E-passport Bangladesh city list: ভারত সরকার দেশের ভ্রমণ ব্যবস্থাকে আধুনিক ও নিরাপদ করতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ভারত বায়োমেট্রিক চিপ-ভিত্তিক ই-পাসপোর্ট চালু করেছে যা দেশের ১২টি শহরে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে শুরু হয়েছে। এই নতুন ই-পাসপোর্টগুলি আরএফআইডি (RFID) চিপ এবং অ্যান্টেনা সহ নির্মিত, যা ব্যক্তিগত তথ্য দ্বিস্তরীয় সুরক্ষা প্রদান করে – একটি মুদ্রিত আকারে এবং অন্যটি চিপের মধ্যে এনক্রিপ্টেড ডেটা হিসাবে। এই উদ্যোগ ভারতীয় নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ, নিরাপদ এবং দক্ষ করে তুলবে।
India Rolls Out Biometric e-Passports: ভারতের ডিজিটাল যাত্রার নতুন অধ্যায়
পাসপোর্ট সেবা প্রোগ্রাম ভার্সন ২.০ এর অধীনে ভারত সরকার ২০২৪ সালের এপ্রিল ১ তারিখে চিপ-ভিত্তিক ই-পাসপোর্টের পাইলট প্রকল্প চালু করেছে। এই ই-পাসপোর্টগুলি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভ্রমণ নথিপত্রকে আরও নিরাপদ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব করে তোলার উদ্যোগের অংশ। বর্তমানে দেশের ১২টি শহরে এই ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে চেন্নাই, জয়পুর, হায়দরাবাদ, নাগপুর, অমৃতসর, গোয়া, ভুবনেশ্বর, জম্মু, শিমলা, রায়পুর, সুরাট এবং রাঁচি।
ই-পাসপোর্ট একটি সংযুক্ত কাগজ ও ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট, যার মধ্যে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID) চিপ এবং অ্যান্টেনা অন্তর্নিহিত রয়েছে। এই নতুন পাসপোর্টের প্রধান সুবিধা হল ডেটার অখণ্ডতা বজায় রাখার ক্ষমতা। যেহেতু ই-পাসপোর্টে ডেটা বুকলেটে মুদ্রিত আকারে এবং চিপে এনক্রিপ্ট করা আছে, তাই এটি জালিয়াতি করা কঠিন করে তোলে।
ই-পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধাসমূহ
অন্তর্নিহিত RFID চিপ ও অ্যান্টেনা: নতুন ই-পাসপোর্টে একটি অত্যাধুনিক RFID চিপ অন্তর্নিহিত রয়েছে যা ব্যক্তিগত তথ্য এবং বায়োমেট্রিক ডেটা নিরাপদে সংরক্ষণ করে। এই চিপটি আন্তর্জাতিক নাগরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO) মান অনুসারে ডিজাইন করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং সম্মানিত।
উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য: ই-পাসপোর্টে ডেটা দ্বিস্তরীয় সুরক্ষিত – মুদ্রিত পৃষ্ঠায় এবং চিপে এনক্রিপ্টেড। এই দ্বিমুখী সুরক্ষা জালিয়াতি এবং ডেটা পরিবর্তন কঠিন করে তোলে। এটি পাসপোর্ট জালিয়াতি এবং পরিচয় চুরি প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।
স্ক্যানযোগ্য বারকোড: নতুন ই-পাসপোর্টে স্ক্যানযোগ্য বারকোড রয়েছে যা ইমিগ্রেশন অফিসারদের আবাসিক ঠিকানায় ডিজিটাল অ্যাক্সেস প্রদান করে। এটি ইমিগ্রেশন পরীক্ষা প্রক্রিয়াকে দ্রুত এবং সহজ করে তোলে।
দ্রুত ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স: বিশ্বজুড়ে বিমানবন্দরে দ্রুত ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স সম্ভব হবে, যা ভারতীয় পর্যটক এবং ব্যবসায়ীদের জন্য ভ্রমণ অভিজ্ঞতা উন্নত করবে। ই-পাসপোর্ট ধারকরা অটোমেটিক ই-গেটগুলি ব্যবহার করতে পারবেন, যা বিমানবন্দরে অপেক্ষার সময় কমাবে।
আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্য: এই ই-পাসপোর্টগুলি আন্তর্জাতিক নাগরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO) মান অনুসরণ করে, যা বিশ্বজুড়ে ই-পাসপোর্ট যাচাইকরণ সিস্টেম এবং স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সুবিধার সাথে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারঅপারেবিলিটি সক্ষম করে।
India Rolls Out Biometric e-Passports: কোন শহরগুলি তালিকায় রয়েছে?
বর্তমানে ১২টি শহরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলি থেকে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে। নিম্নলিখিত শহরগুলি এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত:
- চেন্নাই
- জয়পুর
- হায়দরাবাদ
- নাগপুর
- অমৃতসর
- গোয়া
- ভুবনেশ্বর
- জম্মু
- শিমলা
- রায়পুর
- সুরাট
- রাঁচি
তামিলনাড়ুতে, ই-পাসপোর্ট ইস্যু ২০২৫ সালের ৩ মার্চ থেকে চেন্নাই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে শুরু হয়েছে। ২০২৫ সালের ২২ মার্চ পর্যন্ত, তামিলনাড়ুতে মোট ২০,৭২৯টি ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসে ভারত সরকার সারা দেশে এই ই-পাসপোর্ট চালু করার পরিকল্পনা করছে।
ভারতের ই-পাসপোর্ট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা
পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়ন: ভারত সরকার একটি পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতিতে ই-পাসপোর্ট বাস্তবায়ন করছে। প্রথম পর্যায়ে ১২টি শহরে পাইলট প্রকল্প চালু করা হয়েছে, এবং ২০২৫ সালের মে মাসে সারা দেশে এর সম্প্রসারণ করা হবে।
অবকাঠামো উন্নয়ন: সরকার সারা দেশে পাসপোর্ট অবকাঠামো আপগ্রেড করছে। প্রিন্টিং ক্ষমতা বাড়ানো, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলি আধুনিকীকরণ, এবং নিরাপদ পরিচয় যাচাইকরণের জন্য উন্নত বায়োমেট্রিক সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে।
প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা: সরকার কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছে এবং ই-পাসপোর্টের সুবিধা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছে।
India Rolls Out Biometric e-Passports: ই-পাসপোর্টের প্রভাব ও নতুন পাসপোর্ট নিয়ম ২০২৫
ভ্রমণ সহজতর করা: ই-পাসপোর্ট ভারতীয় নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণকে সহজতর করবে। স্বয়ংক্রিয় পরিচয় যাচাইকরণ প্রক্রিয়াগুলি সক্ষম করে এবং ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের ইন্টারফেস সহজ করে তুলবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন: এই উদ্যোগ ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং অন্যান্য উন্নত দেশগুলির পাশাপাশি রাখবে, যারা ইতিমধ্যে উন্নত ই-পাসপোর্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
নতুন পাসপোর্ট নিয়ম ২০২৫:
- জন্ম শংসাপত্র বাধ্যতামূলক: ২০২৩ সালের অক্টোবর ১ তারিখের পরে জন্মগ্রহণকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক।
- আবাসিক ঠিকানা ডিজিটালি এমবেডেড: আর শেষ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত হবে না।
- পিতামাতার নাম অপসারণ: ব্যক্তিগত তথ্য এখন কেবল অত্যাবশ্যকীয় তথ্যে সীমাবদ্ধ।
ই-পাসপোর্টের ডেটা সুরক্ষা এবং গোপনীয়তা
ই-পাসপোর্টে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চিপে সংরক্ষিত ডেটা উন্নত এনক্রিপশন প্রযুক্তি দ্বারা সুরক্ষিত, যা অননুমোদিত অ্যাক্সেস প্রতিরোধ করে। এছাড়াও, চিপে সংরক্ষিত তথ্য কেবল অনুমোদিত রিডারগুলি দ্বারাই পড়া যেতে পারে, যা আরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
বিদেশ মন্ত্রক (MEA) এবং ইন্ডিয়া সিকিউরিটি প্রেস (ISP) নাসিক একসাথে কাজ করছে ই-পাসপোর্টের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য বাস্তবায়ন করতে। তারা আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করছে এবং নিরাপত্তা পরীক্ষা করছে যাতে ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
India Rolls Out Biometric e-Passports: আবেদন প্রক্রিয়া
ই-পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া বর্তমান পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ার অনুরূপ থাকবে। আবেদনকারীদের এখনও আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
- অনলাইন আবেদন পূরণ
- অ্যাপয়েন্টমেন্ট শিডিউলিং
- নিকটস্থ পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র (PSK) বা পোস্ট অফিস পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র (POPSK) এ নথি যাচাইকরণ
- বায়োমেট্রিক ডেটা ক্যাপচার
- আবেদন প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদন
- ই-পাসপোর্ট বিতরণ
আপনি যদি ১২টি শহরের মধ্যে একটিতে থাকেন, তাহলে আপনি এখনই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন। অন্যথায়, ২০২৫ সালের মে মাসে সারা দেশে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার পর আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
ই-পাসপোর্টের ভবিষ্যৎ এবং সম্ভাবনা
ই-পাসপোর্টের চালু হওয়া ভারতের ডিজিটাল ভারত উদ্যোগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এটি দেশের পাসপোর্ট ব্যবস্থাকে বিশ্ব মানের সাথে সমান করার লক্ষ্য রাখে। এটি বিশেষভাবে ঘন ঘন উড়োজাহাজ যাত্রী, NRI, আন্তর্জাতিক ছাত্র, এবং বিদেশে কর্মরত পেশাদারদের জন্য প্রাসঙ্গিক।
ভবিষ্যতে, ই-পাসপোর্ট নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলি আনতে পারে:
- আন্তর্জাতিক সীমানায় ভ্রমণকারীদের জন্য অপেক্ষার সময় কমিয়ে আনা
- ভিসা ডেস্কে প্রক্রিয়া দ্রুততর করা
- জালিয়াতি এবং পরিচয় চুরি কমানো
- আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য ভ্রমণ অভিজ্ঞতা উন্নত করা
India Rolls Out Biometric e-Passports in 12 Cities হল ভারতের ডিজিটাল রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই উদ্যোগ ভারতীয় নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণকে আরও সহজ, নিরাপদ এবং কার্যকর করে তুলবে। বর্তমানে ১২টি শহরে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে চালু হওয়া এই ই-পাসপোর্ট ২০২৫ সালের মে মাসে সারা দেশে সম্প্রসারিত হবে।
ভারত এই উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি আধুনিক, নিরাপদ এবং কার্যকর পাসপোর্ট ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। এটি শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা উন্নত করবে না, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে ভারতের সম্পর্ককেও মজবুত করবে।
যদি আপনার শহর এই ১২টি শহরের তালিকায় থাকে, তাহলে আপনি ইতিমধ্যে ই-পাসপোর্টের সুবিধা পেতে পারেন। অন্যথায়, ২০২৫ সালের মে মাসে সারা দেশে এর সম্প্রসারণের জন্য অপেক্ষা করুন। ভারতের এই ডিজিটাল যাত্রার অংশ হতে প্রস্তুত থাকুন!