ভোটের আগে বড় চমক! বিহারের সব পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দিচ্ছেন নীতীশ, চালু হল নতুন প্রকল্প

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিধানসভা নির্বাচনের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা চালু করেছে বিহার সরকার। এই যোজনার মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি…

Avatar

 

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিধানসভা নির্বাচনের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা চালু করেছে বিহার সরকার। এই যোজনার মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি পরিবারের একজন নারী ১০ হাজার টাকা প্রাথমিক সহায়তা পাবেন নিজের পছন্দের কাজ শুরু করার জন্য। কার্যকর রোজগার শুরুর ছয় মাস পর মূল্যায়নের ভিত্তিতে আরও ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত সহায়তা প্রদান করা হবে।

গত ২৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখে বিহার সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই যোজনা চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকেই যোগ্য আবেদনকারী নারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির টাকা পাঠানো শুরু হবে। প্রধান সচিব অমৃত লাল মীনা জানিয়েছেন, গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগ এই যোজনার নোডাল এজেন্সি হিসেবে কাজ করবে এবং প্রয়োজনে নগর উন্নয়ন ও গৃহায়ণ বিভাগ সহায়তা প্রদান করবে।

দুর্বার হয়ে উঠতে পারেন নারীরা

এই যোজনার মূল উদ্দেশ্য হলো নারীদের স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভর করে তোলা। যেকোনো পরিবারের একজন নারী, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই যোজনার আবেদন করতে পারবেন। এর জন্য কোনো বিশেষ যোগ্যতার শর্ত রাখা হয়নি। প্রাপ্ত টাকা নারীরা তাদের পছন্দের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র শিল্প, হস্তশিল্প, দুগ্ধ ও পোল্ট্রি চাষ, কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ এবং খুচরা ব্যবসা।

বিহার সরকার নারীদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের জন্য গ্রাম থেকে শহর সব জায়গায় হাট বাজার গড়ে তুলবে। এতে নারীরা তাদের তৈরি পণ্য সরাসরি বিক্রয় করতে পারবেন এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের উপর নির্ভরতা কমবে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আশা প্রকাশ করেছেন যে এই যোজনা নারীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজ্যের মধ্যেই ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। ফলে মানুষের বাধ্য হয়ে কাজের সন্ধানে রাজ্যের বাইরে যেতে হবে না।

জীবিকা সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন

এই যোজনা বাস্তবায়নে জীবিকা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। বিহার গ্রামীণ জীবিকা উন্নয়ন সমিতি (জীবিকা) ইতিমধ্যে রাজ্যের নারী ক্ষমতায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে ১১ লাখ স্বনির্ভর দল গঠিত হয়েছে যেখানে ১ কোটি ৪০ লাখ নারী সদস্য রয়েছে। এই বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নতুন যোজনা সহজেই পৌঁছে যেতে পারবে গ্রামের প্রান্তিক নারীদের কাছে।

জীবিকার সাফল্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। সম্প্রতি কেনিয়ার ১৭ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল নালন্দা জেলা সফর করে জীবিকার নারী ক্ষমতায়ন মডেল পর্যালোচনা করেছে। কেনিয়ার প্রতিনিধিরা জীবিকা দিদিদের হাসিমুখ দেখেই এই প্রকল্পের সাফল্য অনুমান করতে পারেন বলে জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নির্বাচনী গুরুত্ব

এই যোজনা ঘোষণার সময়টি রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। বিহারে ২০২৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের এই ঘোষণা নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তবে নীতীশ কুমারের জন্য আসন্ন নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, তেজস্বী যাদব (৩৮.৩%) মুখ্যমন্ত্রী পদে নীতীশ কুমারের (৩৫.৬%) চেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এনডিএ ১৩৬ আসন পেতে পারে বলে পূর্বাভাস থাকলেও জেডিইউর আসন সংখ্যা ৪৩ থেকে কমে ৩১ হতে পারে। এ কারণে নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এই যোজনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

অভূতপূর্ব সুবিধা ও প্রভাব

মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এই যোজনাকে ‘অভূতপূর্ব’ এবং ‘সুদূরপ্রসারী ফলাফলসহ’ বলে অভিহিত করেছেন। তার দাবি অনুযায়ী, ২০০৫ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই তারা নারী ক্ষমতায়নে বড় আকারে কাজ করে আসছে। ২০০৬ সালে পঞ্চায়েতি রাজে নারীদের জন্য ৫০% সংরক্ষণ এবং ২০০৭ সালে সব পৌর সংস্থায় একই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বর্তমানে পঞ্চায়েত ও পৌর সংস্থার ৫৭% পদে নারীরা প্রতিনিধিত্ব করছেন।

এছাড়া ২০১৬ সালে নারীদের দাবিতেই রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সব পঞ্চায়েতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল, কলেজ এবং মেয়েদের জন্য ইউনিফর্ম, বৃত্তি ও সাইকেল স্কিম চালু রয়েছে। বর্তমানে পেনশন স্কিমের আওতায় ১ কোটি ১২ লাখ নারী উপকৃত হচ্ছেন।

আর্থিক সহায়তার বিশদ বিবরণ

এই যোজনার অধীনে প্রদত্ত অর্থ ফেরতযোগ্য নয়। প্রধান সচিব স্পষ্ট করেছেন যে এটি একটি অনুদান বা আর্থিক সহায়তা, ঋণ নয়। প্রাথমিক ১০ হাজার টাকা পাওয়ার ছয় মাস পর নারী উদ্যোক্তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে। সে অনুযায়ী প্রয়োজন ও সক্ষমতার ভিত্তিতে আরও ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হবে।

বিহারে প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ পরিবার রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রতিটি পরিবারের একজন নারী এই যোজনার সুবিধা পেলে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (ডিবিটি) পদ্ধতিতে সরাসরি নারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হবে। এতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতির সুযোগ কমবে।

দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক প্রভাব

মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনার প্রভাব শুধু আর্থিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এই যোজনা নারীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, পারিবারিক আয় বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। রাজ্যের মধ্যেই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হলে বাধ্যতামূলক অভিবাসন কমবে। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য এটি একটি বড় স্বস্তির বিষয় হবে।

গত ২০ বছরে বিহারে নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে যে ভিত্তি তৈরি হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় এই যোজনা আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। মহিলা সংবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যজুড়ে ৭০ হাজার নারী গোষ্ঠীর সাথে সরকারের মতবিনিময়ের ভিত্তিতেই এই যোজনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

বিহারের এই উদ্যোগ ভারতের অন্যান্য রাজ্যের জন্যও অনুপ্রেরণা হতে পারে। নারী ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনের ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে এই যোজনার বাস্তবায়ন শুরু হলে এর প্রকৃত প্রভাব বোঝা যাবে।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম