Bumrah Amazing Record as a Blower: জসপ্রিত জসবিরসিংহ বুমরাহ, ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৩ সালে আহমেদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার অসাধারণ বোলিং অ্যাকশন এবং গতির জন্য তিনি পরিচিত। বুমরাহ তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০১৬ সালে, এবং খুব দ্রুতই তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের অপরিহার্য সদস্য হয়ে ওঠেন।
বুমরাহ টেস্ট ক্রিকেটে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। তিনি ভারতের দ্রুততম পেসার হিসেবে ১৫০ উইকেট শিকার করেছেন এবং দ্বিতীয় দ্রুততম ভারতীয় বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট শিকার করেছেন। ২০১৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে হ্যাটট্রিক করে তিনি তৃতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। এছাড়াও, ২০২৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬/৪৫ রানের অসাধারণ বোলিং ফিগার তুলে ধরেন।
বুমরাহ ওডিআই ক্রিকেটেও অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। তিনি ২০১৯ সালে ৫৭ ম্যাচে ১০০ উইকেট শিকার করেন, যা তাকে ২১তম ভারতীয় বোলার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করতে সাহায্য করে। তার সেরা বোলিং ফিগার ৬/১৯, যা তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২২ সালে অর্জন করেন।
বুমরাহ টি২০ ক্রিকেটে তার দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। ২০১৬ সালে তিনি একটি ক্যালেন্ডার বছরে সর্বাধিক উইকেট শিকার করেন, মোট ২৮টি উইকেট। ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপে তিনি ১৫ উইকেট শিকার করেন এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। এছাড়াও, তিনি টি২০আই ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মেইডেন ওভার বোলিং করেছেন।
বুমরাহ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএলে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট শিকারী, মোট ১৬৫টি উইকেট। ২০১৩ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএল যাত্রা শুরু করেন এবং পাঁচবার শিরোপা জিততে সাহায্য করেন।
জসপ্রিত বুমরাহকে বিশ্বের সবচেয়ে বিচিত্র বোলিং অ্যাকশনের অধিকারী বলা হয় তার অনন্য এবং অস্বাভাবিক বোলিং স্টাইলের কারণে। তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
বুমরাহের বোলিং অ্যাকশনের সবচেয়ে লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল তার সংক্ষিপ্ত রান-আপ। অধিকাংশ ফাস্ট বোলারের তুলনায় তার রান-আপ অনেক ছোট, যা মাত্র ১০-১২টি ছোট ছোট পদক্ষেপে সম্পন্ন হয়। এই সংক্ষিপ্ত রান-আপের মাধ্যমে তিনি বলের গতির উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারেন এবং তার বোলিংয়ে নির্ভুলতা আনতে পারেন।
বুমরাহের বোলিং অ্যাকশনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল তার হাইপারএক্সটেন্ডেড কনুই। তার হাত প্রায় সোজা থাকে এবং বল ছাড়ার সময় তার কনুই সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত হয়। এটি তার বলের গতিকে বাড়িয়ে তোলে এবং ব্যাটসম্যানদের জন্য বলের গতিপথ বুঝতে অসুবিধা হয়।
বুমরাহের বোলিং অ্যাকশন ফ্রন্ট-অন, অর্থাৎ তিনি বল ছাড়ার সময় তার শরীর সামনের দিকে থাকে। এই অ্যাকশনটি তার কাঁধ এবং পিঠের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা তাকে ইনজুরি প্রবণ করে তোলে। তবে, এই অ্যাকশনটি তাকে বলের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং বলকে সুইং করাতে সাহায্য করে।
বুমরাহ বল ছাড়ার সময় তার হাত প্রায় কোমরের কাছাকাছি থাকে, যা অন্য ফাস্ট বোলারদের তুলনায় অনেক নিচু। এই কারণে ব্যাটসম্যানদের জন্য বলের গতিপথ বুঝতে অসুবিধা হয় এবং বলের গতিপথ অনিশ্চিত হয়ে যায়
বুমরাহের বোলিং অ্যাকশন তার পিঠ এবং কাঁধের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা তাকে ইনজুরি প্রবণ করে তোলে। তার প্রথম বড় ইনজুরি হয় ২০১৯ সালে, যখন তার পিঠে স্ট্রেস ফ্র্যাকচার ধরা পড়ে। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন সময়ে ইনজুরির কারণে খেলা থেকে বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
বুমরাহের অস্বাভাবিক বোলিং অ্যাকশন তাকে ব্যাটসম্যানদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ করে তোলে। তার বলের গতিপথ এবং সুইং করার ক্ষমতা ব্যাটসম্যানদের জন্য বলকে পড়তে কঠিন করে তোলে। তার ইয়র্কার এবং পেস ভ্যারিয়েশন তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডেথ ওভার বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে
১. বুমরাহের বোলিং অ্যাকশন স্বশিক্ষিত এবং অনন্য। তিনি নিজেই এটি বিকশিত করেছেন, কোনো পেশাদার কোচিং বা বিশেষ ট্রেনিং ছাড়াই ।
২. প্রাথমিকভাবে অনেক কোচ তার অ্যাকশন পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বুমরাহ তা করেননি। তিনি নিজের স্বাভাবিক অ্যাকশনে অটল থেকেছেন ।
৩. বুমরাহ টিভি এবং ভিডিও দেখে নিজের অ্যাকশন নিজেই শিখেছেন। তিনি কখনোই তাদের কথা শোনেননি যারা তার অ্যাকশন পরিবর্তন করতে বলেছিলেন ।
৪. তার অস্বাভাবিক অ্যাকশন নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও, ডেনিস লিলি এবং আশীষ নেহরার মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটি কার্যকর এবং পুনরাবৃত্তিযোগ্য ।
৫. সম্প্রতি, দীর্ঘমেয়াদী কর্মক্ষমতার জন্য বুমরাহ তার অ্যাকশনে কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন। তিনি তার রান-আপ ২-৩ পা বাড়িয়েছেন এবং ফলো-থ্রু বড় করেছেন ।সুতরাং, বুমরাহের অ্যাকশন কোনো বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে সঠিক করা হয়নি। বরং, তিনি নিজেই তা বিকশিত করেছেন এবং সময়ের সাথে সাথে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তাতে সামান্য পরিবর্তন এনেছেন।
জসপ্রিত বুমরাহ তার অসাধারণ বোলিং দক্ষতা এবং ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেটে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন। তার রেকর্ডসমূহ এবং কৃতিত্বগুলি তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভবিষ্যতে তিনি আরও অনেক রেকর্ড গড়বেন এবং ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবেন, এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন