গত দশকে ভারতের শহরতলী এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে এই সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে।
কলকাতা শহরতলীর দ্রুত বিস্তারের ফলে অনেক অপরিকল্পিত বসতি গড়ে উঠেছে। নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. অনির্বাণ সেনগুপ্ত মনে করেন, “গত 15 বছরে কলকাতার শহরতলী এলাকা প্রায় 40% বেড়েছে, কিন্তু পরিকাঠামো উন্নয়ন তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি।”
রাজ্য সরকারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শহরতলীর প্রায় 30% ভবন বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে নির্মিত হয়েছে। এসব ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
কলকাতা ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অরুণ কুমার শর্মা জানান, “শহরতলীর মাত্র 20% ভবনে পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।
ভারতীয় মৌসম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত 5 বছরে কলকাতায় গড় তাপমাত্রা 1.5°C বেড়েছে, যা আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় 2023 সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বেশ কিছু , যা 2018 সালের তুলনায় বেশি।
শহরের প্রায় 40% বাসিন্দা স্লাম এলাকায় বাস করে, যেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
মুম্বাই: 2023 সালে 800টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। দিল্লি: 2023 সালে 1,500টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। চেন্নাই: 2023 সালে 600টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, 2023 সালে ভারতে মোট 35,000টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার 60% শহরতলী এলাকায়।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার 2024 সালে “সেফ সাবার্ব” নামে একটি নতুন নীতি চালু করেছে, যার লক্ষ্য আগামী 5 বছরে শহরতলীর সব ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
কলকাতা পুরসভা প্রতি মাসে “ফায়ার সেফটি ওয়ার্কশপ” আয়োজন করছে।
রাজ্য সরকার 50টি নতুন হাই-টেক ফায়ার ইঞ্জিন কিনেছে, যা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।
পরিবেশবিদ ড. সুদীপ্তা ঘোষ বলেন, “আগামী দশকে তাপমাত্রা আরও 1-2°C বাড়তে পারে, যা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়াবে।”
কলকাতা স্মার্ট সিটি প্রকল্পের অধীনে 2025 সালের মধ্যে শহরের 70% এলাকায় স্বয়ংক্রিয় অগ্নি সনাক্তকরণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (JICA) কলকাতায় একটি আধুনিক ফায়ার ট্রেনিং অ্যাকাডেমি স্থাপনে সহায়তা করছে।
শহরতলীর অগ্নিকাণ্ড ভারতের শহরগুলির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পরিকল্পিত নগরায়ন, কঠোর আইন প্রয়োগ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই শহরতলীকে নিরাপদ করা যাবে।
মন্তব্য করুন