শীতকালে কোন ধরনের ক্রিম ব্যবহার করা উচিত? জেনে নিন কোন ক্রিম আপনার ত্বককে রাখবে মসৃণ ও উজ্জ্বল

শীতকালে সঠিক ক্রিম নির্বাচন করা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যানাডিয়ান ডার্মাটোলজি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪০% মানুষ শীতকালে শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত ত্বকের সমস্যায় ভোগেন। এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা কমে…

Ishita Ganguly

 

শীতকালে সঠিক ক্রিম নির্বাচন করা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যানাডিয়ান ডার্মাটোলজি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪০% মানুষ শীতকালে শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত ত্বকের সমস্যায় ভোগেন। এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়া এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে ত্বক তার প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারায়, যার ফলে রুক্ষতা, ফাটল এবং লালচে ভাব দেখা দেয়। ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, শীতকালে এমন ক্রিম ব্যবহার করা উচিত যাতে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, সেরামাইড, নায়াসিনামাইড এবং গ্লিসারিনের মতো শক্তিশালী উপাদান থাকে। University of Copenhagen-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, শীত ও গ্রীষ্মকালে ত্বকের বাধা স্তরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে, যা ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি করে।

শীতকালে ত্বকের বিশেষ যত্ন কেন প্রয়োজন

শীতকালে ত্বক তার প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তরের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রায় ৬০-৭০% নারী এবং ৫০-৬০% পুরুষ কোনো না কোনো মাত্রায় সংবেদনশীল ত্বকের অধিকারী, যা শীতকালে আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ঠান্ডা বাতাস এবং কম আর্দ্রতার কারণে ত্বকের জল ধারণ ক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে ত্বক শুষ্ক, খসখসে এবং নিষ্প্রাণ দেখায়।

British Journal of Dermatology-তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ৮০ জন প্রাপ্তবয়স্কের ত্বক পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে ফিলাগ্রিন প্রোটিনের উপজাত পদার্থের মাত্রা শীত ও গ্রীষ্মকালে ওঠানামা করে। এই পরিবর্তন ত্বকের বাধা স্তরকে দুর্বল করে এবং আর্দ্রতা হ্রাস ঘটায়। এছাড়াও, প্রায় ২৫% মানুষ শীতকালে জেরোসিস বা তীব্র শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় ভোগেন, যা দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করে।

শীতকালে ত্বকের সমস্যাগুলি শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে একজিমার প্রকোপ বৃদ্ধি পায় এবং সোরিয়াসিস রোগীরা আর্দ্রতা কমে যাওয়া এবং UV এক্সপোজার হ্রাসের কারণে আরও জটিলতার সম্মুখীন হন। রোজেশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা বাতাস এবং তাপমাত্রার পরিবর্তন লক্ষণগুলিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

শুষ্ক ত্বকের জন্য সেরা ১০টি ময়েশ্চারাইজার যা ২০২৫ সালে আপনার ত্বককে করবে নরম ও উজ্জ্বল

শীতকালে ব্যবহারযোগ্য ক্রিমের প্রকারভেদ

ফেস ক্রিম বনাম বডি ক্রিম

মুখের ত্বক শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় অধিক সংবেদনশীল এবং পাতলা। তাই মুখের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। বডি ক্রিম সাধারণত ঘন এবং তৈলাক্ত হয়, যা মুখের ছিদ্র বন্ধ করে ব্রণের সৃষ্টি করতে পারে। বিপরীতে, ফেস ক্রিম হালকা, দ্রুত শোষণযোগ্য এবং মুখের সূক্ষ্ম ত্বকের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়।

শীতকালে শরীরের শুষ্ক অংশ যেমন কনুই, হাঁটু এবং পায়ের জন্য ঘন টেক্সচারের বডি ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলিতে শিয়া বাটার, কোকো বাটার এবং তেলের উচ্চ মাত্রা থাকে যা দীর্ঘস্থায়ী আর্দ্রতা প্রদান করে। তবে মুখের জন্য সর্বদা নন-কমেডোজেনিক এবং হাইপোঅ্যালার্জেনিক ফেস ক্রিম নির্বাচন করুন।

ময়েশ্চারাইজার বনাম কোল্ড ক্রিম

ময়েশ্চারাইজার এবং কোল্ড ক্রিমের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ময়েশ্চারাইজার হালকা, দ্রুত শোষণযোগ্য এবং ত্বকে আর্দ্রতা প্রদান করার পাশাপাশি ত্বকের বাধা স্তরকে শক্তিশালী করে। এতে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, নায়াসিনামাইড এবং সেরামাইডের মতো আধুনিক উপাদান থাকে।

অন্যদিকে, কোল্ড ক্রিম ঐতিহ্যবাহী এবং অধিক তৈলাক্ত। এটি ত্বকের উপরে একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি করে কিন্তু ত্বকে ভারী অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। আধুনিক ডার্মাটোলজিস্টরা হালকা, বিজ্ঞান-ভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দেন যা ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী হাইড্রেশন প্রদান করে।

ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্রিম নির্বাচন

ত্বকের ধরন প্রস্তাবিত ক্রিমের ধরন মূল উপাদান বৈশিষ্ট্য
শুষ্ক থেকে অত্যন্ত শুষ্ক রিচ ক্রিম/বাটার মুস শিয়া বাটার, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, সেরামাইড ২৪ ঘণ্টা হাইড্রেশন, বাধা স্তর পুনরুদ্ধার
তৈলাক্ত থেকে কম্বিনেশন অয়েল-ফ্রি লোশন/জেল প্যান্থেনল, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড হালকা, নন-গ্রিসি, ছিদ্র বন্ধ করে না
সংবেদনশীল ত্বক ফ্রেগরেন্স-ফ্রি ক্রিম গ্লিসারিন, সেরামাইড, ভিটামিন E প্রশমিত করে, জ্বালা কমায়
স্বাভাবিক ত্বক হাইড্রেটিং লোশন হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, ভিটামিন B5 সুষম আর্দ্রতা, টেক্সচার উন্নতি

শীতকালের ক্রিমে অপরিহার্য উপাদানসমূহ

হায়ালুরোনিক অ্যাসিড

হায়ালুরোনিক অ্যাসিড শীতকালীন ত্বক যত্নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির মধ্যে একটি। এটি একটি প্রাকৃতিক অণু যা ত্বকে স্বাভাবিকভাবেই পাওয়া যায় এবং হিউমেক্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে। La Roche-Posay-এর বিশেষজ্ঞদের মতে, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড তার নিজের ওজনের ১০০০ গুণ জল ধারণ করতে পারে, যা ত্বককে আর্দ্র এবং পূর্ণ রাখতে সাহায্য করে।

এই উপাদান ত্বকের গভীর স্তরে প্রবেশ করে এবং জলের অণুগুলিকে আকৃষ্ট করে আর্দ্রতা ধরে রাখে। শীতকালে যখন বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে, তখন হায়ালুরোনিক অ্যাসিডযুক্ত ক্রিম ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে বিশেষভাবে কার্যকর। এটি সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে যা শুষ্কতার কারণে দেখা দেয়।

সেরামাইড

সেরামাইড ত্বকের বাধা স্তরের একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং বাহ্যিক ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। Phimedy-র বিশেষজ্ঞদের মতে, সেরামাইড ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের বাধা স্তর মেরামত করে, জলের ক্ষয় রোধ করে এবং শুষ্ক, জ্বালাময় ত্বককে প্রশমিত করে।

শীতকালে সেরামাইডের উপকারিতাগুলি অপরিসীম। এটি সারাদিন আর্দ্রতা লক করে রাখে, শীতকালীন রুক্ষতা এবং খোসা ছাড়ানো কমায় এবং ত্বককে মসৃণ ও হাইড্রেটেড রাখে। সেরামাইড ১, ৩, এবং ৬-II সমন্বিত ক্রিমগুলি বিশেষভাবে কার্যকর কারণ তারা ত্বকের প্রাকৃতিক লিপিড প্রোফাইলকে অনুকরণ করে।

নায়াসিনামাইড

নায়াসিনামাইড বা ভিটামিন B3 একটি বহুমুখী উপাদান যা শীতকালীন ত্বক যত্নে অত্যন্ত উপকারী। এটি ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট লালচে ভাব এবং প্রদাহ কমায়, আর্দ্রতা বাধা শক্তিশালী করে এবং ছিদ্রের উপস্থিতি কমায়। The Deconstruct-এর তথ্য অনুযায়ী, নায়াসিনামাইড সেরামাইড উৎপাদনে সহায়তা করে, যা ত্বকের বাধা পুনরুদ্ধার করতে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

এই উপাদান অসম ত্বকের টোন উন্নত করে, শীতকালেও অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং আর্দ্রতা ক্ষয় ও জ্বালা প্রতিরোধ করে। নায়াসিনামাইড স্কোয়ালেন, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বা সেরামাইডের সাথে মিলিত হলে হাইড্রেশন বৃদ্ধি পায় এবং ত্বকের শুষ্কতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।

গ্লিসারিন

গ্লিসারিন দীর্ঘদিন ধরে শীতকালীন ত্বক যত্নের একটি কার্যকর উপাদান হিসেবে পরিচিত। হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের মতো, এটিও একটি হিউমেক্ট্যান্ট যা ত্বকে আর্দ্রতা আকৃষ্ট করে এবং ধরে রাখে। গ্লিসারিন ত্বককে রক্ষা করতে, জলের ক্ষয় রোধ করতে এবং স্থিতিস্থাপকতা মেরামত করতে সাহায্য করে।

শীতকালে শুষ্ক ত্বকের জন্য গ্লিসারিন একটি চমৎকার বিকল্প কারণ এটি ত্বককে প্রশমিত করে এবং হাইড্রেট করে। অনেক ময়েশ্চারাইজারে গ্লিসারিন পাওয়া যায় কারণ এটি ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে এবং আর্দ্রতা লক করতে অত্যন্ত কার্যকর।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান

স্কোয়ালেন একটি হালকা তেল যা ত্বকে দ্রুত শোষিত হয় এবং গভীর আর্দ্রতা প্রদান করে। ভিটামিন E একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে পরিবেশগত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে। প্যান্থেনল বা ভিটামিন B5 ত্বককে হাইড্রেট করে এবং ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে, বিশেষত তৈলাক্ত থেকে কম্বিনেশন ত্বকের জন্য উপযুক্ত।

শীতকালীন ত্বক যত্নের সম্পূর্ণ রুটিন

সকালের রুটিন

সকালের ত্বক যত্ন শীতকালে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে একটি মৃদু ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন যা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কেড়ে নেয় না। তারপর হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সিরাম প্রয়োগ করুন যা আর্দ্রতা প্রদান করবে। এর পরে সেরামাইড-ভিত্তিক পুষ্টিকর ক্রিম ব্যবহার করুন যা হাইড্রেশন লক করবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো SPF 50 সানস্ক্রিন প্রয়োগ করা। অনেকে মনে করেন শীতকালে সানস্ক্রিন প্রয়োজন নেই, কিন্তু UV রশ্মি সারাবছর ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। সবশেষে লিপ বাম ব্যবহার করুন যাতে ঠোঁট সারাদিন আর্দ্র থাকে।

রাতের রুটিন

রাতের ত্বক যত্ন আরও গভীর এবং পুষ্টিকর হওয়া উচিত। প্রথমে মেকআপ এবং দিনের ময়লা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করুন একটি তেল-ভিত্তিক ক্লিনজার দিয়ে, তারপর জল-ভিত্তিক ক্লিনজার ব্যবহার করুন। টোনার প্রয়োগ করুন যা ত্বকের pH ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করবে।

এরপর নায়াসিনামাইড বা অন্যান্য চিকিৎসামূলক সিরাম প্রয়োগ করুন। রাতে একটি ঘন, পুষ্টিকর নাইট ক্রিম ব্যবহার করুন যাতে শিয়া বাটার, সেরামাইড এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান থাকে। সপ্তাহে দুবার একটি হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার করুন অতিরিক্ত আর্দ্রতার জন্য।

শীতকালে ক্রিম নির্বাচনের টিপস

শীতকালে সঠিক ক্রিম নির্বাচন করার সময় কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত। প্রথমত, আপনার ত্বকের ধরন চিহ্নিত করুন এবং সেই অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করুন। শুষ্ক ত্বকের জন্য রিচ ক্রিম এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অয়েল-ফ্রি লোশন বেছে নিন।

উপাদান তালিকা সাবধানে পড়ুন এবং নিশ্চিত করুন যে ক্রিমে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, সেরামাইড, নায়াসিনামাইড বা গ্লিসারিনের মতো কার্যকর উপাদান রয়েছে। ফ্রেগরেন্স-ফ্রি এবং হাইপোঅ্যালার্জেনিক পণ্য বেছে নিন, বিশেষত যদি আপনার সংবেদনশীল ত্বক থাকে। ডার্মাটোলজিস্ট-টেস্টেড এবং নন-কমেডোজেনিক লেবেলযুক্ত ক্রিম নির্বাচন করুন যা ছিদ্র বন্ধ করবে না।

ডার্মাটোলজিস্ট-সুপারিশকৃত শীতকালীন ক্রিম

পণ্যের নাম মূল উপাদান বৈশিষ্ট্য উপযুক্ত ত্বক
Clinikally HydraSoothe Moisturiser সেরামাইড, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড দীর্ঘস্থায়ী হাইড্রেশন, নরম ত্বক সব ধরনের ত্বক
Bioderma Atoderm Crème Ultra শিয়া বাটার, সেরামাইড পুষ্টি প্রদান, বাধা পুনরুদ্ধার শুষ্ক থেকে অতি শুষ্ক
Minimalist 10% Vitamin B5 প্যান্থেনল টেক্সচার উন্নতি, অয়েল-ফ্রি তৈলাক্ত থেকে কম্বিনেশন
Venusia Max Intensive Lotion সেরামাইড (১,৩,৬-II), হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ২৪ ঘণ্টা হাইড্রেশন, কোমল অতি শুষ্ক ও সংবেদনশীল
Sebamed Moisturizing Cream ভিটামিন E (২%) বয়স-বিরোধী, টেক্সচার উন্নতি স্বাভাবিক থেকে শুষ্ক

শীতকালে ময়েশ্চারাইজিংয়ের সাধারণ ভুল

অনেকে শীতকালে ময়েশ্চারাইজিং করার সময় কিছু সাধারণ ভুল করেন যা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। প্রথম ভুল হলো গরম জল দিয়ে মুখ ধোয়া। গরম জল ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কেড়ে নেয় এবং শুষ্কতা বৃদ্ধি করে। সর্বদা হালকা গরম বা ঠান্ডা জল ব্যবহার করুন।

দ্বিতীয় ভুল হলো শুষ্ক ত্বকে ক্রিম প্রয়োগ করা। ত্বক সামান্য ভেজা থাকা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করলে আর্দ্রতা লক হয় এবং পণ্য আরও কার্যকর হয়। আরেকটি সাধারণ ভুল হলো দিনে একবার মাত্র ময়েশ্চারাইজ করা। শীতকালে সকাল এবং রাতে দুবার ক্রিম ব্যবহার করা উচিত।

অনেকে শীতকালেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা বন্ধ করে দেন, যা একটি বড় ভুল। UV রশ্মি মেঘলা দিনেও ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া, ঘন ক্রিম ব্যবহার করে তৈলাক্ত ত্বকের মানুষ ব্রণের সমস্যায় পড়তে পারেন। সঠিক টেক্সচার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শীতকালে সুস্থ চোখের জন্য খাদ্যতালিকা: চোখ সংক্রান্ত সমস্যা প্রতিরোধে খাবার

শরীরের বিভিন্ন অংশের জন্য বিশেষ যত্ন

হাত ও পায়ের যত্ন

হাত এবং পা শীতকালে সবচেয়ে বেশি শুষ্কতার শিকার হয়। হাতের জন্য একটি ঘন হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করুন যাতে গ্লিসারিন এবং শিয়া বাটার থাকে। প্রতিবার হাত ধোয়ার পরে ক্রিম প্রয়োগ করুন। রাতে ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত ক্রিম লাগিয়ে সুতির গ্লাভস পরুন, যা গভীর আর্দ্রতা প্রদান করবে।

পায়ের জন্য বিশেষভাবে ফুট ক্রিম ব্যবহার করুন যাতে ইউরিয়া বা ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে। এগুলি পায়ের ফাটা এবং খসখসে ত্বক মেরামত করতে সাহায্য করে। সপ্তাহে একবার পায়ের এক্সফলিয়েশন করুন এবং রাতে মোজা পরে ঘুমান ক্রিম প্রয়োগ করার পর।

ঠোঁটের যত্ন

ঠোঁট শীতকালে দ্রুত ফেটে যায় এবং শুষ্ক হয়ে যায়। একটি ভালো লিপ বাম ব্যবহার করুন যাতে বিস্ওয়াক্স, শিয়া বাটার বা ভিটামিন E থাকে। SPF যুক্ত লিপ বাম নির্বাচন করুন যা সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে। ঠোঁট চাটা এড়িয়ে চলুন কারণ এটি শুষ্কতা বৃদ্ধি করে।

রাতে একটি পুষ্টিকর লিপ মাস্ক বা তেল-ভিত্তিক বাম ব্যবহার করুন। সপ্তাহে একবার মৃদু লিপ স্ক্রাব ব্যবহার করে মৃত কোষ অপসারণ করুন। পর্যাপ্ত জল পান করুন কারণ ভেতর থেকে হাইড্রেশন ঠোঁটকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।

প্রাকৃতিক বিকল্প ও ঘরোয়া উপায়

কিছু প্রাকৃতিক উপাদান শীতকালীন ত্বক যত্নে কার্যকর হতে পারে। নারকেল তেল একটি চমৎকার প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার যা ত্বকে গভীর আর্দ্রতা প্রদান করে। রাতে শরীরে নারকেল তেল ম্যাসাজ করুন শুষ্কতা দূর করতে। অ্যালোভেরা জেল ত্বককে প্রশমিত করে এবং হাইড্রেট করে, বিশেষত জ্বালা বা লালচে ত্বকের জন্য উপকারী।

মধু একটি প্রাকৃতিক হিউমেক্ট্যান্ট যা আর্দ্রতা আকৃষ্ট করে এবং ধরে রাখে। মধু এবং দই মিশিয়ে একটি ফেস মাস্ক তৈরি করুন এবং ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। দুধ এবং গোলাপ জলের মিশ্রণ একটি কোমল ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মনে রাখবেন, গুরুতর ত্বক সমস্যার জন্য সর্বদা ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।

খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার প্রভাব

শীতকালে ত্বকের স্বাস্থ্য শুধুমাত্র বাহ্যিক যত্নের উপর নির্ভর করে না, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যাপ্ত জল পান করুন, দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস, যা ত্বককে ভেতর থেকে হাইড্রেটেড রাখবে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, বাদাম এবং বীজ ত্বকের বাধা স্তরকে শক্তিশালী করে।

ভিটামিন C এবং E সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খান যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদান করে এবং ত্বককে পরিবেশগত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন, প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা, যা ত্বকের পুনর্জন্মের জন্য অত্যাবশ্যক। ঘরের আর্দ্রতা বৃদ্ধির জন্য হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন, বিশেষত শোবার ঘরে, যা ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে।

শীতকালে সঠিক ক্রিম নির্বাচন এবং ত্বক যত্ন রুটিন মেনে চলা ত্বককে সুস্থ, আর্দ্র এবং উজ্জ্বল রাখার জন্য অপরিহার্য। গবেষণা এবং ডার্মাটোলজিস্টদের পরামর্শ অনুযায়ী, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, সেরামাইড, নায়াসিনামাইড এবং গ্লিসারিনযুক্ত ক্রিম শীতকালে সবচেয়ে কার্যকর। আপনার ত্বকের ধরন চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করুন এবং নিয়মিত সকাল ও রাতের রুটিন মেনে চলুন। মনে রাখবেন, বাহ্যিক যত্নের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জল পান, পুষ্টিকর খাবার এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার ত্বকে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে একজন যোগ্য ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন এবং আপনার ত্বকের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত চিকিৎসা পরিকল্পনা অনুসরণ করুন।

About Author
Ishita Ganguly

ঈশিতা গাঙ্গুলী ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে স্নাতক। তিনি একজন উদ্যমী লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। ঈশিতার লেখার ধরন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে আনেন এবং পাঠকদের চিন্তা-চেতনার পরিসরকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেন। সাংবাদিকতার জগতে তার অটুট আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন