What is bilateral pneumonia: নিউমোনিয়া একটি গুরুতর ফুসফুসের সংক্রমণ যা জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। যখন এই সংক্রমণ উভয় ফুসফুসকে আক্রমণ করে, তখন তাকে বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া বলা হয়। এই অবস্থায় ফুসফুসের বায়ু থলিগুলি (অ্যালভিওলি) প্রদাহযুক্ত হয়ে যায় এবং তরল বা পুঁজে পূর্ণ হয়ে পড়ে, যা শ্বাস-প্রশ্বাসে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণ নিউমোনিয়ার তুলনায় বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া অধিক গুরুতর হয় কারণ এটি উভয় ফুসফুসকেই প্রভাবিত করে, যা অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতাকে আরও বেশি বিঘ্নিত করে।
বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া কী?
বাইল্যাটারাল শব্দের অর্থ “উভয় পাশে” বা “দুই দিকে”। বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া হল একটি ফুসফুসের সংক্রমণ যা উভয় ফুসফুসকেই আক্রান্ত করে8। সাধারণ নিউমোনিয়া যেখানে কেবল একটি ফুসফুস বা ফুসফুসের একটি অংশ প্রভাবিত হয়, বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া উভয় ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, যা শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে।
নিউমোনিয়ার বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে, যেগুলি ফুসফুসের কোন অংশকে প্রভাবিত করে তার উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়:
-
ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া: এটি ফুসফুসের উভয় পাশে আক্রমণ করতে পারে এবং সাধারণত ব্রঙ্কি (শ্বাসনালীর শাখাগুলি) বা তার আশেপাশে দেখা যায়।
-
লোবার নিউমোনিয়া: এটি ফুসফুসের এক বা একাধিক লোব (অংশ) কে প্রভাবিত করে।
যখন এই সংক্রমণগুলি উভয় ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া বলা হয়।
নিউমোনিয়ার কারণসমূহ
নিউমোনিয়া বিভিন্ন ধরনের জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট হতে পারে। এখানে প্রধান কারণগুলি উল্লেখ করা হলো:
ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ নিউমোনিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। যেসব ব্যাকটেরিয়া নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে:
-
স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া (সবচেয়ে সাধারণ কারণ)
-
মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া
-
হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা
-
লেজিওনেলা নিউমোফিলা
এই ধরনের নিউমোনিয়া সাধারণত অধিক তীব্র উপসর্গ সৃষ্টি করে এবং চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়।
ভাইরাল নিউমোনিয়া
বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ফুসফুসে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে:
-
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (ফ্লু)
-
রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস (RSV)
-
রাইনোভাইরাস (সাধারণ সর্দি)
-
হিউম্যান প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
-
হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস
-
করোনাভাইরাস
ভাইরাল নিউমোনিয়া সাধারণত ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার তুলনায় হালকা হয় এবং চিকিৎসা ছাড়াই 1-3 সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে, ভাইরাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ছত্রাকজনিত নিউমোনিয়া
মাটি বা পাখির বিষ্ঠা থেকে ছড়ানো ছত্রাকের কারণে নিউমোনিয়া হতে পারে। এগুলো সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল ব্যক্তিদের আক্রমণ করে। ছত্রাকজনিত নিউমোনিয়া অন্য একজন ব্যক্তি থেকে সংক্রমিত হয় না, বরং পরিবেশ থেকে সরাসরি সংক্রমণ ঘটে।
বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়ার উপসর্গসমূহ
বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়ার উপসর্গ সাধারণ নিউমোনিয়ার মতোই, তবে কিছু ক্ষেত্রে অধিক তীব্র হতে পারে কারণ এটি উভয় ফুসফুসকেই প্রভাবিত করে। উপসর্গগুলি আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং সংক্রমণের জীবাণুর ধরণের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হতে পারে।
সাধারণ উপসর্গ
-
জ্বর, সর্দি এবং ঘাম (উচ্চ শতাংশে দেখা যায়, প্রায় 71-75%)
-
কাশি (সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ, প্রায় 79-91% রোগীতে দেখা যায়)
-
বুকে ব্যথা, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে বাড়তে পারে
-
শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস
-
প্রচণ্ড ক্লান্তি (প্রায় 90% রোগীতে দেখা যায়)
-
মাথাব্যথা
-
মাংসপেশীতে ব্যথা
-
বমি বমি ভাব
নবজাতক এবং শিশুদের উপসর্গ
শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার উপসর্গ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে:
-
দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস
-
সাঁসাঁ করিয়া নিঃশ্বাস ফেলা
-
ঘোঁত ঘোঁত শব্দ করা
-
বিরক্ত ও অলস আচরণ
-
খাবার গ্রহণে অনিচ্ছা
গুরুতর উপসর্গ
বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া যখন অধিক গুরুতর রূপ নেয়, তখন নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে:
-
অত্যধিক শ্বাসকষ্ট
-
নীলাভ ত্বক (সায়ানোসিস) – অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে
-
বিভ্রান্তি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
-
অত্যন্ত নিম্ন রক্তচাপ
কারা বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে?
নিউমোনিয়া যে কাউকে আক্রমণ করতে পারে, তবে কিছু ব্যক্তি বিশেষ বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। এই ঝুঁকির কারণগুলি নিম্নরূপ:
বয়স সম্পর্কিত ঝুঁকি
-
2 বছরের কম বয়সের শিশু: তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পূর্ণ বিকশিত না হওয়ার কারণ
-
65 বছরের বেশি বয়সের বৃদ্ধ ব্যক্তি: বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে
স্বাস্থ্যগত অবস্থা
-
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: HIV/AIDS, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, কেমোথেরাপি বা দীর্ঘকালীন স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে
-
ক্রনিক ফুসফুসের রোগ: COPD, অ্যাজমা, এম্ফিসেমা
-
হৃদরোগ: কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওর
-
ডায়াবেটিস
-
ধূমপান
-
অ্যালকোহল অপব্যবহার
পরিবেশগত কারণ
-
হাসপাতালে থাকা রোগী: হাসপাতাল-সংক্রমিত নিউমোনিয়া অধিক গুরুতর হতে পারে
-
নার্সিং হোমে বসবাসকারী ব্যক্তি
-
সাম্প্রতিক ভ্রমণ: কিছু ক্ষেত্রে, বিভিন্ন দেশে ভ্রমণকারীরা এমন ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসতে পারেন যা তাদের নিজ দেশে কম দেখা যায়
বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়ার জটিলতা
বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া উভয় ফুসফুসকে প্রভাবিত করে বলে এর সম্ভাব্য জটিলতাগুলি আরও গুরুতর হতে পারে:
রেসপিরেটরি ফেইলিওর
উভয় ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে, রোগী পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে অসমর্থ হতে পারেন। চরম ক্ষেত্রে, কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হতে পারে।
ব্যাকটেরিয়ার রক্তপ্রবাহে ছড়িয়ে পড়া
নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ফুসফুস থেকে রক্ত প্রবাহে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা সেপসিস বা সেপটিক শক সৃষ্টি করতে পারে। এটি একটি জীবন-হুমকি অবস্থা যা নিম্ন রক্তচাপ ও অঙ্গ ব্যর্থতা ঘটাতে পারে।
প্লুরাল এফিউশন
প্লুরাল এফিউশন হল ফুসফুসের বাইরের আবরণের মধ্যে তরল জমা হওয়া, যা শ্বাস-প্রশ্বাসে আরও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ফুসফুসের ফোড়া
কিছু ক্ষেত্রে, ফুসফুসে পুঁজ-ভরা গহ্বর তৈরি হতে পারে, যা চিকিত্সা বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিষ্কাশন করা প্রয়োজন।
দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব
গুরুতর বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া থেকে সেরে ওঠার পরও, কিছু রোগীর ফুসফুসে স্থায়ী ক্ষতি থাকতে পারে, যা দীর্ঘকালীন শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া রোগ নির্ণয়
বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক সাধারণত নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করেন:
-
শারীরিক পরীক্ষা: শ্বাসের শব্দ শোনা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার পরীক্ষা করা
-
বুকের এক্স-রে: উভয় ফুসফুসে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা
-
রক্ত পরীক্ষা: সংক্রমণের উপস্থিতি এবং তীব্রতা নির্ধারণ করা
-
কফ পরীক্ষা: সংক্রমণের কারণ জীবাণু নির্ধারণ করা
-
সিটি স্ক্যান: অধিক বিস্তারিত ছবি এবং নিউমোনিয়ার বিস্তার নির্ধারণ করা
বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়ার চিকিৎসা
বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়ার চিকিৎসা সংক্রমণের কারণ, রোগীর বয়স এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হতে পারে:
ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার চিকিৎসা
-
অ্যান্টিবায়োটিক: সংক্রমণ দূর করার প্রধান উপায়
-
পুরো কোর্স সম্পূর্ণ করা গুরুত্বপূর্ণ, যদিও উপসর্গ আগেই উপশম হয়ে যায়
ভাইরাল নিউমোনিয়ার চিকিৎসা
-
হালকা ক্ষেত্রে, বিশ্রাম ও প্রচুর তরল পান করা
-
গুরুতর ক্ষেত্রে, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে
-
ভাইরাল নিউমোনিয়া সাধারণত 1-3 সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়
সহায়ক চিকিৎসা
-
অক্সিজেন থেরাপি: যদি রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে
-
ভেন্টিলেটর: গুরুতর শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে
-
জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ
-
প্রচুর তরল এবং বিশ্রাম
বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া প্রতিরোধ
নিউমোনিয়া প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
-
টিকাকরণ: নিউমোকক্কাল এবং ফ্লু টিকা নেওয়া
-
হাত ধোয়া: নিয়মিত এবং সঠিকভাবে হাত ধোয়া
-
ধূমপান পরিহার করা: ধূমপান ফুসফুসকে দুর্বল করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়
-
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম
-
রোগীদের থেকে দূরে থাকা: সর্দি, ফ্লু বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা
কখন চিকিৎসকের সাহায্য নিবেন
নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত:
-
38°C (100.4°F) এর বেশি জ্বর
-
প্রচণ্ড কাশি, বিশেষ করে কফ বা রক্ত থাকলে
-
গুরুতর শ্বাসকষ্ট
-
বুকে তীব্র ব্যথা
-
বিভ্রান্তি বা অজ্ঞান হওয়া
-
নীলাভ ত্বক বা ঠোঁট
বিশেষ করে যদি আপনি 65 বছরের বেশি বয়সী হন, ছোট শিশু হয়, বা কোনও দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন (যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ), তাহলে এই উপসর্গগুলিকে আরও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করুন।
বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া একটি গুরুতর ফুসফুসের সংক্রমণ যা উভয় ফুসফুসকে আক্রমণ করে। সময়মত এর সনাক্তকরণ, সঠিক চিকিৎসা এবং যথাযথ যত্ন গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় 9 লক্ষ 20 হাজার শিশু ও বাচ্চা নিউমোনিয়ায় মারা যায়, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া এবং সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে অবস্থিত আফ্রিকা অঞ্চলে। যদিও এটি একটি গুরুতর অবস্থা, তবে আগাম নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা দিয়ে অধিকাংশ রোগীই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।নিজের স্বাস্থ্য এবং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষায় সতর্ক থাকুন, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন এবং কোনও সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসক পরামর্শ নিন।