স্টাফ রিপোর্টার
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ৬:০০ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

আন্দোলনের চাপে ১ নভেম্বর থেকে কলকাতার ৫ মেডিক্যাল কলেজে ‘Central Referral System’ চালু

Central Referral System Implementation West Bengal Medical Colleges

রাজ্য সরকার অবশেষে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে নিয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে কলকাতার ৫টি প্রধান মেডিক্যাল কলেজে ‘Central Referral System’ চালু হতে চলেছে। এই সিস্টেম চালু হলে রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রেফার করার প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম হাসপাতাল, নিল রতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এই সিস্টেম চালু করা হবে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে রাজ্যের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেও এই ব্যবস্থা চালু করা হবে।

এই নতুন সিস্টেমের মাধ্যমে একটি হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রোগী পাঠানোর আগে জানা যাবে সেখানে শয্যা খালি আছে কিনা। এতে করে রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের অযথা হয়রানি এড়ানো যাবে। একইসঙ্গে চিকিৎসকদের উপরও অযথা চাপ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় এই সিস্টেমের পাইলট প্রজেক্ট শুরু করেছি। সেখানে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। এবার কলকাতার প্রধান হাসপাতালগুলিতে এটি চালু করা হচ্ছে।”

Central Govt Scheme: লক্ষ্মীর ভান্ডার খুলছে কেন্দ্র! জেনে নিন কীভাবে পাবেন মাসিক ৫,০০০ টাকা!

নতুন এই ব্যবস্থায় একজন ডাক্তারকে রোগী রেফার করার সময় স্বাস্থ্য দপ্তরের Health Management Information System (HMIS) পোর্টালে লগ ইন করতে হবে। সেখানে রোগীর অসুস্থতার ধরন অনুযায়ী যে হাসপাতালে চিকিৎসা সম্ভব এবং যেখানে শয্যা খালি আছে, সেই হাসপাতালের তালিকা পাওয়া যাবে। ডাক্তার সেখান থেকে উপযুক্ত হাসপাতাল বেছে নিয়ে রোগীর তথ্য দিয়ে রেফার করতে পারবেন।

রেফার করার পর সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল একটি টোকেন নম্বর দেবে। রোগী সেই টোকেন নম্বর নিয়ে হাসপাতালে গেলে তাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না। তবে যদি কোনও কারণে রোগী পৌঁছানোর আগেই সেই শয্যা অন্য কাউকে দেওয়া হয়, তাহলে সেই হাসপাতাল রোগীকে অন্য কোনও হাসপাতালে শয্যা না পাওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা করবে।

এই নতুন ব্যবস্থা চালু হলে রোগীদের উপকার হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের একজন বরিষ্ঠ চিকিৎসক জানিয়েছেন, “অনেক সময় দেখা যায় রোগীরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। নতুন এই ব্যবস্থায় সেই সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।”

জুনিয়র ডাক্তারদের দাবির মধ্যে Central Referral System চালু করা অন্যতম ছিল। গত অগাস্ট মাসে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে একজন জুনিয়র ডাক্তারের উপর হামলার ঘটনার পর থেকে তারা এই দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সেই ঘটনার পর থেকে রাজ্যজুড়ে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন চলছিল।

রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্ত জানিয়েছেন, “আমরা ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় Central Referral System-এর পাইলট প্রজেক্ট শুরু করেছি। জুনিয়র ডাক্তারদের ১০টি দাবির মধ্যে ৭টি ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার বাস্তবায়ন করছে। আমরা তাদের অনশন প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”

তবে জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাদের অন্যান্য দাবিগুলিও পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন প্রত্যাহার করবেন না। তাদের অন্যান্য দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসচিবকে অপসারণ, হাসপাতালে ডিজিটাল বেড ভ্যাকেন্সি মনিটর স্থাপন, হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন, শূন্যপদ পূরণ ইত্যাদি।

R.G Kar Doctor Rape-Murder: চিকিৎসক হত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে আন্দোলন

রাজ্য সরকার জানিয়েছে, নভেম্বর ১ তারিখ থেকে Central Referral System-এর পাশাপাশি রিয়েল টাইম বেড অ্যাভেলেবিলিটি ইনফরমেশন সিস্টেম এবং প্যানিক কল বাটন অ্যালার্ম সিস্টেমও চালু করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নতুন ব্যবস্থা চালু হলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার মান অনেকটাই উন্নত হবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক দেবোলিনা বিশ্বাস বলেছেন, “Central Referral System এবং ডিজিটাল বেড ভ্যাকেন্সি মনিটরিং সিস্টেম চালু হলে রোগীদের চাহিদা এবং হাসপাতালের সরবরাহের মধ্যে যে ফাঁক রয়েছে তা অনেকটাই কমে যাবে। এতে করে পরিষেবার মান বাড়বে, জীবন সংকটজনক বিলম্ব এড়ানো যাবে এবং চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে আস্থা বাড়বে।”

তবে এই নতুন ব্যবস্থা সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন হবে সঠিক পরিকাঠামো এবং দক্ষ মানবসম্পদের। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা এই সিস্টেম চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করেছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই এটি সফলভাবে কার্যকর হবে।”

Central Referral System চালু হলে শুধু রোগীরাই নয়, চিকিৎসকরাও উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে তাদের উপর থেকে অতিরিক্ত চাপ কমবে এবং তারা আরও দক্ষতার সঙ্গে রোগীদের সেবা দিতে পারবেন। এছাড়া হাসপাতালে রোগীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে চিকিৎসকদের সংঘর্ষের ঘটনাও কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে এই নতুন ব্যবস্থা সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন হবে সবার সহযোগিতা। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “আমরা আশা করছি সব চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা এই নতুন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন। এটি সফল হলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার মান অনেকটাই উন্নত হবে।”

Central Referral System চালু হওয়ার পর রাজ্য সরকার এর কার্যকারিতা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানা গেছে। প্রয়োজনে সময়ে সময়ে এই সিস্টেমে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হল এই ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে সারা রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।

সব মিলিয়ে, Central Referral System চালু হওয়ার ফলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় একটি নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে রোগীরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি চিকিৎসকদের কাজের পরিবেশও উন্নত হবে। তবে এই ব্যবস্থা সফল করতে হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

 

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে নজর! বঙ্গের সব আসনে লড়তে প্রস্তুত আইএমআইএম

হোলির রঙে ব্যাঙ্ক বন্ধ: আগামীকাল থেকে টানা ৪ দিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাঙ্ক ছুটি, তালিকা দেখে নিন

কেকেআরের প্রস্তুতি শুরু: কলকাতায় নাইটদের ক্যাপ্টেন-কোচের সঙ্গে প্রকাশিত হল প্র্যাক্টিস সূচি

শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল’ পোস্টার: সিপিএম নেতার থানায় তলব!

কলকাতার Zakaria Street-এর মাস্ট ভিজিট ফুড স্টল: একটি খাদ্যপ্রেমীর স্বর্গভূমি

অলক্ষ্যে ঋত্বিক: ঋত্বিক ঘটকের জীবনালেখ্য নিয়ে আসছে বাঙালির প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র

আইপিএল-এ তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধ! স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কড়া নির্দেশ জারি!

১০

দেওয়ালের কোন দিকে কোন রঙ শুভ? বাস্তুশাস্ত্রের চোখে একটি গভীর দৃষ্টিপাত

১১

ডিএলএফ-এমআরএফ-আমূল-পেটিএম: সংক্ষিপ্ত নামেই ভারত বিখ্যাত, এবার জেনে নিন এই ব্র্যান্ডগুলোর পুরো নাম!

১২

সেক্সসমনিয়া: ঘুমের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক বিরল রহস্য

১৩

ভীষণ ক্ষতিকর Non-Stick প্যানে রান্না করছেন না তো? জেনে নিন সেরা বিকল্পগুলো

১৪

কাক ডাকার ফলাফল: ইসলাম ও হিন্দু শাস্ত্রে কী বলা আছে?

১৫

দিনে ৮ ঘণ্টা AC চালালে মাসে কত ‘Electric Bill’ আসবে? সহজ হিসেবে নিশ্চিন্তে থাকুন

১৬

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? একটি গভীর বিশ্লেষণ

১৭

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের জাদু: কীভাবে ভারত হয়ে উঠল অপ্রতিরোধ্য?

১৮

বাংলার প্রথম এসি লোকাল ট্রেন শিয়ালদা-কৃষ্ণনগর রুটে, ভাড়া কত জানেন?

১৯

ভারতে রাজ্যভিত্তিক হীরার মজুদ: কোন রাজ্য হীরা উৎপাদনে সেরা?

২০
close