BRICS summit significance analysis: রাশিয়ার কাজান শহরে চলছে ১৬তম BRICS সম্মেলন। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার এই পাঁচ দেশের জোটে এবার যোগ দিয়েছে আরও পাঁচটি দেশ – মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং সহ অন্যান্য দেশের নেতারা।
BRICS জোটের এই সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি পশ্চিমা দেশগুলোর বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমা দেশগুলো যখন রাশিয়ার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখন BRICS জোট রাশিয়াকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এই সম্মেলনে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন SWIFT-এর বিকল্প হিসেবে BRICS পেমেন্ট সিস্টেম চালু করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
Loksabha 2024: কেন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না বিজেপি? [রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ]
Loksabha 2024: কেন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না বিজেপি? [রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ]
তবে প্রশ্ন উঠছে, BRICS কি সত্যিই একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে? এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। যেমন ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ চলছে। আবার ভারত পশ্চিমা দেশগুলোর সাথেও ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। অন্যদিকে ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকাও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না।BRICS জোটের অর্থনৈতিক শক্তি অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। এর সদস্য দেশগুলো বিশ্বের মোট জিডিপির ৩১.৫% উৎপাদন করে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪২% এই দেশগুলোতে বাস করে।
তবে এই দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যও রয়েছে। চীন ও ভারতের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি তেমন গতিশীল নয়।BRICS জোট একটি নতুন উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে যা ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া BRICS Pay নামে একটি আন্তঃব্যাংক লেনদেন ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে যা SWIFT-এর বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।তবে BRICS জোটের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি সাধারণ মুদ্রা চালু করা। এই নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও সদস্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের কারণে এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। BRICS সম্মেলনে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে BRICS দেশগুলো একমত হওয়ার চেষ্টা করছে।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, সন্ত্রাসবাদ দমন, সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়েও BRICS দেশগুলো সহযোগিতা বাড়াতে চাইছে। তবে এসব ক্ষেত্রেও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। BRICS জোটের সম্প্রসারণ নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। অনেক দেশ এই জোটে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে নতুন সদস্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছেন, এই সম্মেলনে নতুন কোনো সদস্য গ্রহণ করা হবে না।BRICS জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি পশ্চিমা দেশগুলোর বিকল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। আবার অনেকে মনে করছেন, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে এটি তেমন শক্তিশালী হতে পারবে না।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায়: জনগণের জীবনযাত্রা কঠিন হচ্ছে
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায়: জনগণের জীবনযাত্রা কঠিন হচ্ছে
তবে BRICS জোটের প্রভাব যে বাড়ছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশ্ব অর্থনীতিতে এর ভূমিকা ক্রমশ বাড়ছে। পশ্চিমা দেশগুলোকেও এই জোটের প্রতি নজর দিতে হচ্ছে। BRICS সম্মেলনের ফলাফল কী হয় তা দেখার জন্য সারা বিশ্ব অপেক্ষা করছে।সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, BRICS জোট একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে চাইলেও এর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক – এসব বিষয় BRICS-এর ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করবে। তবে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে BRICS-এর প্রভাব যে বাড়ছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আগামী দিনগুলোতে এই জোটের ভূমিকা আরও বাড়বে কি না তা দেখার বিষয়।