BJP Strike Against Police Brutality: বিজেপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানে পুলিশি বর্বরতার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দিয়েছে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, নবান্ন অভিযানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের নির্মম লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান প্রয়োগের প্রতিবাদে এই বনধ ডাকা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতা পুলিশের সদর দফতরের সামনে সাংবাদিক সম্মেলনে সুকান্ত মজুমদার বলেন, “আমরা আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দিচ্ছি। মমতা ব্যানার্জির পুলিশ বাহিনী আজ নিরীহ ছাত্র-যুবকদের উপর যে বর্বর আক্রমণ চালিয়েছে তার প্রতিবাদে এই বনধ।”
তিনি অভিযোগ করেন, “নবান্ন অভিযানে অংশগ্রহণকারী হাজার হাজার ছাত্র-যুবক শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের উপর অকারণে লাঠিচার্জ করেছে, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে এবং জলকামান প্রয়োগ করেছে। এটা গণতন্ত্রের উপর আঘাত।”
বিজেপি নেতা বলেন, “আমরা চাই যে এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক। দায়ী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যেন এই ঘটনার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চান।”
সুকান্ত মজুমদার জানান, বুধবার সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিজেপি কর্মীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাবেন। তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই বনধ পালন করব। কিন্তু যদি পুলিশ আবার আমাদের উপর আক্রমণ চালায় তাহলে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব।”
বিজেপির এই ডাকে সাড়া দিয়েছে হিন্দু জাগরণ মঞ্চসহ বেশ কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। তারাও বুধবার বনধে অংশ নেবে বলে জানিয়েছে।
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এই বনধকে “রাজনৈতিক স্টান্ট” বলে অভিহিত করেছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “বিজেপি রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা জনগণের স্বার্থের কথা ভাবছে না।”
তিনি বলেন, “নবান্ন অভিযানে যারা এসেছিল তারা ছাত্র নয়, গুণ্ডা। তারা পুলিশকে আক্রমণ করেছে, পাথর ছুড়েছে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই ব্যবস্থা নিয়েছে।”
কুণাল ঘোষ জানান, তৃণমূল কংগ্রেস এই বনধের বিরোধিতা করবে। তিনি বলেন, “আমরা মানুষকে অনুরোধ করব যেন তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন। দোকানপাট, অফিস-আদালত সব খোলা রাখা হবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাজ্যজুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে কলকাতা, হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলোতেও নজরদারি বাড়ানো হবে।
একজন বরিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেব না। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত।”
অন্যদিকে, নাগরিক সমাজের একাংশ এই বনধের বিরোধিতা করেছে। তাদের বক্তব্য, এর ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। বিশেষ করে দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
Bangladesh Movement News: বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন তীব্র, রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগের
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সৌমেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “বনধের ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একদিনের বনধেও রাজ্যের কয়েকশো কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এই মুহূর্তে রাজ্যের অর্থনীতি যে অবস্থায় আছে, সেখানে বনধ কাম্য নয়।”
তিনি বলেন, “বিরোধী দলের উচিত অন্য উপায়ে প্রতিবাদ জানানো। বনধের বদলে তারা বিধানসভায় বা আদালতে যেতে পারে।”
তবে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, এই বনধের মাধ্যমে তারা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে পারবেন। দলের একজন নেতা বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে রাজ্যে নানা ঘটনা ঘটছে। আর.জি. কর মেডিকেল কলেজের ঘটনা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক নবান্ন অভিযানে পুলিশি নির্যাতন – সবকিছু মিলিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জমে আছে। আমরা সেই ক্ষোভকে প্রকাশের সুযোগ করে দিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি এই বনধে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন। কারণ তারাও চান যে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হোক, পুলিশি নির্যাতন বন্ধ হোক।”
অন্যদিকে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস মনে করছে এই বনধ ব্যর্থ হবে। দলের একজন নেতা বলেন, “মানুষ জানে বিজেপি শুধু রাজনীতি করছে। তারা রাজ্যের উন্নয়ন চায় না। তাই মানুষ এই বনধে সাড়া দেবে না।”
তিনি বলেন, “আমরা মানুষকে অনুরোধ করব যেন তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন। আমাদের কর্মীরা রাস্তায় থাকবে। কেউ যদি জোর করে দোকান বন্ধ করাতে চায় বা গাড়ি আটকাতে চায়, আমরা তা হতে দেব না।”
Shots Fired At Trump Rally: মৃত্যুর মুখোমুখি ট্রাম্প, রক্তাক্ত মাটিতে আমেরিকার গণতন্ত্র
বুধবারের বনধের প্রভাব কতটা পড়ে তা নিয়ে এখনই কিছু বলা মুশকিল। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই বনধের মাধ্যমে রাজ্যের রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সৌমেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি চাইছে রাজ্যে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করতে। তারা মনে করছে এর ফলে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হবে। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস চাইছে না যে বিজেপি রাজ্যে শক্তি বাড়াক। তাই দুই দলের মধ্যে সংঘাত আরও বাড়তে পারে।”
তিনি বলেন, “তবে এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ মানুষ। কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে, বিনিয়োগ কমবে।”
বুধবারের বনধ কতটা সফল হয় তার উপর অনেকটাই নির্ভর করবে আগামী দিনের রাজনীতি। যদি বনধ ব্যাপক সাড়া পায়, তাহলে বিজেপি আরও আক্রমণাত্মক হতে পারে। অন্যদিকে যদি বনধ ব্যর্থ হয়, তাহলে তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করতে পারে যে জনগণ তাদের পাশেই আছে।