে দিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেরুদণ্ডের সার্জারির পর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য এবং পুষ্টি উপাদান উল্লেখ করা হলো যা আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:
কিছু খাবার আছে যা সার্জারির পর এড়িয়ে চলা উচিত:
স্পাইন সার্জারি এখন আর ভয়ের বিষয় নয়। আধুনিক কৌশলগুলি রোগীদের দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দিচ্ছে। তবে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচনের জন্য অবশ্যই একজন দক্ষ স্পাইন সার্জনের পরামর্শ নিন। আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সেটাই সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত হবে।
মন্তব্য করুন