Best vascular surgeon in Dhaka: ঢাকা শহরে ভাস্কুলার সার্জারির ক্ষেত্রে অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রক্তনালী সংক্রান্ত জটিল সমস্যাগুলির চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রখ্যাত ভাস্কুলার সার্জন হলেন – ডা. এস এম জি কিবরিয়া, ডা. সাকলায়েন রাসেল, অধ্যাপক ডা. এস এ নুরুল আলম আগা, ডা. রাকিবুল হাসান আপু এবং ডা. আবুল হাসান মুহাম্মদ বাশার।
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে কর্মরত আছেন। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিভিডি) এবং ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ঢাকার দুটি প্রধান প্রতিষ্ঠান যেখানে উন্নত ভাস্কুলার সার্জারি সেবা প্রদান করা হয়।এনআইসিভিডি’র ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগ ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করে এবং ২০১০ সালে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাস্কুলার কেন্দ্র এবং জটিল ভাস্কুলার রোগের চিকিৎসার জন্য দেশের দুটি তৃতীয়ক রেফারেল কেন্দ্রের একটি। এটি সরকারি খাতে একমাত্র ভাস্কুলার ইউনিট যা দিনে ২৪ ঘণ্টা জরুরি ভাস্কুলার সেবা প্রদান করে।
Gallbladder Disease: অপারেশন ছাড়া গলব্লাডার পাথর অপসারণ: মিথ না বাস্তবতা?
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগ ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিভাগ ধমনী ও শিরার বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা প্রদান করে থাকে।ভাস্কুলার সার্জনরা রক্তনালী সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে পেরিফেরাল আর্টারির অবরোধ (ব্লক), বিশেষ করে হাত-পায়ের ধমনীর সমস্যা, ধমনীর অ্যানিউরিজম, ভ্যারিকোজ ভেইন, গভীর শিরা থ্রম্বোসিস, ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি, আর্টেরিও-ভেনাস ফিস্টুলা ইত্যাদি। এছাড়াও তারা রক্তনালীর টিউমার এবং বিভিন্ন ধরনের আর্টেরিও-ভেনাস ম্যালফরমেশনের চিকিৎসাও করে থাকেন।
জরুরি ভিত্তিতে সড়ক দুর্ঘটনা ও অন্যান্য আঘাতজনিত রক্তনালীর ক্ষতি এবং থ্রম্বো-এম্বোলিজমের কারণে হঠাৎ ধমনী অবরোধের চিকিৎসাও করা হয়। এছাড়া রক্তনালীর রোগ নির্ণয় ও মূল্যায়নের জন্য ডুপ্লেক্স আল্ট্রাসাউন্ড ও অ্যাঞ্জিওগ্রামের মতো ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাও করা হয়।ঢাকায় ভাস্কুলার সার্জারির খরচ রোগীর অবস্থা ও চিকিৎসা পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ তুলনামূলকভাবে কম। উদাহরণস্বরূপ, এনআইসিভিডি’তে বহির্বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য মাত্র ১০ টাকা টিকেট কাটতে হয়। ডুপ্লেক্স আল্ট্রাসাউন্ডের জন্য সরকারি চার্জ ৬০০ টাকা এবং পেরিফেরাল অ্যাঞ্জিওগ্রামের জন্য ৫০০ টাকা। অপারেশন বিনামূল্যে করা হয়।
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকায় ভ্যারিকোসেল চিকিৎসার খরচ সাধারণত ৬০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকার মধ্যে থাকে। তবে চূড়ান্ত খরচ অপারেশনের ধরন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে।বাংলাদেশে ক্রনিক ভেনাস ডিজিজ (সিভিডি) একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সিভিডি রোগীদের মধ্যে ৩৫% C2 ভ্যারিকোজ ভেইন এবং ১১.৭% C4b লিপোডার্মাটোস্ক্লেরোসিস বা অ্যাট্রোফি ব্লাঞ্চে আক্রান্ত। ৩১-৪০ এবং ৫১-৬০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা সিভিডি’তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হয়।
বাংলাদেশে হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বাড়ছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৪৮.৭% লিপিড লেভেল ডিসঅর্ডার, ৩০% হাইপারটেনশন, ২৮.৫% হার্ট ফেইলিওর, ২০.৯% মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, ১৯.৯% ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ, ১৭.১% স্ট্রোক এবং ১১% অ্যাঞ্জিনায় আক্রান্ত।ঢাকার ভাস্কুলার সার্জনরা এই সমস্ত রোগের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, ভ্যারিকোসেলের চিকিৎসায় পারকিউটেনিয়াস এম্বোলাইজেশন, ওপেন ভ্যারিকোসেলেক্টমি, ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি এবং মাইক্রোস্কোপিক ভ্যারিকোসেল সার্জারির মতো আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশে ভাস্কুলার সার্জারির ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় ভাস্কুলার সার্জনের সংখ্যা অপ্রতুল। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মোট ২৯টি কেন্দ্রে ১২,৯২৬টি হৃদরোগের অপারেশন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬৭.১% ছিল কোরোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং (সিএবিজি), ১১.৭% ভালভুলার এবং ১৯.৯% কনজেনিটাল কেস।
মেরুদণ্ডের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি: আধুনিক স্পাইন সার্জারি কীভাবে আপনার জীবন বদলে দিতে পারে
আরেকটি বড় সমস্যা হলো ভাস্কুলার সার্জারি কেন্দ্রগুলোর ভৌগোলিক বণ্টন। ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩২টি কেন্দ্র ভাস্কুলার সার্জারি সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে ২৪টি কেন্দ্র ঢাকায় অবস্থিত, যা দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫% এর বাসস্থান। এই কেন্দ্রগুলো একসাথে দেশের মোট ভাস্কুলার সার্জারির ৯৫% এর বেশি সম্পন্ন করে।
এই অসম বণ্টন ইতিমধ্যে বিদ্যমান স্বল্পতার মধ্যে ভাস্কুলার সার্জারি সেবার প্রাপ্যতায় একটি অসাম্য সৃষ্টি করেছে। যদিও বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা সমস্যা নয়, তবুও ভাস্কুলার সার্জারি কেন্দ্রগুলোর বণ্টনের মতো সম্পদের বণ্টনেরও একই ধরনের ভৌগোলিক বৈষম্য রয়েছে।