ভাইফোঁটা বাঙালি হিন্দুদের অন্যতম প্রধান উৎসব। ২০২৪ সালে এই উৎসবটি নভেম্বর মাসে পালিত হবে। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক ২০২৪ সালের ভাইফোঁটার তারিখ ও সময়সূচি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
২০২৪ সালের ভাইফোঁটার তারিখ হল ৩ নভেম্বর, রবিবার। এই দিন কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি পড়বে। দ্বিতীয়া তিথি শুরু হবে ২ নভেম্বর শনিবার রাত ৮:২১ মিনিটে এবং শেষ হবে ৩ নভেম্বর রবিবার রাত ১০:০৫ মিনিটে।
ভাইফোঁটার আগের দিন অর্থাৎ ২ নভেম্বর শনিবার প্রতিপদ তিথি পড়বে। প্রতিপদ তিথি শুরু হবে ১ নভেম্বর শুক্রবার রাত ৬:০৮ মিনিটে এবং শেষ হবে ২ নভেম্বর শনিবার রাত ৮:২১ মিনিটে।
ভাইফোঁটা ২০২৪: ৩ নভেম্বর পড়ছে ভাইফোঁটা, জেনে নিন সঠিক দিন ও শুভ মুহূর্ত
ভাইফোঁটার দিন অপরাহ্ন কাল হল সবচেয়ে শুভ সময়। ৩ নভেম্বর রবিবার অপরাহ্ন কাল শুরু হবে দুপুর ১:১৭ মিনিটে এবং শেষ হবে বিকেল ৩:৩৮ মিনিটে। এই সময়ের মধ্যে ভাইফোঁটা দেওয়া সবচেয়ে শুভ বলে মনে করা হয়।
ভাইফোঁটা উৎসবের তাৎপর্য:
ভাইফোঁটা হল ভাই-বোনের মধ্যকার অটুট বন্ধনের প্রতীক। এই দিন বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে ফোঁটা দেয় এবং তাদের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করে। পুরাণে বলা হয়েছে, যমুনা তার ভাই যমকে এই দিনে ফোঁটা দিয়েছিলেন। তাই এই দিনটিকে যম দ্বিতীয়াও বলা হয়।
বাংলায় ভাইফোঁটা উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম। এই দিন বোনেরা সকাল থেকে উপবাস করে। তারপর বিকেলে ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দেয়, আরতি করে এবং মিষ্টি মুখ করায়। বদলে ভাইরা বোনদের উপহার দেয়।
ভাইফোঁটার রীতিনীতি:
১. সকালে স্নান করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে নতুন জামাকাপড় পরতে হয়।
২. বোনেরা ভাইদের জন্য নানা রকম মিষ্টি ও খাবার তৈরি করে।
৩. বিকেলে বোনেরা ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দেয়।
৪. ফোঁটা দেওয়ার পর আরতি করা হয়।
৫. তারপর বোনেরা ভাইদের মিষ্টি মুখ করায়।
৬. ভাইরা বোনদের উপহার দেয়।
৭. সবশেষে সবাই মিলে মিষ্টিমুখ করে।
ভাইফোঁটার ইতিহাস:
পুরাণে বলা হয়েছে, যমুনা তার ভাই যমকে এই দিনে ফোঁটা দিয়েছিলেন। যম তার বোনের স্নেহে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন যে, যে বোন তার ভাইকে এই দিনে ফোঁটা দেবে, সেই ভাই দীর্ঘজীবী হবে।
আরেকটি কাহিনী অনুযায়ী, নরকাসুর বধের পর শ্রীকৃষ্ণ তার বোন সুভদ্রার কাছে গিয়েছিলেন। সুভদ্রা তাকে ফোঁটা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন। সেই থেকে এই প্রথা চালু হয়েছে বলে মনে করা হয়।
ভাইফোঁটায় বোনকে কী উপহার দেবেন? এই সেরা আইডিয়াগুলি আপনার জন্য হতে পারে
ভাইফোঁটার তাৎপর্য:
১. ভাই-বোনের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করা।
২. পারিবারিক বন্ধন মজবুত করা।
৩. ভাইদের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করা।
৪. পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করা।
৫. পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রাখা।
বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভাইফোঁটার রীতিনীতিতে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। যেমন:
কলকাতা: এখানে বোনেরা ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দেয় এবং আরতি করে। তারপর মিষ্টি মুখ করানো হয়।
উত্তরবঙ্গ: এই অঞ্চলে বোনেরা ভাইদের কপালে সিঁদুরের ফোঁটা দেয়।
পূর্ববঙ্গ: এখানে ফোঁটা দেওয়ার সময় বোনেরা ভাইদের গায়ে দুর্বাঘাস ছোঁয়ায়।
দক্ষিণবঙ্গ: এই অঞ্চলে ফোঁটা দেওয়ার পর বোনেরা ভাইদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে।
ভাইফোঁটার দিন বাঙালি পরিবারগুলিতে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। সকাল থেকেই বাড়িতে উৎসবের মেজাজ। বোনেরা ভাইদের জন্য নানা রকম মিষ্টি ও খাবার তৈরি করে। বিকেলে ফোঁটা দেওয়ার অনুষ্ঠান হয়। তারপর সবাই মিলে মিষ্টিমুখ করে। অনেক পরিবারে এই দিন পিকনিক বা বাইরে খাওয়ার আয়োজন করা হয়।
ভাইফোঁটা শুধু একটি উৎসব নয়, এটি ভাই-বোনের মধ্যকার অটুট বন্ধনের প্রতীক। এই উৎসব পালনের মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয় এবং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায়। তাই বাঙালি সমাজে ভাইফোঁটার গুরুত্ব অপরিসীম।
২০২৪ সালের ভাইফোঁটা উপলক্ষে সবাইকে আগাম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই পবিত্র উৎসবটি যথাযথভাবে পালন করি এবং আমাদের পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করি।