Importance of Kindness in Society: মানুষের কল্যাণ করার জন্য সমাজসেবা ও পরোপকারের পথ অনুসরণ করা যেতে পারে। এই পথে চলার মাধ্যমে আমরা একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠন করতে পারি।সমাজসেবা ও পরোপকারের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে।
- প্রথমত, দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করা যেতে পারে। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করা যায়।
- দ্বিতীয়ত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া যেতে পারে।
- তৃতীয়ত, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়ে মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলা যায়।
- চতুর্থত, পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়তা করা যেতে পারে।
- পঞ্চমত, মানবাধিকার রক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা যায়।বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ২০% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ২৫০০ এনজিও কাজ করছে যারা বিভিন্নভাবে দরিদ্র মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত।শিক্ষা ক্ষেত্রে সমাজসেবার মাধ্যমে অনেক উন্নতি সাধন করা সম্ভব। বাংলাদেশে এখনও প্রায় ২৫% মানুষ নিরক্ষর। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক শিশু স্কুলে যেতে পারে না। এসব এলাকায় বিনামূল্যে শিক্ষাদান কেন্দ্র স্থাপন করে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এছাড়া মেধাবী দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করেও তাদের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করা যায়।স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রেও সমাজসেবার সুযোগ রয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নেই। এসব এলাকায় স্বাস্থ্যশিবির আয়োজন করে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা যায়। বিশেষ করে মা ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা গুরুত্বপূর্ণ।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমেও মানুষের কল্যাণ করা যায়। বাংলাদেশে বেকারত্বের হার প্রায় ৫%। বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে। ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে স্বনির্ভর করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া যায়। এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে কুটির শিল্প স্থাপনে সহায়তা করা যেতে পারে।পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সমাজসেবার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বৃক্ষরোপণ, জলাভূমি সংরক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখা যায়। এছাড়া বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করা যেতে পারে।
মানবাধিকার রক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেও মানুষের কল্যাণ সাধন করা যায়। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ রোধ, যৌতুক নিরোধ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা যেতে পারে। এছাড়া সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় কাজ করা যায়। আইনি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে।সমাজসেবা ও পরোপকারের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন।
- প্রথমত, সেবার মানসিকতা থাকতে হবে। নিঃস্বার্থভাবে অন্যের উপকার করার ইচ্ছা থাকা জরুরি।
- দ্বিতীয়ত, সমাজের প্রকৃত চাহিদা অনুধাবন করতে হবে। কোন ক্ষেত্রে কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন তা বুঝতে হবে।
- তৃতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। অস্থায়ী সমাধান নয়, স্থায়ী সমাধানের দিকে নজর দিতে হবে।
- চতুর্থত, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া কোন প্রকল্প সফল হবে না।
- পঞ্চমত, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রাপ্ত অর্থ ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
ব্যক্তিগতভাবে এটি মানসিক তৃপ্তি ও আত্মপ্রত্যয় দেয়। অন্যের উপকার করার মাধ্যমে নিজের জীবনকেও অর্থবহ করা যায়। সামাজিকভাবে এর ফলে সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি পায়। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি হয়। জাতীয়ভাবে এর ফলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ইত্যাদির মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যায়।তবে সমাজসেবা ও পরোপকারের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অর্থের অভাব একটি বড় সমস্যা। অনেক সময় ভালো উদ্যোগ নেওয়া গেলেও অর্থের অভাবে তা বাস্তবায়ন করা যায় না। এছাড়া দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগ্য লোকের অভাব দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালার জটিলতাও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া সামাজিক কুসংস্কার ও গোঁড়ামিও অনেক সময় উন্নয়নমূলক কাজে বাধা সৃষ্টি করে।
উপসংহারে বলা যায়, সমাজসেবা ও পরোপকারের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগ – সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রত্যেকের মধ্যে সমাজসেবার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই আমরা একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে পারব। মানুষের কল্যাণের এই পথে চলার মাধ্যমেই আমরা উন্নত ও সভ্য জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব।