প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর তাঁর কর্নিয়া দানের মাধ্যমে দুই ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন। এই ঘটনা ঘটেছে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, কলকাতায়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁর জীবদ্দশায় দেহদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর সেই ইচ্ছা পূরণ করা হয়েছে।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর শেষ কয়েক বছর চোখে অনেকটাই কম দেখতেন। তবে তিনি নিজে ছানি অপারেশন করাননি। এর পরিবর্তে, তিনি তাঁর মৃত্যুর পর কর্নিয়া দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
জমি অধিগ্রহণ, শিল্পায়নের স্বপ্ন, স্বপ্নভঙ্গ এবং কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর, তাঁর কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে দুই ব্যক্তির চোখে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, দুই ব্যক্তি তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা প্রমাণ করে যে অঙ্গদান কীভাবে অন্যদের জীবনে আলো ফিরিয়ে আনতে পারে।
একটি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, “এবছর মা দুর্গার চক্ষুদান দেখতে পাবেন, বুদ্ধবাবুর কর্নিয়া দৃষ্টি ফেরাল দুজনের।” এই উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যায় যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কর্নিয়া দানের মাধ্যমে দুই ব্যক্তি তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান ও তথ্য
ভারতে চোখের রোগ, বিশেষ করে ছানি এবং গ্লুকোমা, একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। দেশে প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ চোখের গ্লুকোমা সমস্যায় ভুগছেন। বর্তমানে দেশে গ্লুকোমা আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ এবং সন্দেহভাজন রোগী ৫০ লাখ।
ছানি সার্জারি ভারতে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই অপারেশন পদ্ধতি ব্যাপকভাবে সফল হলেও, অতীতে এটি রোগীদের সন্তোষজনক চাক্ষুষ ফলাফল প্রদান করতে পারত না। তবে, বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি ও পদ্ধতির কারণে ছানি সার্জারির ফলাফল অনেক বেশি সন্তোষজনক।
স্মার্ট হোন, সুস্থ থাকুন: চোখকে বাঁচাতে মেনে চলুন ৫ টি কার্যকরী টিপস
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কর্নিয়া দানের এই ঘটনা অঙ্গদানের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। একজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এই মহৎ কাজ অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারে অঙ্গদানের জন্য এগিয়ে আসতে।
এছাড়াও, এই ঘটনা চোখের যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজে চোখের সমস্যায় ভুগলেও, তিনি তাঁর কর্নিয়া দান করে অন্যদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটি প্রমাণ করে যে, নিজের স্বাস্থ্য সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, আমরা অন্যদের সাহায্য করতে পারি।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন আজীবন কমিউনিস্ট এবং সহজ সরল জীবন যাপন করতেন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের উপর জোর দিয়েছিলেন এবং রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করেছিলেন। তবে, তাঁর শাসনকালে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের ঘটনা বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যু ও প্রতিক্রিয়া
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রয়াত হন। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেন।
সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “বুদ্ধদার খবরটা যখন এল তখন আমার চোখের ছানি অপারেশন হচ্ছিল। মনটা ভেঙে গেল। দলের প্রতি এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রতি ওঁর নিষ্ঠাবোধ, আমাদের দু’জনের এক মতাদর্শ এবং ওঁর দূরদৃষ্টি আগামী দিনেও আমাদের পথপ্রদর্শন করবে।”
মল্লিকার্জুন খড়গে বলেন, “পাঁচ দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি মানুষের সেবা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে তাঁর পরিবার এবং সহকর্মীদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি গভীর ভাবে মর্মাহত। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। তাঁর আত্মীয় পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।”
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কর্নিয়া দানের ঘটনা প্রমাণ করে যে, মৃত্যুর পরেও আমরা অন্যদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারি। তাঁর এই মহৎ কাজ অঙ্গদানের গুরুত্ব তুলে ধরে এবং আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা প্রত্যেকেই কীভাবে অন্যদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি।
এই ঘটনা আমাদের চোখের যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কেও সচেতন করে। ছানি এবং অন্যান্য চোখের রোগ ভারতে একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। নিয়মিত চোখের পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবন ও কর্ম আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা প্রত্যেকেই সমাজের জন্য কিছু করতে পারি। তাঁর সহজ জীবনযাপন এবং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা আমাদের অনুপ্রাণিত করতে পারে একটি অর্থপূর্ণ ও সেবামূলক জীবন যাপন করতে।