ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার আগামী নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি সিরিজে ভারতের ৩-১ ব্যবধানে জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। রবিবার (১ সেপ্টেম্বর ২০২৪) মিড-ডে পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর কলামে গাভাস্কার এই আত্মবিশ্বাসী পূর্বাভাস দিয়েছেন।
গাভাস্কার লিখেছেন, “এটি নিঃসন্দেহে একটি উত্তেজনাপূর্ণ সিরিজ হবে, যেখানে উভয় দলেই প্রচুর প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে। এই সিরিজ আবারও প্রমাণ করবে কেন টেস্ট ক্রিকেট আমাদের প্রিয় খেলার সর্বোচ্চ ফরম্যাট। আর আমার ভবিষ্যদ্বাণী হল, ভারত ৩-১ ব্যবধানে জিতবে।”
প্রাক্তন এই ওপেনার মনে করেন, ডেভিড ওয়ার্নারের অবসরের পর অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং সমস্যা আরও বেড়েছে। এছাড়া তাদের মিডল অর্ডারও বেশ নড়বড়ে। তাই তিনি মনে করেন, অস্ট্রেলিয়াকে আবারও পরাজিত করার সুযোগ এসেছে ভারতের সামনে।
৫২ বছর পর অলিম্পিক্সে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় ভারতের
গাভাস্কার আরও লিখেছেন, “ওয়ার্নারের অবসরের পর অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং সমস্যা আরও বেড়েছে। তাদের মিডল অর্ডারও বেশ নড়বড়ে। তাই অস্ট্রেলিয়াকে আবারও পরাজিত করার জন্য তারা পাকা ফল হয়ে আছে।”
তবে গাভাস্কার সতর্কও করেছেন যে, SENA (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) দেশগুলোতে বিদেশি সিরিজে ভারত সাধারণত ধীরে শুরু করে। তাই প্রথম টেস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। এছাড়া সিরিজের আগে এবং টেস্টগুলোর মাঝে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ না খেলাটাও ভারতের বিরুদ্ধে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
গাভাস্কারের এই ভবিষ্যদ্বাণী অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিউত্তর হিসেবেও দেখা হচ্ছে। পন্টিং ICC রিভিউ শোতে বলেছিলেন, “আমি অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পক্ষে ভবিষ্যদ্বাণী করব, আমি কখনোই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভবিষ্যদ্বাণী করব না। কোথাও একটা ড্র হবে এবং কোথাও খারাপ আবহাওয়া থাকবে, তাই আমি বলছি ৩-১ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়া জিতবে।”
এবারের বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি সিরিজে ৫টি টেস্ট ম্যাচ থাকবে, যা ১৯৯১-৯২ সালের পর প্রথমবারের মতো। সিরিজের প্রথম টেস্ট ২২ নভেম্বর পার্থে শুরু হবে। এরপর অ্যাডিলেডে দিবারাত্রির টেস্ট, ব্রিসবেনে তৃতীয় টেস্ট, মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্ট এবং সিডনিতে পঞ্চম ও শেষ টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে।
ভারত ২০১৮-১৯ এবং ২০২০-২১ সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাটিতেই হারিয়েছিল। এবার তৃতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জেতার লক্ষ্যে নামছে রোহিত শর্মার দল। অন্যদিকে, ২০১৪-১৫ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়া বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জিততে পারেনি। তাই প্যাট কামিন্সের দল এবার ট্রফি ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে থাকবে।
বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির ইতিহাস:
সিজন | বিজয়ী | ফলাফল |
---|---|---|
1996-97 | ভারত | 1-0 |
1997-98 | ভারত | 2-1 |
1999-00 | অস্ট্রেলিয়া | 3-0 |
2000-01 | ভারত | 2-1 |
2003-04 | ড্র | 1-1 |
2004-05 | অস্ট্রেলিয়া | 2-1 |
2007-08 | অস্ট্রেলিয়া | 2-1 |
2008-09 | ভারত | 2-0 |
2010-11 | ভারত | 2-0 |
2011-12 | অস্ট্রেলিয়া | 4-0 |
2012-13 | ভারত | 4-0 |
2014-15 | অস্ট্রেলিয়া | 2-0 |
2016-17 | ভারত | 2-1 |
2018-19 | ভারত | 2-1 |
2020-21 | ভারত | 2-1 |
2022-23 | ভারত | 2-1 |
গাভাস্কারের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ভারত যদি সত্যিই ৩-১ ব্যবধানে জিততে পারে, তাহলে এটি হবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদের সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে ২০১৮-১৯ এবং ২০২০-২১ সালে ভারত ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল। তাই এবার যদি ৩-১ ব্যবধানে জেতে, তাহলে সেটা হবে ঐতিহাসিক অর্জন।
তবে এই জয়ের জন্য ভারতকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। প্রথমত, অস্ট্রেলিয়ার পিচগুলো ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। দ্বিতীয়ত, অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের মোকাবেলা করা সহজ হবে না। তৃতীয়ত, নেথান লায়নের স্পিনের মোকাবেলাও করতে হবে।
অন্যদিকে ভারতীয় বোলারদের জন্যও চ্যালেঞ্জ কম নয়। স্টিভ স্মিথ, মার্নাস লাবুশেন, ট্র্যাভিস হেডের মতো ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানদের আউট করা সহজ হবে না। তাই জাসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ শামি, মহম্মদ সিরাজদের ভালো বোলিং করতে হবে।
ভারত বনাম বিশ্ব: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোন দেশ কতগুলো ট্রফি জিতেছে
গাভাস্কার মনে করেন, সিরিজের আগে ভারতীয় দলের প্রস্তুতি নিয়েও চিন্তা রয়েছে। তিনি লিখেছেন, “সিরিজের আগে এবং টেস্টগুলোর মাঝে সপ্তাহব্যাপী বিরতিতে যে তারা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলছে না, সেটা তাদের বিরুদ্ধে যেতে পারে। তবে বর্তমানে বেশিরভাগ সফরকারী দলের জন্যই এটাই নিয়ম।”
তিনি আরও লিখেছেন, “এটা অভিজ্ঞতাহীন নতুনদের জন্য কঠিন, যেমন যশস্বী যায়সোয়াল গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখেছিল। তবে সে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে দারুণভাবে ফিরে এসে ৭০০ রানের বেশি করেছিল।”
সামগ্রিকভাবে, গাভাস্কারের এই ভবিষ্যদ্বাণী ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে উচ্চ প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৩-১ ব্যবধানে জেতা সহজ হবে না। দুই দলের মধ্যে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং প্রতিটি সেশন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। যাই হোক, এই সিরিজ যে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য একটি দারুণ বিজ্ঞাপন হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।