ভোডাফোন আইডিয়ার ৩৬,৯৫০ কোটি টাকার ঋণ শেয়ারে রূপান্তর করছে কেন্দ্র

দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে থাকা টেলিকম কোম্পানি ভোডাফোন আইডিয়ার (ভিআই) জন্য বড় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত সরকার। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে, কোম্পানির ৩৬,৯৫০ কোটি টাকার বকেয়া স্পেকট্রাম নিলাম…

Srijita Chattopadhay

 

দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে থাকা টেলিকম কোম্পানি ভোডাফোন আইডিয়ার (ভিআই) জন্য বড় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত সরকার। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে, কোম্পানির ৩৬,৯৫০ কোটি টাকার বকেয়া স্পেকট্রাম নিলাম ঋণ শেয়ার ইক্যুইটিতে রূপান্তর করা হবে, যার ফলে সরকারের অংশীদারিত্ব বর্তমানের ২২.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ৪৮.৯৯ শতাংশে উন্নীত হবে।

গত রবিবার (৩০ মার্চ, ২০২৫) একটি নিয়ন্ত্রক ফাইলিংয়ে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। এই সিদ্ধান্ত সেপ্টেম্বর ২০২১-এ ঘোষিত টেলিকম সেক্টরের জন্য সংস্কার ও সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে1। ভোডাফোন আইডিয়াকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ১০ টাকা অঙ্কিত মূল্যের ৩,৬৯৫ কোটি ইক্যুইটি শেয়ার ১০ টাকা ইস্যু মূল্যে জারি করতে, যা প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, সরকার এই শেয়ারগুলি বাজার মূল্যের তুলনায় বেশি দামে কিনছে। শুক্রবার (২৮ মার্চ) বাজার বন্ধের সময় কোম্পানির শেয়ারের মূল্য ছিল ৬.৮ টাকা প্রতি শেয়ার, কিন্তু সরকার ১০ টাকা প্রতি শেয়ার হিসেবে কিনছে, যা প্রায় ৪৭ শতাংশ প্রিমিয়াম5। এই ঘোষণার পর সোমবার (১ এপ্রিল) ভোডাফোন আইডিয়ার শেয়ার মূল্য আপার সার্কিট হিট করে ১০ শতাংশ বেড়ে ৭.৪৯ টাকায় পৌঁছেছে।

ঋণের বোঝায় জর্জরিত ভোডাফোন আইডিয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত একটি জীবনদায়ী সাহায্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত, কোম্পানির মোট ঋণ ছিল প্রায় ২.৩ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৭,০০০ কোটি টাকা AGR (অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ) দায়বদ্ধতা এবং ১.৪ লাখ কোটি টাকা স্পেকট্রাম দায়বদ্ধতা রয়েছে5। সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত, কোম্পানি ২.১৬ ট্রিলিয়ন টাকার ঋণ রিপোর্ট করেছিল, যার মধ্যে সরকারের কাছে বিলম্বিত স্পেকট্রাম পেমেন্ট বাধ্যবাধকতাও অন্তর্ভুক্ত।

এই ইক্যুইটি রূপান্তরের পরও প্রমোটাররা, যাদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ভোডাফোন পিএলসি এবং ভারতের আদিত্য বিড়লা গ্রুপ (এবিজি) রয়েছে, কোম্পানির পরিচালনাগত নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে। তবে তাদের শেয়ার হোল্ডিং উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। ভোডাফোন পিএলসি’র অংশীদারিত্ব বর্তমানের ২৪.৪ শতাংশ থেকে কমে প্রায় ১৬.১ শতাংশে নেমে আসবে, আর এবিজি’র মালিকানা ১৪ শতাংশ থেকে কমে ৯.৪ শতাংশে দাঁড়াবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ ভোডাফোন আইডিয়াকে আগামী তিন বছরে ৪০,০০০ কোটি টাকারও বেশি নগদ প্রবাহ স্বস্তি দেবে। এটি কোম্পানির দীর্ঘদিন ধরে বিলম্বিত ২৫,০০০ কোটি টাকার ঋণ সংগ্রহ ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে। ব্যাংকগুলি আরও ঋণ দেওয়ার আগে সরকারের সমর্থনের প্রমাণ খুঁজছিল।

এই ঋণ সংগ্রহ ভোডাফোন আইডিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কোম্পানি আগামী তিন বছরে অগ্রাধিকার সার্কেলে তার ৪জি অপারেশন সম্প্রসারণ এবং প্রধান শহরগুলিতে ৫জি পরিষেবা চালু করার জন্য ৫০,০০০-৫৫,০০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

সিটি রিসার্চের একটি গবেষণা নোটে বলা হয়েছে, “আমরা এটিকে সরকারের একটি বড় সমর্থন প্রদর্শন হিসাবে দেখছি যা সঠিক সময়ে এসেছে, যা ভিআইকে আগামী তিন বছরে উল্লেখযোগ্য নগদ প্রবাহ স্বস্তি দেবে এবং তার দীর্ঘদিন ধরে বিলম্বিত ব্যাংক থেকে ঋণ সংগ্রহ সম্পন্ন করার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে”।

উল্লেখ্য, এটি দ্বিতীয়বারের মতো সরকার ভোডাফোন আইডিয়ার ঋণকে ইক্যুইটিতে রূপান্তর করছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৩-এ একটি অনুরূপ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল3। আগামী সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ নিয়ন্ত্রক পেমেন্টের উপর মরেটোরিয়াম শেষ হওয়ার পর কোম্পানি একটি বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, তাই এই রূপান্তর প্রয়োজনীয় নগদ প্রবাহ সমর্থন দেবে।

রূপান্তরের পরে, ভোডাফোন আইডিয়া বার্ষিক প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হত যদি মরেটোরিয়াম শেষ হয়ে যেত12। এই অতিরিক্ত ত্রাণ এখন টেলিকম অপারেটরকে অন্তত আগামী ১৮ মাসের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আর্থিক স্বস্তি প্রদান করছে।

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখের আগের ৯০ ট্রেডিং দিনের গড় ভলিউম ওয়েটেড মূল্য বা আগের ১০ দিনের উচ্চতর মূল্যের ভিত্তিতে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কোম্পানি আইন, ২০১৩-এর ধারা ৫৩-এর বিধান সাপেক্ষে।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত ২৯ মার্চ তারিখে একটি আদেশের মাধ্যমে কোম্পানিকে জানানো হয় এবং কোম্পানি ৩০ মার্চে এই তথ্য প্রাপ্ত করে। ভোডাফোন আইডিয়া জানিয়েছে যে, “কোম্পানি প্রয়োজনীয় অনুমোদন প্রাপ্তির পর শেয়ার ইস্যু করার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে”।

ভোডাফোন আইডিয়া ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের ভোডাফোন (V.L) এবং আদিত্য বিড়লা গ্রুপের সেলুলারের ভারতীয় বিভাগের মিলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে, কোম্পানি প্রত্যাশার তুলনায় কম গুরুতর তৃতীয় ত্রৈমাসিক লোকসান ঘোষণা করেছিল।

 

About Author
Srijita Chattopadhay

সৃজিতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক। তিনি একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি তার লেখা দ্বারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি তুলে ধরতে সদা উদ্যমী। সৃজিতার লেখার ধারা মূলত সাহিত্য, সমাজ এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন দিককে ঘিরে আবর্তিত হয়, যেখানে তিনি তার গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বিশ্লেষণী দক্ষতার পরিচয় দেন। তাঁর নিবন্ধ ও প্রতিবেদনগুলি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যা তার বস্তুনিষ্ঠতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় বহন করে। সৃজিতা তার কর্মজীবনে ক্রমাগত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে বদ্ধপরিকর, যা তাকে বাংলা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।