Economic impact on boating industry: নৌকা ব্যবসায়ীদের কাছে এখন দুঃসময় চলছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে নৌকা বাজারে চাহিদা কমে গেছে। কিন্তু এর মধ্যেও তাল গাছের কোন্দা তৈরির ব্যবসা বেশ ভালোভাবেই চলছে।গত কয়েক বছরে নৌকা বাজারে বেশ ভালো সময় গিয়েছিল। কোভিড-১৯ মহামারির সময় অনেকেই বাড়িতে থাকার সময় নৌকা কিনেছিলেন। কিন্তু এখন সেই চাহিদা কমে গেছে।
নৌকা নির্মাতারা উৎপাদন কমিয়েছেন। অনেক ডিলার নতুন নৌকা অর্ডার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। পুরনো নৌকার দামও কমছে।কিন্তু এর মধ্যেও তাল গাছের কোন্দা তৈরির ব্যবসায় মন্দার ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামীণ এলাকায় এখনও তাল গাছের কোন্দা বেশ জনপ্রিয়। এর কারণ হল কম খরচে তৈরি করা যায়, টেকসই এবং সহজে পাওয়া যায়।নৌকা বাজারের অবস্থা সম্পর্কে বোট ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে নতুন নৌকার বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫% কমেছে। পুরনো নৌকার দামও গড়ে ১০-১২% কমেছে।অন্যদিকে তাল গাছের কোন্দা নির্মাতাদের সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে তাদের বিক্রি ৫% বেড়েছে। গ্রামীণ এলাকায় এখনও প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার নতুন তাল গাছের কোন্দা তৈরি হচ্ছে।
নদীর দেশে শিল্পের কাহিনী: পশ্চিমবঙ্গের নৌকা শিল্পের ঐতিহ্য ও বর্তমান
নৌকা বাজারের এই মন্দার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার বৃদ্ধির কারণে মানুষ বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে নৌকা কিনতে চাইছেন না। তাছাড়া যাত্রা বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় অনেকে আবার বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়েছেন, ফলে নৌকায় আগ্রহ কমেছে।নৌকা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রহিম মিয়া বলেন, “গত দুই-তিন বছর আমাদের খুব ভালো ব্যবসা হয়েছিল। কিন্তু এখন অবস্থা খারাপ। অনেক নৌকা বিক্রি হচ্ছে না। দাম কমিয়েও বিক্রি করতে পারছি না।”অন্যদিকে তাল গাছের কোন্দা নির্মাতা করিম শেখ বলেন, “আমাদের ব্যবসা এখনও ভালোই চলছে। গ্রামে এখনও অনেকে তাল গাছের কোন্দা ব্যবহার করে। দাম কম, টেকসই। তাই চাহিদা কমেনি।”
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নৌকা শিল্পের এই মন্দা আরও কিছুদিন চলতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে তারা আশাবাদী। কারণ বাংলাদেশের মতো নদীমাতৃক দেশে নৌকার চাহিদা কখনোই কমবে না।তবে এই সময়ে নৌকা নির্মাতাদের নতুন কৌশল নিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন কম দামের ছোট নৌকা তৈরি করা, পুরনো নৌকা মেরামত ও আধুনিকীকরণের ওপর জোর দেওয়া, ইলেকট্রিক নৌকা তৈরি ইত্যাদি।নৌকা রপ্তানির দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। কারণ বিদেশে এখনও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নৌকার চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে পর্যটন শিল্পে এই নৌকাগুলো ব্যবহার করা হয়।
অন্যদিকে তাল গাছের কোন্দা নির্মাতাদের জন্য এটা সুযোগ। তারা এখন আরও আধুনিক ও নিরাপদ কোন্দা তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।সরকারের পক্ষ থেকেও নৌকা শিল্পকে সহায়তা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, নৌকা নির্মাতাদের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া নৌকা রপ্তানিতে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।তবে দীর্ঘমেয়াদে নৌকা শিল্পের টিকে থাকার জন্য আধুনিকায়ন ও উদ্ভাবনের বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী নৌকা তৈরির দিকে জোর দিতে হবে।
পাশাপাশি নৌকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও উন্নত করতে হবে।নৌকা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা এখন নতুন ডিজাইনের নৌকা তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। বিশেষ করে ছোট পরিবারের জন্য কম খরচের নৌকা তৈরির চেষ্টা চলছে। এছাড়া সোলার প্যানেল যুক্ত নৌকাও তৈরি করা হচ্ছে।অন্যদিকে তাল গাছের কোন্দা নির্মাতারা বলছেন, তারা এখন আরও মজবুত ও নিরাপদ কোন্দা তৈরির চেষ্টা করছেন। এছাড়া কোন্দার ডিজাইনও আধুনিক করা হচ্ছে যাতে তা আরও আকর্ষণীয় হয়।নৌকা শিল্পের এই মন্দার প্রভাব পড়েছে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতেও। যেমন নৌকার যন্ত্রাংশ নির্মাতা, রং প্রস্তুতকারক, কাঠের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া নৌকা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের সাথে জড়িত শ্রমিকদের কর্মসংস্থানও কমেছে।তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মন্দা স্থায়ী হবে না। কারণ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সংস্কৃতির কারণে নৌকার চাহিদা সবসময়ই থাকবে। তাই দীর্ঘমেয়াদে এই শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
White Colour on Tree: গাছের গায়ে সাদা রং দেখলেন? জানুন এর পিছনে লুকিয়ে থাকা আসল কারণ
তবে এর জন্য সরকার ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষকেই সক্রিয় হতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে নীতিগত সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। আর ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন উদ্ভাবন ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।পাশাপাশি নৌকা ব্যবহারকারীদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে নৌকার নিরাপত্তা ও পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে। এতে করে দীর্ঘমেয়াদে একটি টেকসই ও আধুনিক নৌকা শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব হবে।অন্যদিকে তাল গাছের কোন্দা নির্মাতাদের জন্য এটা একটা সুযোগ। তারা এখন তাদের পণ্যকে আরও উন্নত ও বৈচিত্র্যময় করতে পারেন। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, নৌকা শিল্পে এখন মন্দার সময় চলছে। কিন্তু এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে শিল্পটিকে আরও শক্তিশালী ও আধুনিক করে তোলার সুযোগ রয়েছে। আর তাল গাছের কোন্দা নির্মাতারা এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন তাদের ব্যবসা আরও বাড়ানোর জন্য।তবে এর জন্য সরকার, ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারী – সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নৌকা শিল্প আবার সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।