Causes of low milk supply in mothers: মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য সর্বোত্তম খাদ্য। কিন্তু অনেক মা-ই প্রসবের পর বুকে পর্যাপ্ত দুধ না আসার সমস্যায় ভোগেন। এটি তাদের জন্য খুবই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আসুন জেনে নেই মায়ের বুকে দুধ না আসার প্রধান কারণগুলি কী এবং কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
মায়ের বুকে দুধ না আসার প্রধান কারণসমূহ
মায়ের বুকে দুধ না আসার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
শারীরিক কারণ
- হরমোনাল সমস্যা: প্রোল্যাকটিন ও অক্সিটোসিন হরমোনের ঘাটতি থাকলে দুধ উৎপাদন কম হতে পারে।
- থাইরয়েড সমস্যা: অনিয়ন্ত্রিত থাইরয়েড সমস্যা দুধ উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS): এই সমস্যায় আক্রান্ত মায়েদের দুধ উৎপাদন কম হতে পারে।
- ডায়াবেটিস: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস দুধ উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
শীতে হলুদ দুধের অসাধারণ উপকার: স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে বিস্ময়কর!
প্রসব সংক্রান্ত কারণ
- সিজারিয়ান ডেলিভারি: সিজারিয়ান প্রসবের পর দুধ আসতে দেরি হতে পারে।
- প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ: অত্যধিক রক্তক্ষরণের ফলে দুধ উৎপাদন কম হতে পারে।
অন্যান্য কারণ
- অপর্যাপ্ত পুষ্টি: মায়ের খাদ্যে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব থাকলে দুধ উৎপাদন কম হতে পারে।
- মানসিক চাপ: উদ্বেগ ও মানসিক চাপ দুধ উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ দুধ উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
মায়ের বুকে দুধ বাড়ানোর উপায়
মায়ের বুকে দুধ কম হলে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। নিম্নলিখিত উপায়গুলি অবলম্বন করে দুধের পরিমাণ বাড়ানো যায়:
ঘন ঘন বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো
বাচ্চাকে যত বেশি বুকের দুধ খাওয়ানো হবে, তত বেশি দুধ উৎপাদন হবে। প্রতি ২-৩ ঘণ্টা অন্তর বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। এতে করে শরীর বুঝতে পারবে যে আরও দুধের প্রয়োজন আছে।
পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
মায়ের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার থাকা উচিত। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা দরকার। নিম্নলিখিত খাবারগুলি দুধ বাড়াতে সাহায্য করে:
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
- ডিম
- মাছ ও মাংস
- শাকসবজি
- ফলমূল
- বাদাম ও ড্রাই ফ্রুটস
মানসিক চাপ কমানো
মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম, ধ্যান ও যোগব্যায়াম করা যেতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়াও জরুরি।
হাতে দুধ বের করা
হাত দিয়ে দুধ বের করে স্তনের দুধ উৎপাদন বাড়ানো যায়। এটি দিনে ৩-৪ বার করা যেতে পারে।
ঔষধি উপায়
চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ঔষধ ব্যবহার করে দুধের পরিমাণ বাড়ানো যায়। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার লক্ষণ
মায়ের বুকের দুধ কম হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যেতে পারে:
- বাচ্চা পর্যাপ্ত ওজন বাড়ে না
- বাচ্চা ক্রমাগত কাঁদতে থাকে
- বাচ্চার ডায়াপার শুকনো থাকে
- বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই জেগে ওঠে
- স্তন নরম ও খালি মনে হয়
মায়ের বুকের দুধ বাড়ানোর ঘরোয়া উপায়
কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করেও মায়ের বুকের দুধ বাড়ানো যায়। যেমন:
মেথি
মেথি দানা ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খেলে দুধের পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া মেথি দানা ভেজে গুঁড়ো করে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
জিরা
জিরা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি খেলে দুধের পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া জিরা গুঁড়ো করে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
আমলকি
আমলকি ভিটামিন সি এর উৎস। এটি খেলে দুধের পরিমাণ বাড়ে। আমলকি চূর্ণ দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
আদা
আদা চা করে খেলে দুধের পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া আদা কুচি করে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
মায়ের বুকের দুধের গুরুত্ব
মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য সর্বোত্তম খাদ্য। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে:
- শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে
- শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে
- শিশুর পাকস্থলীর বিকাশে সাহায্য করে
- মা ও শিশুর মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শিশুর জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। এরপর ২ বছর বয়স পর্যন্ত অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ খাওয়ানো যেতে পারে।মায়ের বুকে দুধ না আসা একটি সাধারণ সমস্যা। কিন্তু সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। পর্যাপ্ত পুষ্টি, ঘন ঘন বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো, মানসিক চাপ কমানো ও প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার মাধ্যমে মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ বাড়ানো যায়। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মা ও শিশু আলাদা। তাই ধৈর্য ধরে নিজের ও শিশুর প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।