Biofuel production process: বায়োফুয়েল হল একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি যা জৈব পদার্থ থেকে তৈরি করা হয়। এটি পরিবেশবান্ধব এবং জীবাশ্ম জ্বালানির একটি বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বায়োফুয়েল তৈরির প্রক্রিয়াটি জটিল এবং বিভিন্ন ধাপে সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ, কৃষিজাত পণ্য, বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদি থেকে জ্বালানি উৎপাদন করা হয়।বায়োফুয়েল উৎপাদনের প্রথম ধাপ হল উপযুক্ত কাঁচামাল নির্বাচন করা। সাধারণত শস্য, তেলবীজ, শর্করাযুক্ত ফসল, সেলুলোজ সমৃদ্ধ উদ্ভিদ, বর্জ্য তেল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এরপর নির্বাচিত কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এই প্রক্রিয়াজাতকরণের ধরন নির্ভর করে কাঁচামালের প্রকৃতির উপর।শর্করা বা স্টার্চযুক্ত ফসল থেকে বায়োইথানল তৈরি করা হয় কিণ্বন প্রক্রিয়ায়।
বায়ুশক্তির মাধ্যমে নতুন যুগের কার্গো জাহাজ চালানোর উদ্যোগ।
এই প্রক্রিয়ায় ইস্ট ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে শর্করাকে ইথানলে রূপান্তরিত করা হয়। প্রথমে ফসলের স্টার্চকে এনজাইম দিয়ে শর্করায় পরিণত করা হয়। তারপর ইস্ট দিয়ে কিণ্বন করে ইথানল উৎপাদন করা হয়। পরিশেষে পাতন প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধ ইথানল পৃথক করা হয়।তেলবীজ থেকে বায়োডিজেল তৈরি করা হয় ট্রান্সএস্টেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায়। এই প্রক্রিয়ায় উদ্ভিজ্জ তেলকে মিথানল বা ইথানলের সাথে বিক্রিয়া করিয়ে বায়োডিজেল উৎপাদন করা হয়। প্রথমে তেল থেকে অপ্রয়োজনীয় উপাদান পৃথক করা হয়। তারপর তেলকে অ্যালকোহল ও ক্যাটালিস্টের সাথে মিশিয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় বিক্রিয়া করানো হয়। এতে বায়োডিজেল ও গ্লিসারিন উৎপন্ন হয়। পরে বায়োডিজেলকে পরিশোধন করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়।
সেলুলোজ সমৃদ্ধ উদ্ভিদ থেকে বায়োফুয়েল তৈরির প্রক্রিয়াটি অপেক্ষাকৃত জটিল। এক্ষেত্রে প্রথমে উদ্ভিদের কঠিন কাঠামোকে ভেঙে ফেলতে হয়। এজন্য উচ্চ তাপমাত্রা বা রাসায়নিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। তারপর এনজাইম দিয়ে সেলুলোজকে শর্করায় পরিণত করা হয়। এরপর কিণ্বন প্রক্রিয়ায় শর্করা থেকে ইথানল উৎপাদন করা হয়।বর্জ্য তেল থেকেও বায়োডিজেল তৈরি করা যায়। এক্ষেত্রে প্রথমে তেল থেকে ময়লা ও জল পৃথক করতে হয়। তারপর ট্রান্সএস্টেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় বায়োডিজেল উৎপাদন করা হয়। বর্জ্য তেল থেকে বায়োডিজেল তৈরি করা পরিবেশবান্ধব ও কম খরচের প্রক্রিয়া।শৈবাল থেকেও বায়োফুয়েল উৎপাদন করা যায়। এটি তৃতীয় প্রজন্মের বায়োফুয়েল হিসেবে পরিচিত। শৈবাল থেকে তেল নিষ্কাশন করে তা থেকে বায়োডিজেল তৈরি করা হয়। এছাড়া শৈবালের কোষ থেকে সরাসরি ইথানলও উৎপাদন করা যায়।
শৈবাল থেকে বায়োফুয়েল উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি এখনও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে।বায়োফুয়েল উৎপাদনের পর তা পরিশোধন ও মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এরপর বিভিন্ন অনুপাতে পেট্রোলিয়ামজাত জ্বালানির সাথে মিশ্রিত করে ব্যবহার করা হয়। যেমন ১০% ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল E10 নামে পরিচিত। একইভাবে বিভিন্ন অনুপাতে বায়োডিজেল মিশ্রিত ডিজেল ব্যবহৃত হয়।বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বায়োফুয়েল উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালে বিশ্বে মোট বায়োফুয়েল উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৯০ বিলিয়ন লিটার। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়া বায়োফুয়েল উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে ১,৭৯৫ পেটাজুল বায়োফুয়েল উৎপাদিত হয়েছে। ব্রাজিলে উৎপাদন হয়েছে ১,০১৬ পেটাজুল এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৪৩৩ পেটাজুল।বায়োফুয়েল উৎপাদনের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি হওয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমায়। বায়োফুয়েল ব্যবহারে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন কম হয়। এছাড়া এটি কৃষি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।
শিল্পায়নের স্বপ্ন: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা
তবে বায়োফুয়েল উৎপাদনে খাদ্য ফসলের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে। এজন্য অ-খাদ্য উৎস থেকে বায়োফুয়েল উৎপাদনের প্রযুক্তি উন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে।সামগ্রিকভাবে, বায়োফুয়েল উৎপাদন প্রক্রিয়া ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও দক্ষ ও টেকসই উপায়ে বায়োফুয়েল তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। ভবিষ্যতে বায়োফুয়েল জীবাশ্ম জ্বালানির একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।