Blood pressure measurement age : রক্তচাপ মাপা নিয়ে অনেকেরই মনে নানা প্রশ্ন থাকে। কোন বয়স থেকে নিয়মিত রক্তচাপ মাপা শুরু করা উচিত? কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ? এসব প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছেন বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, ১৮ থেকে ২০ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত রক্তচাপ মাপার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
বেশিরভাগ মানুষই নিয়মিত রক্তচাপ মাপেন না। অনেকে মনে করেন, কোনো লক্ষণ না থাকলে রক্তচাপ মাপার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এটা একটা ভুল ধারণা। কারণ উচ্চ রক্তচাপের কোনো স্পষ্ট লক্ষণ নাও থাকতে পারে। ফলে নিয়মিত না মাপলে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম ।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রায় ৪৬ শতাংশই জানেন না যে তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে।
এটা একটা উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান। কারণ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ নানা জটিল রোগের কারণ হতে পারে।চিকিৎসকরা বলছেন, সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ মিলিমিটার পারদের কম এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০ মিলিমিটার পারদের কম হলে তা স্বাভাবিক। কিন্তু সিস্টোলিক যদি ১৪০ বা তার বেশি হয় অথবা ডায়াস্টোলিক যদি ৯০ বা তার বেশি হয়, তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন:
১. হৃদরোগ:
উচ্চ রক্তচাপে হৃদযন্ত্রের রক্তনালি সংকুচিত হয়ে যায়। এতে হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহ কমে আসে। ফলে অ্যানজাইনা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট বড় হওয়া এবং হার্ট ফেইলিউর হতে পারে।
২. স্ট্রোক:
উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কের রক্তনালি সংকুচিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। এই অবস্থাকে স্ট্রোক বলে।
আপনার রক্তের সুগার মাপুন: জানুন কীভাবে এই অত্যাধুনিক যন্ত্র আপনার জীবন বাঁচাতে পারে!
৩. কিডনি রোগ:
দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। এটি কিডনি বৈকল্যের অন্যতম প্রধান কারণ।
৪. চক্ষুরোগ:
দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তচাপ চোখের রেটিনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এতে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।
৫. গর্ভকালীন জটিলতা:
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ মা ও গর্ভস্থ শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে।
এসব কারণেই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৮ থেকে ২০ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত রক্তচাপ মাপার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
এর ফলে প্রাথমিক অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়বে এবং সময়মত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হবে।বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা:
- ১৮-৩৯ বছর: পুরুষদের জন্য ১১৯/৭০ মিমি এইচজি, মহিলাদের জন্য ১১০/৬৮ মিমি এইচজি
- ৪০-৫৯ বছর: পুরুষদের জন্য ১২৪/৭৭ মিমি এইচজি, মহিলাদের জন্য ১২২/৭৪ মিমি এইচজি
- ৬০+ বছর: পুরুষদের জন্য ১৩৩/৬৯ মিমি এইচজি, মহিলাদের জন্য ১৩৯/৬৮ মিমি এইচজি
তবে মনে রাখতে হবে, এই মাত্রাগুলো গড় হিসাবে ধরা হয়েছে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী এর তারতম্য হতে পারে।রক্তচাপ মাপার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি:
১. রক্তচাপ মাপার আগে কমপক্ষে ৫ মিনিট বিশ্রাম নিন।
২. মাপার আগে ৩০ মিনিট পর্যন্ত ধূমপান, মদ্যপান বা ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. সঠিক মাপের কাফ ব্যবহার করুন।
৪. সোজা হয়ে বসুন এবং হাতটি সমান্তরাল রাখুন।
৫. একাধিকবার মেপে গড় নিন।
চাপে আছেন? জানুন হাই-লো প্রেসারের গোপন সংকেত
উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। যেমন:
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান
- লবণের ব্যবহার কমান
- ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- স্ট্রেস কমান
উপসংহারে বলা যায়, ১৮ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা শুরু করা উচিত। এতে করে প্রাথমিক অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়বে এবং সময়মত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হবে। ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি কমবে। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।