ভূত চতুর্দশীতে কেন ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়? জানুন, আসল রহস্য

Why 14 lamps are lit on Bhut Chaturdashi: কালী পূজার আগের রাতে বাঙালি পরিবারগুলোতে একটি অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায়। বাড়ির বিভিন্ন কোণে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। এই রীতির নাম "চোদ্দো…

Avatar

 

Why 14 lamps are lit on Bhut Chaturdashi: কালী পূজার আগের রাতে বাঙালি পরিবারগুলোতে একটি অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায়। বাড়ির বিভিন্ন কোণে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। এই রীতির নাম “চোদ্দো প্রদীপ”। কিন্তু কেন এই ১৪টি প্রদীপ? এর পিছনে লুকিয়ে আছে একটি গভীর অর্থ ও ইতিহাস।বাংলার লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, ভূত চতুর্দশীর রাতে পূর্বপুরুষদের আত্মা পৃথিবীতে নেমে আসে। তাদের স্বাগত জানাতে এবং পথ দেখাতে এই ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রতিটি প্রদীপ ১৪ পুরুষের প্রতীক। এই রীতি “চোদ্দো পুরুষের চোদ্দো প্রদীপ” নামেও পরিচিত।

এই প্রথার পিছনে আরও কিছু বিশ্বাস রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এই রাতে অশুভ শক্তি সক্রিয় থাকে। তাই ১৪টি প্রদীপ জ্বালিয়ে অশুভ আত্মাদের তাড়ানো হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, এই প্রদীপগুলো যমরাজকে উদ্দেশ্য করে জ্বালানো হয়। যমরাজ দেখতে পান কারা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করছে।
ভূত চতুর্দশী ২০২৪: জেনে নিন কবে খাবেন চোদ্দ শাক, কখন জ্বালাবেন চোদ্দ প্রদীপ

ভূত চতুর্দশীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি হল “চোদ্দো শাক” খাওয়া। ১৪ রকমের শাক-সবজি দিয়ে একটি তরকারি রান্না করা হয়। বিশ্বাস করা হয় এই শাক খেলে শরীর থেকে অশুভ শক্তি দূর হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।এই উৎসবের সময় বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে প্রদীপের বদলে কাঁঠালের পাতা ব্যবহার করা হয়। এভাবে ঐতিহ্য বিভিন্ন রূপে টিকে থাকে।ভূত চতুর্দশীর রাতে অনেক জায়গায় তান্ত্রিক পূজাও হয়। অঘোরী সাধুরা শ্মশানে জড়ো হয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান করেন। কেউ কেউ মৃত দেহের অস্থি সংগ্রহ করে তান্ত্রিক ক্রিয়ায় ব্যবহার করেন।

গোয়াতে এই দিনটি “নরকাসুর বধ” নামে পালিত হয়। সেখানে নরকাসুরের কুশপুতুল পুড়িয়ে উৎসব করা হয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুর নামক এক অসুরকে বধ করেছিলেন।গুজরাতে “কাকলাত কাঢবো” নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। সন্ধ্যায় মহিলারা গ্রামের চত্বরে বা বাড়ির কোণায় জল ঢেলে একটি বৃত্ত আঁকেন। সেখানে কালো ছোলার বড়া রেখে আসেন। এটি অকাল মৃত্যুর শিকার হওয়া আত্মাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়।

ভূত চতুর্দশী শুধু একটি উৎসব নয়, এটি জীবন-মৃত্যুর চক্রের প্রতীক। এই দিনে আমরা অতীতকে স্মরণ করি, পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানাই। সাথে সাথে জীবনের অনিশ্চয়তা ও মৃত্যুর অনিবার্যতা সম্পর্কে সচেতন হই।বর্তমান সময়ে অনেকেই এই রীতির গভীর অর্থ না বুঝে কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করেন। কিন্তু এর পিছনের দর্শন ও ইতিহাস জানলে আমরা নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারব।ভূত চতুর্দশীর রীতিগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, জীবন ও মৃত্যু পরস্পর সম্পর্কিত। আমরা যেমন আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করি, তেমনি একদিন আমাদেরও কেউ স্মরণ করবে। এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ঐতিহ্য বয়ে চলে।
জন্মদিনের কেকের রহস্যময় ইতিহাস: প্রাচীন মিশর থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগেও এই প্রাচীন রীতি টিকে আছে। এটি প্রমাণ করে যে, মানুষের মনে অতীন্দ্রিয় বিষয়ে কৌতূহল চিরকালই থাকবে। তবে এখন অনেকে এই রীতিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছেন। কেউ কেউ এটিকে পরিবেশ সচেতনতার সাথে যুক্ত করছেন। যেমন, প্রদীপের বদলে সোলার লাইট ব্যবহার করা।ভূত চতুর্দশীর মতো উৎসবগুলো আমাদের সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে। পরিবারের সবাই মিলে প্রদীপ জ্বালানো, একসাথে বসে চোদ্দো শাক খাওয়া – এসব ঘটনা পারিবারিক সম্পর্ককে আরও গভীর করে।এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা কোথা থেকে এসেছি। আমাদের শিকড় কোথায়। এটি আমাদের ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত রাখে। বর্তমান প্রজন্মকে অতীতের সাথে সংযুক্ত করে।

তবে এই রীতির পিছনে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটি কেবল একটি লোকবিশ্বাস ও ঐতিহ্য। তাই এর প্রতি অন্ধ বিশ্বাস না রেখে এর সাংস্কৃতিক মূল্য বুঝতে হবে। আমাদের উচিত এই রীতির মাধ্যমে অতীতকে শ্রদ্ধা জানানো, কিন্তু সেই সাথে বর্তমানকে গুরুত্ব দেওয়া।সারকথা, ভূত চতুর্দশীতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানোর রীতি বাঙালি সংস্কৃতির একটি অনন্য দিক। এটি আমাদের অতীতের সাথে যুক্ত করে, পূর্বপুরুষদের স্মরণ করায়। এই রীতি পালনের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে জীবন্ত রাখি। তবে এর পিছনের অর্থ ও তাৎপর্য বুঝে পালন করলে তা আরও অর্থবহ হয়ে ওঠে।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম