ATM withdrawal safety tips: সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল একটি বার্তা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে যাতে দাবি করা হচ্ছে যে, এটিএম মেশিনে কার্ড ঢোকানোর আগে ‘ক্যান্সেল’ বোতাম দু’বার চাপলে ATM PIN Theft থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই বার্তায় আরও বলা হয়েছে যে, ভারতীয় রিজার্ভ বাংক (আরবিআই) এই পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু সরকারি ফ্যাক্ট চেক টিম স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর।
ভাইরাল বার্তার দাবি কী?
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বার্তায় বলা হচ্ছে: “এটিএম থেকে টাকা তোলার সময় একটি অত্যন্ত কার্যকর টিপস। কার্ড ঢোকানোর আগে ‘ক্যান্সেল’ বোতাম দু’বার চাপুন। যদি কেউ আপনার পিন কোড চুরি করার জন্য কিপ্যাড সেট করে থাকে, তাহলে এই পদ্ধতি সেই সেটআপ বাতিল করে দেবে। প্রতিটি লেনদেনের সময় এটি অভ্যাস করুন।”
এই বার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে এটি আরবিআই-এর পরামর্শ এবং সবাইকে এই তথ্য শেয়ার করতে বলা হয়েছে।
সরকারি ফ্যাক্ট চেকের মাধ্যমে ATM PIN Theft সংক্রান্ত সত্য উদঘাটন
প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (পিআইবি) ফ্যাক্ট চেক টিম, যা ভারত সরকারের অফিসিয়াল ফ্যাক্ট চেকিং হ্যান্ডেল, স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে এই দাবি মিথ্যা। তারা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছে: “আরবিআই-এর নামে একটি পোস্ট দাবি করছে যে এটিএমে লেনদেনের আগে ‘ক্যান্সেল’ দু’বার চাপলে পিন চুরি প্রতিরোধ করা যায়। এই বক্তব্য মিথ্যা এবং আরবিআই এমন কোনো বার্তা জারি করেনি।”
রিজার্ভ বাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) কখনোই এমন কোনো নির্দেশনা বা পরামর্শ দেয়নি যা বলে যে ‘ক্যান্সেল’ বোতাম দু’বার চাপলে পিন স্কিমিং বা জালিয়াতি থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। এই ধরনের অযাচাইকৃত “হ্যাক” মানুষকে মিথ্যা নিরাপত্তার অনুভূতি দেয় যা বিপজ্জনক।
ATM PIN Theft-এর প্রকৃত সমস্যা এবং পরিসংখ্যান
এটিএম জালিয়াতি ভারতে একটি গুরুতর সমস্যা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কার্ড/ইন্টারনেট-এটিএম/ডেবিট কার্ড বিভাগে জালিয়াতির পরিমাণ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১৬ কোটি টাকা থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে, যা বার্ষিক ভিত্তিতে ৩৪.৫% হ্রাস। ২০২১-২২ অর্থবছরে এটি আরও কমে ৬৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ এবং কর্ণাটকের সাইবার সেল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভারতে এটিএম কার্ড ব্যবহারকারীদের ২৫ শতাংশ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনলাইন জালিয়াতির শিকার হয়েছেন।
স্কিমিং: ATM PIN Theft-এর প্রধান পদ্ধতি
স্কিমিং হলো এটিএম জালিয়াতির সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি। এতে জালিয়াতিরা এটিএমের কার্ড রিডারে একটি ডিভাইস লাগিয়ে দেয় যা কার্ডের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপের তথ্য পড়ে এবং সংরক্ষণ করে। একইসাথে তারা ক্যাশ ডিসপেনসারের উপরে, ডিপোজিট স্লটে বা কিবোর্ডের উপরে ছোট ক্যামেরা লাগিয়ে পিন নম্বর চুরি করে।
কিছু ক্ষেত্রে অপরাধীরা আসল পিন প্যাডের উপরে জাল পিন প্যাড বসিয়ে দেয় যাতে স্কিমিং ডিভাইস থাকে। দিল্লি পুলিশের সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গেছে যে মাত্র সাত দিনে তিনটি এটিএম থেকে ৮১টি অ্যাকাউন্ট থেকে ১৯ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তোলা হয়েছে।
ATM PIN Theft প্রতিরোধের প্রকৃত উপায়
নিরাপদ এটিএম নির্বাচন
সবসময় ভালো আলোযুক্ত, ব্যস্ত এলাকায় এবং নিরাপত্তা ক্যামেরা সহ এটিএম ব্যবহার করুন। পরিত্যক্ত, ভাংচুর হওয়া বা নির্জন এলাকার এটিএম এড়িয়ে চলুন।
সতর্ক পরিদর্শন
এটিএম ব্যবহারের আগে মেশিনটি ভালোভাবে পরীক্ষা করুন, বিশেষ করে কার্ড রিডার এবং কিপ্যাডের চারপাশে। যদি কোনো অস্বাভাবিক ডিভাইস দেখেন, তাহলে সেগুলো নিজে সরানোর চেষ্টা করবেন না। বরং তৎক্ষণাত বাংকে জানান।
পিন সুরক্ষা
পিন প্রবেশের সময় আপনার শরীর বা হাত দিয়ে কিপ্যাড ঢেকে রাখুন যাতে অন্যরা আপনার সংখ্যা দেখতে না পায়। এই সহজ পদক্ষেপটি পিন চুরির ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়।
নিয়মিত পিন পরিবর্তন
নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত আপনার পিন পরিবর্তন করুন এবং জন্মতারিখ বা ক্রমিক সংখ্যার মতো সহজে অনুমানযোগ্য সংখ্যা এড়িয়ে চলুন।
ATM PIN Theft এড়ানোর জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা টিপস
ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা: আপনার পিন মনে রাখুন এবং কোথাও লিখে রাখবেন না, বিশেষ করে কার্ডের উপর। আপনার কার্ড এবং পিন কারো সাথে শেয়ার করবেন না, এমনকি পরিবার বা বন্ধুদের সাথেও না।
লেনদেন নিরাপত্তা: লেনদেন শেষে রসিদ নিন এবং সংরক্ষণ করুন। নিয়মিত আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করুন যাতে কোনো অননুমোদিত লেনদেন শনাক্ত করতে পারেন।
জরুরি ক্ষেত্রে: যদি আপনার কার্ড হারিয়ে যায় বা চুরি হয়, তাহলে তৎক্ষণাত কার্ড জারিকারী ব্যাংকে জানান এবং কার্ড ব্লক করান।
সরকারি উদ্যোগ ATM PIN Theft প্রতিরোধে
সরকার এটিএম নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সব এটিএমে ইএমভি চিপ এবং পিন কার্ড প্রক্রিয়াকরণ সক্ষম করা, সব এটিএম লেনদেনের জন্য পিন এন্ট্রি বাধ্যতামূলক করা, ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ডকে ইএমভি চিপ এবং পিন কার্ডে রূপান্তর করা।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক ব্যবহার ডিফল্টভাবে সীমাবদ্ধ রাখা এবং গ্রাহকের নির্দিষ্ট অনুমতির পরেই তা সক্রিয় করা, সব লেনদেনের জন্য অনলাইন সতর্কতা বাধ্যতামূলক করা এবং দৈনিক সীমা নির্ধারণের মতো ব্যবস্থা রয়েছে।
শিক্ষা এবং সচেতনতার গুরুত্ব
ATM PIN Theft প্রতিরোধে শিক্ষা এবং সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে যার মধ্যে রয়েছে এসএমএস, রেডিও প্রচারণা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। আরবিআই-এর ই-বাট (ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণ) কর্মসূচিও এর অংশ।
মানুষকে যাচাইকৃত নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হবে এবং অযাচাইকৃত “হ্যাক” ছড়ানো এড়িয়ে চলতে হবে যা মিথ্যা নিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি করে।
ATM PIN Theft নিয়ে ভাইরাল হওয়া বার্তায় ‘ক্যান্সেল’ বোতাম দু’বার চাপার যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। সরকারি ফ্যাক্ট চেক টিম স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে এই দাবি ভুল এবং আরবিআই এমন কোনো পরামর্শ দেয়নি। প্রকৃত নিরাপত্তার জন্য আমাদের প্রমাণিত এবং যাচাইকৃত নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। সচেতনতা এবং সঠিক তথ্যের উপর ভিত্তি করেই আমরা ATM PIN Theft এবং অন্যান্য আর্থিক জালিয়াতি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।