বোয়িং কোম্পানির স্টারলাইনার মহাকাশযানের কারিগরি সমস্যার কারণে দুই নাসা নভোচারী এখনও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) আটকে আছেন। বাচ উইলমোর এবং সুনিতা উইলিয়ামস নামের এই দুই নভোচারী গত ৫ জুন ফ্লোরিডা থেকে স্টারলাইনার মহাকাশযানে করে উৎক্ষেপণ হয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে তাদের মিশন মাত্র এক সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত ছিল, কিন্তু কারিগরি জটিলতার কারণে তারা এখনও পৃথিবীতে ফিরতে পারেননি।
এই মিশনটি বোয়িং স্টারলাইনারের প্রথম মানবযুক্ত অভিযান। নাসা এবং বোয়িং ভবিষ্যতে আইএসএসে নিয়মিত মিশনের জন্য এই মহাকাশযান ব্যবহার করতে চায়। তবে প্রথম অভিযানেই নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্যাপসুলে একাধিক হিলিয়াম লিক।
চাকরি প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আটকে পশ্চিমবঙ্গ: অপেক্ষায় বেকার যুবসমাজ
নাসা জানিয়েছে, তারা এই সমস্যাগুলি সমাধানে “উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি” করছে। তবে নভোচারীদের প্রত্যাবর্তনের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ এখনও ঠিক করা হয়নি। নাসা আরও জানিয়েছে, মহাকাশযানটির পর্যাপ্ত জ্বালানি রয়েছে যা মধ্য-আগস্ট পর্যন্ত কক্ষপথে থাকতে পারবে।
একজন অবসরপ্রাপ্ত নভোচারী দ্য আটলান্টিক পত্রিকাকে জানিয়েছেন, “অবশ্যই তারা (নাসা) এই মুহূর্তে নভোচারীদের মহাকাশযানে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। যদি তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত, তাহলে ইতিমধ্যেই তাদের ফিরিয়ে আনত।”
বোয়িং স্টারলাইনার একটি ক্যাপসুল যা মহাকাশে ক্রু এবং কার্গো পরিবহনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি দুটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত: একটি পুনঃব্যবহারযোগ্য ক্রু মডিউল যা সর্বোচ্চ সাতজন নভোচারীকে ধারণ করতে পারে, এবং একটি সার্ভিস মডিউল যাতে থ্রাস্টার এবং ইঞ্জিন রয়েছে যা প্রোপালশন প্রদান করে।
নাসা এবং বোয়িং কর্মকর্তারা বলছেন, তারা স্টারলাইনারের সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য কাজ করছেন। নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের ম্যানেজার স্টিভ স্টিচ বলেছেন, “আমাদের পরিকল্পনা হল তাদেরকে স্টারলাইনারে ফিরিয়ে আনা এবং সঠিক সময়ে বাড়ি ফেরানো।”
দুই যুগের দুই নেতা: ইন্দিরা থেকে মোদী – নির্বাচনী ইতিহাসের অদ্ভুত সাদৃশ্য
বোয়িংয়ের কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রাম ম্যানেজার মার্ক নাপ্পি জোর দিয়ে বলেছেন যে আইএসএসে ডক করা অবস্থায় থাকাই সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়। তিনি বলেন, “আমরা সমস্যাগুলি স্থায়ীভাবে সমাধান করার জন্য যথেষ্ট বুঝতে পারছি না, এবং এই অনন্য পরিবেশে সময় নিয়ে আরও ডেটা সংগ্রহ করা এবং আরও পরীক্ষা চালানোই একমাত্র উপায়।”
এই পরিস্থিতি নাসার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। একদিকে তারা নভোচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়, অন্যদিকে স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলের পাশাপাশি মহাকাশে যাতায়াতের দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে স্টারলাইনারকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
এই ঘটনা মহাকাশ অভিযানের জটিলতা এবং ঝুঁকি তুলে ধরেছে। এটি দেখিয়ে দিয়েছে যে নতুন মহাকাশযান উন্নয়ন এবং পরীক্ষা করা কতটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এছাড়া এটি বেসরকারি কোম্পানিগুলির সাথে নাসার সহযোগিতার জটিলতাও তুলে ধরেছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় নাসা বিকল্প পরিকল্পনাও প্রস্তুত রেখেছে। জরুরি অবস্থায় স্টারলাইনার আইএসএস থেকে ছেড়ে যেতে সক্ষম। ২৬ জুন একটি রাশিয়ান স্যাটেলাইটের ধ্বংসাবশেষ আইএসএসের কাছাকাছি আসার পর এই জরুরি প্রোটোকল সক্রিয় করা হয়েছিল।
মেসি-রোনাল্ডো: দুই মহাতারকার অবদানে বদলে গেছে বিশ্ব ফুটবলের চেহারা
এদিকে নাসা এবং স্পেসএক্স ক্রু-৯ মিশন লঞ্চের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই মিশনের লক্ষ্য তারিখ ১৮ আগস্ট। এটি নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের অধীনে নবম ক্রু রোটেশন মিশন হবে।
এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে মহাকাশ অভিযানের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়া এটি বেসরকারি কোম্পানিগুলির সাথে নাসার সহযোগিতার নীতিমালা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছে।
পাঠকরা এই বিষয়ে আরও জানতে নাসার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.nasa.gov) ভিজিট করতে পারেন। এছাড়া বোয়িং কোম্পানির ওয়েবসাইটেও (www.boeing.com) স্টারলাইনার সম্পর্কিত আপডেট পাওয়া যাবে।