Bhai Dooj 2024 Date, Celebration Time: ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব ভাইফোঁটা। দীপাবলির দুই দিন পর এই উৎসব পালিত হয়। ২০২৪ সালে ভাইফোঁটা পড়ছে ৩ নভেম্বর রবিবার। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়।
দ্বিতীয়া তিথি শুরু: ২ নভেম্বর ২০২৪, রাত ৮:২১ মিনিট
দ্বিতীয়া তিথি শেষ: ৩ নভেম্বর ২০২৪, রাত ১০:০৫ মিনিট
ভাইফোঁটার অপরাহ্ন কাল: ৩ নভেম্বর ২০২৪, দুপুর ১:১৭ মিনিট থেকে বিকেল ৩:৩৮ মিনিট
ভাই ও বোনের মধ্যকার অটুট বন্ধনকে উদযাপন করা হয় এই উৎসবে। বোনেরা ভাইদের কপালে টিকা পরিয়ে দীর্ঘায়ু ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করে। বিনিময়ে ভাইরা বোনদের উপহার দেয় এবং সারাজীবন রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়।
১৫ই আগস্ট: ভারতসহ ৫টি দেশের স্বাধীনতা দিবস
এই উৎসবের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। একটি জনপ্রিয় কাহিনী অনুযায়ী, নরকাসুর বধের পর শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে যান। সুভদ্রা তাঁকে আরতি করে স্বাগত জানান, কপালে টিকা পরান এবং মিষ্টি খাওয়ান। প্রতিদানে কৃষ্ণ তাঁকে আশীর্বাদ করেন এবং রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। এই ঘটনা থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের সূচনা হয়।আরেকটি কাহিনী অনুসারে, মৃত্যুর দেবতা যম তাঁর বোন যমুনার (যমী) কাছে যান। যমুনা তাঁকে আরতি ও টিকা দিয়ে স্বাগত জানান। যম এতে খুশি হয়ে ঘোষণা করেন যে, যে ভাই এই দিনে বোনের কাছ থেকে টিকা নেবে, সে দীর্ঘায়ু ও সমৃদ্ধিশালী হবে। এই কারণে এই দিনটিকে “যম দ্বিতীয়া”ও বলা হয়।এই সব কাহিনী থেকে বোঝা যায় যে, ভাইফোঁটা উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হল ভাই-বোনের মধ্যকার বন্ধন দৃঢ় করা। বোনেরা ভাইদের মঙ্গল ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করে, আর ভাইরা বোনদের রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ভাইফোঁটার দিন বোনেরা সকাল থেকেই প্রস্তুতি নেয়। তারা ভাইদের জন্য বিশেষ আসন তৈরি করে। ভাইরা বসলে তাদের কপালে সিঁদুর, দই ও চালের মিশ্রণে তৈরি টিকা পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বোনেরা ভাইদের হাতে পান, সুপারি, মুদ্রা ও ফুল দিয়ে জল ঢেলে পবিত্র মন্ত্র উচ্চারণ করে।এরপর বোনেরা ভাইদের হাতে কালাওয়া নামক পবিত্র সুতো বেঁধে দেয় এবং আরতি করে আশীর্বাদ করে। সবশেষে ভাই-বোনে উপহার বিনিময় করে এবং মিষ্টি খাওয়াখাওয়ি করে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বোনেরা ভাইদের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করে, আর ভাইরা বোনদের রক্ষার প্রতিজ্ঞা করে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভাইফোঁটা বিভিন্ন নামে ও পদ্ধতিতে পালিত হয়। পশ্চিমবঙ্গে এটি “ভাইফোঁটা” নামে পরিচিত। এখানে বোনেরা সকাল থেকে উপবাস করে থাকে। তারা চন্দনের পেস্ট, কাজল ও ঘি দিয়ে টিকা তৈরি করে ভাইদের কপালে লাগায়। বড় ভাই-বোন ছোটদের ধান ও দূর্বা ঘাস দেয়, যা সুখ ও দীর্ঘায়ুর প্রতীক।মহারাষ্ট্রে এই উৎসব “ভাউ বীজ” নামে পালিত হয়। এখানে বোনেরা মেঝেতে চাল দিয়ে বর্গক্ষেত্র আঁকে, যেখানে ভাইরা বসে। তারপর ভাইদের কপালে কুমকুম লাগায় এবং মিষ্টি খাওয়ায়। বিনিময়ে ভাইরা বোনদের উপহার দেয়।উত্তরপ্রদেশে বোনেরা ভাইদের কপালে কুমকুম টিকা লাগায় এবং কাঁচা নারকেল ও জল দেয়। পাঞ্জাবে চাল ও কেশর দিয়ে তৈরি টিকা ব্যবহার করা হয়।বিহারে ভাইফোঁটার উদযাপন একটু অন্যরকম। এখানে বোনেরা প্রথমে ভাইদের গালাগাল দেয়, যা তাদের পাপমুক্ত করার জন্য।
এরপর তারা নিজেদের জিভে কাঁটা ফুটিয়ে শাস্তি দেয়। তারপর ভাইদের টিকা ও মিষ্টি দেওয়া হয়।নেপালে এই উৎসব “ভাই তিহার” নামে পরিচিত। এখানে সাত রঙের টিকা ব্যবহার করা হয়। দশেরার পর এটি নেপালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। ত্যোহার উৎসবের তৃতীয় দিনে এটি পালিত হয়।
ভাইফোঁটা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ভাই-বোনের মধ্যকার অটুট বন্ধনের প্রতীক। এই উৎসব পারিবারিক সম্পর্ককে দৃঢ় করে এবং ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বন্ধন তৈরি করে। এটি মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে পারিবারিক সম্পর্ক কত মূল্যবান এবং তা রক্ষা করা কত গুরুত্বপূর্ণ।
জলাতঙ্ক: কুকুর কামড়ালে ২-৩ মাসের মধ্যেই প্রাণঘাতী রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে!
১. আগে থেকেই প্রস্তুতি নিন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন টিকা, মিষ্টি, উপহার ইত্যাদি সংগ্রহ করে রাখুন।
২. যদি দূরে থাকেন, তাহলে ভিডিও কলের মাধ্যমে উৎসব উদযাপন করতে পারেন।
৩. পারিবারিক ভোজের আয়োজন করুন। এটি পরিবারের সদস্যদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ দেয়।
৪. পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করুন। ছোটবেলার ছবি দেখুন বা গল্প বলুন।
৫. যদি সম্ভব হয়, দান-ধ্যান করুন।
এটি উৎসবের আনন্দ বাড়িয়ে তোলে।ভাইফোঁটা একটি আনন্দময় উৎসব যা ভাই-বোনের মধ্যকার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাকে উদযাপন করে। ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর এই উৎসব পালনের মাধ্যমে আমরা পারিবারিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে পারি। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে তুলতে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব, যাতে আমাদের ভাই-বোনের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর ও অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে।
মন্তব্য করুন