BSNL Satellite-to-Device Service launch: ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (BSNL) সম্প্রতি দেশের প্রথম সরাসরি স্যাটেলাইট-টু-ডিভাইস পরিষেবা চালু করেছে। এই অভিনব প্রযুক্তি ভারতের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
BSNL এর এই নতুন পরিষেবা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিকেশন প্রযুক্তি কোম্পানি Viasat এর সহযোগিতায় উদ্ভাবিত হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলেও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ভারতীয় টেলিকম বিভাগ (DoT) বুধবার এই পরিষেবা চালুর ঘোষণা দেয়।এই পরিষেবার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সেলুলার বা ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক না থাকা অবস্থায়ও জরুরি কল করতে পারবেন, এসওএস বার্তা পাঠাতে পারবেন এবং এমনকি ইউপিআই পেমেন্টও করতে পারবেন। তবে এখনও পর্যন্ত BSNL জানায়নি যে এই পরিষেবা সাধারণ কল বা এসএমএস পাঠানোর জন্যও ব্যবহার করা যাবে কিনা।
BSNL নম্বর চেক করার ৫টি সহজ উপায়: জেনে নিন আপনার নম্বর খুঁজে পাওয়ার কৌশল
BSNL এর এই স্যাটেলাইট পরিষেবা বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় ভ্রমণকারী বা বসবাসকারী মানুষদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, স্পিতি উপত্যকায় ট্রেকিং করতে যাওয়া পর্যটকরা বা রাজস্থানের গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলি এই পরিষেবার মাধ্যমে সহজেই যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন।Viasat এর প্রযুক্তি ব্যবহার করে BSNL এর এই পরিষেবা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৬,০০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত জিওস্টেশনারি এল-ব্যান্ড স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কাজ করবে। এই নন-টেরেস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক (NTN) প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর উপরিভাগে থাকা ডিভাইস এবং স্যাটেলাইটের মধ্যে দ্বি-মুখী যোগাযোগ সম্ভব হবে।
ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেস (IMC) ২০২৪-এ এই পরিষেবার প্রদর্শনী করা হয়েছিল। সেখানে Viasat দ্বি-মুখী যোগাযোগের সক্ষমতা প্রদর্শন করেছিল, যা BSNL এর নতুন পরিষেবার পিছনে থাকা প্রযুক্তির শক্তিশালী ভিত্তিকে তুলে ধরে।যদিও এই পরিষেবা চালু হওয়া নিয়ে উচ্ছ্বাস রয়েছে, তবে BSNL এখনও পর্যন্ত ব্যবহারকারীরা কীভাবে এই স্যাটেলাইট সংযোগ ব্যবহার করতে পারবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেনি। এখনও পরিষ্কার নয় যে বিদ্যমান BSNL গ্রাহকরা তাদের বর্তমান প্ল্যানের সাথে এই পরিষেবা পাবেন নাকি অতিরিক্ত চার্জ প্রযোজ্য হবে। আগামী সপ্তাহগুলিতে মূল্য কাঠামো এবং যোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই পরিষেবা চালু করার মাধ্যমে BSNL ভারতে টেলিকম উদ্ভাবনের অগ্রভাগে নিজেকে স্থাপন করেছে। IMC ২০২৪-এ সংস্থাটি একটি নতুন লোগো এবং সাতটি নতুন পরিষেবা চালু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ভারতের প্রথম ফাইবার-ভিত্তিক ইন্ট্রানেট টিভি পরিষেবা, যা বিশেষভাবে তার ফাইবার-টু-দ্য-হোম (FTTH) গ্রাহকদের জন্য।যদিও স্যাটেলাইট সংযোগ প্রযুক্তি নতুন কিছু নয়, কিন্তু ভারতে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য প্রথম পদক্ষেপ। আগে এই ধরনের পরিষেবা শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবা, সামরিক বাহিনী এবং অন্যান্য অনুরূপ পরিষেবার জন্য সংরক্ষিত ছিল।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে, এই ধরনের পরিষেবা সাধারণ জনগণের জন্যও উপলব্ধ এবং Apple-এর মতো কোম্পানিগুলি তাদের স্মার্টফোনে জরুরি পরিস্থিতিতে যোগাযোগের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। iPhone 14 সিরিজ থেকে শুরু করে Apple এই সুবিধা প্রদান করছে।BSNL এর এই নতুন পরিষেবা Elon Musk-এর Starlink-এর সম্ভাব্য প্রতিযোগী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি যোগাযোগ ও ডিজিটাল পরিষেবার অ্যাক্সেসকে বিপ্লবিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা সিম কার্ড বা নেটওয়ার্ক সংযোগ ছাড়াই কল করতে এবং বার্তা পাঠাতে পারবেন।
BSNL বাঁচাতে কোটি কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা
এই পরিষেবা বিশেষ করে সেইসব এলাকায় উপযোগী হবে যেখানে সেলুলার অবকাঠামো তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করা চ্যালেঞ্জিং। স্যাটেলাইট সংযোগের মাধ্যমে, বিচ্ছিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণকারী বা কম জনবসতিপূর্ণ গ্রামে বসবাসকারী মানুষেরা সংযুক্ত থাকতে পারবেন।BSNL এর এই উদ্যোগ ভারতের ডিজিটাল বিভাজন দূর করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি দেশের প্রত্যন্ত ও অনুন্নত অঞ্চলে উচ্চ গতির ইন্টারনেট অ্যাক্সেস প্রদান করবে। এই পরিষেবা ব্যবহারকারীদের উচ্চ গতির ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, ব্যাপক কভারেজ, নির্ভরযোগ্য সংযোগ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের প্ল্যান প্রদান করবে।
সামগ্রিকভাবে, BSNL এর স্যাটেলাইট-টু-ডিভাইস পরিষেবা ভারতের টেলিকম ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি দেশের দুর্গম এলাকায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আগামী দিনগুলিতে এই পরিষেবার বিস্তারিত তথ্য, মূল্য কাঠামো এবং উপলব্ধতা সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।