Chaitra Amavasya 2025 timings: চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের শেষ তিথি অমাবস্যা এবার বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে আসছে। ২০২৫ সালের চৈত্র অমাবস্যা পড়ছে শনিবার, ২৯ মার্চ। বিশেষত্ব হল এই অমাবস্যা শনিবারে পড়ায় একে ‘শনি অমাবস্যা’ বা ‘শনিচরি অমাবস্যা’ নামেও অভিহিত করা হয়েছে। পঞ্জিকা অনুযায়ী, অমাবস্যা তিথি শুরু হবে ২৮ মার্চ সন্ধ্যা ৭:৫৫ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৯ মার্চ বিকাল ৪:২৭ মিনিটে। হিন্দু পঞ্জিকার প্রথম মাস চৈত্রের এই অমাবস্যা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কেননা এটি হিন্দু নববর্ষের প্রথম অমাবস্যা হিসেবে বিবেচিত।
চৈত্র অমাবস্যা ২০২৫: সময়সূচি
চৈত্র অমাবস্যার সঠিক সময়সূচি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিভিন্ন ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনের জন্য নির্দিষ্ট সময় অনুসরণ করা প্রয়োজন। পঞ্জিকা অনুসারে চৈত্র অমাবস্যার সঠিক সময়সূচি নিম্নরূপ:
- অমাবস্যা তিথি আরম্ভ: ২৮ মার্চ, ২০২৫, সন্ধ্যা ৭:৫৫ মিনিট
- অমাবস্যা তিথি শেষ: ২৯ মার্চ, ২০২৫, বিকাল ৪:২৭ মিনিট
- উদয়তিথি অনুসারে অমাবস্যা দিন: ২৯ মার্চ, ২০২৫ (শনিবার)
২০২৫ সালে চৈত্র অমাবস্যা শনিবারে পড়ায় এটি বিশেষভাবে শনি অমাবস্যা হিসেবে পালিত হবে। এটি ২০২৫ সালের প্রথম শনি অমাবস্যা, যা বিশেষ ফলদায়ক বলে মনে করা হয়।
শনি দেবের প্রণাম মন্ত্র: জেনে নিন কীভাবে বড়ঠাকুরকে খুশি করবেন
শনি অমাবস্যার বিশেষ তাৎপর্য
চৈত্র অমাবস্যা যখন শনিবারে পড়ে, তখন এটি শনি অমাবস্যা হিসেবে পরিচিত হয়। ২০২৫ সালে চৈত্র অমাবস্যা ২৯ মার্চ শনিবারে পড়ছে, যা এই দিনটিকে আরও বিশেষ করে তুলেছে। শনিবারে অমাবস্যা পড়ার কারণে এই দিনটি শনি গ্রহের প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত।
শনি অমাবস্যার বিশেষত্ব:
- শনি দোষ, সাড়ে সাতি এবং অন্যান্য গ্রহজনিত সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে বিবেচিত
- শনিদেবের পূজা করলে জীবনের বাধা-বিপত্তি দূর হয় বলে বিশ্বাস করা হয়
- পিতৃ দোষ নিবারণের জন্য বিশেষ উপযোগী দিন
- শনিবারে পড়ায় বিশেষ যোগ সৃষ্টি হয়, যা আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য অনুকূল
২০২৫ সালে চৈত্র অমাবস্যার দিন বিরল ব্রহ্ম যোগ, ইন্দ্র যোগ এবং শিববাস যোগের সংযোগ ঘটছে, যা এই দিনটিকে আরও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।
চৈত্র অমাবস্যার ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব
চৈত্র অমাবস্যা হিন্দু ধর্মে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত। এটি হিন্দু চান্দ্র বর্ষপঞ্জির প্রথম মাসের অমাবস্যা হওয়ায় এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এই দিনের ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব নিম্নরূপ:
- নতুন শুরুর প্রতীক হিসেবে বিবেচিত
- জীবনের দুঃখ-কষ্ট এবং নেতিবাচকতা দূর করার উপযুক্ত দিন
- পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য পিতৃশ্রাদ্ধ পালনের বিশেষ দিন
- পাপ মুক্তির জন্য পবিত্র নদীতে স্নানের মাহাত্ম্য রয়েছে
- ভগবান বিষ্ণুকে পূজা করার বিশেষ দিন
মহাভারতের একটি কাহিনি অনুসারে, কর্ণ যখন যুদ্ধে মারা যান এবং স্বর্গে পৌঁছান, তখন তাকে খাবারের পরিবর্তে সোনা ও মণিমুক্তা দেওয়া হয়। তিনি ইন্দ্রদেবকে জিজ্ঞাসা করেন যে কেন তাকে সাধারণ খাবার দেওয়া হচ্ছে না। ইন্দ্রদেব উত্তরে বলেন যে কর্ণ জীবনে অনেক দান করেছেন কিন্তু কখনও পূর্বপুরুষদের জন্য কিছু করেননি। ইন্দ্রদেব কর্ণকে ১৬ দিনের জন্য পৃথিবীতে ফিরে আসার এবং তার পূর্বপুরুষদের জন্য খাবার দানের অনুমতি দেন। এই ১৬ দিনকে পিতৃপক্ষ হিসেবে পালন করা হয়।
চৈত্র অমাবস্যার দিনে পালনীয় অনুষ্ঠান ও রীতিনীতি
চৈত্র অমাবস্যার দিন বিভিন্ন ধার্মিক অনুষ্ঠান পালন করা হয়, যার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। এই দিনের প্রধান অনুষ্ঠানসমূহ:
পবিত্র স্নান ও পিতৃ তর্পণ
- ব্রহ্ম মুহূর্তে স্নান: সকাল ৪:৪২ থেকে ৫:২৮ এর মধ্যে স্নান করা সর্বাধিক শুভ বলে বিবেচিত
- পবিত্র নদীতে স্নান: যদি সম্ভব হয়, গঙ্গা বা অন্যান্য পবিত্র নদীতে স্নান করা উত্তম
- সূর্য অর্ঘ্য: স্নানের পর সূর্যদেবকে জল দিয়ে অর্ঘ্য প্রদান করা
- পিতৃ তর্পণ: কুশ ঘাস, কালো তিল, সাদা ফুল ও জল দিয়ে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা
- শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান: দুপুর ১১:৩০ থেকে ২:৩০ এর মধ্যে পূর্বপুরুষদের জন্য শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান পালন করা
দান ও পূজা-অর্চনা
- অন্নদান: গরিব ও ব্রাহ্মণদের খাবার দান করা
- বিষ্ণু পূজা: ভগবান বিষ্ণুকে তুলসীপাতা উৎসর্গ করে পূজা করা
- শনি পূজা: শনিদেবকে নীল ফুল, কালো তিল ও সরিষার তেল নিবেদন করা
- দান-ধ্যান: অন্ন, বস্ত্র, তিল, গুড়, এবং দক্ষিণা দান করা
- প্রদীপ দান: পীপল গাছের নীচে সরিষার তেলের প্রদীপ জ্বালানো
উপবাস ও অন্যান্য অনুষ্ঠান
- উপবাস: সম্পূর্ণ বা আংশিক উপবাস পালন করা (ঐচ্ছিক)
- গায়ত্রী মন্ত্র জপ: ১০৮ বার গায়ত্রী মন্ত্র জপ করা
- মৌন ব্রত: যদি সম্ভব হয়, দিনে মৌন ব্রত পালন করা
- পীপল বৃক্ষ প্রদক্ষিণ: পীপল গাছকে ১০৮ বার প্রদক্ষিণ করা
- সন্ধ্যায় প্রদীপ: সূর্যাস্তের পর পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো
ভূতাদি অমাবস্যা: বিশেষ সতর্কতা
চৈত্র অমাবস্যাকে ‘ভূতাদি অমাবস্যা’ নামেও ডাকা হয়। এই দিনে রজোগুণ ও তমোগুণের প্রভাব বেশি থাকে বলে বিশ্বাস করা হয়, যার কারণে নেতিবাচক শক্তি বেশি সক্রিয় থাকে6। এজন্য এই দিনে কিছু বিশেষ বিধিনিষেধ মেনে চলা উচিত।
ভূতাদি অমাবস্যার দিনে এড়ানোর বিষয়সমূহ:
- নেতিবাচক চিন্তা ও আচরণ এড়িয়ে চলা উচিত
- অন্ধকার এবং নির্জন স্থানে যাওয়া এড়ানো ভালো
- গভীর রাতে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত
- মাংস, মদ্য ও তামসিক খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
- অপবিত্র অবস্থায় ধর্মীয় কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত
২০২৫ সালের চৈত্র অমাবস্যার বিশেষ যোগ
২০২৫ সালের চৈত্র অমাবস্যার দিন কয়েকটি বিশেষ যোগের সৃষ্টি হচ্ছে, যা এই দিনটিকে আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত করে তুলেছে:
- ব্রহ্ম যোগ: আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য বিশেষ উপযোগী
- ইন্দ্র যোগ: ঐশ্বর্য এবং সমৃদ্ধির জন্য শুভ
- শিববাস যোগ: শিবের আশীর্বাদ লাভের বিশেষ সময়
এই বিরল যোগের সময় গঙ্গা স্নান এবং শিবপূজা করলে বিশেষ আধ্যাত্মিক পুণ্য অর্জন হয় এবং জীবনের কঠিন সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে বলে বিশ্বাস করা হয়।
চৈত্র অমাবস্যা পালনের লাভ ও ফলাফল
চৈত্র অমাবস্যার দিন বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন ও ব্রত-উপবাসের মাধ্যমে বিশেষ ফল লাভ করা যায় বলে শাস্ত্রে উল্লেখ আছে। এই দিনের অনুষ্ঠান পালনের প্রধান লাভসমূহ:
- পাপমুক্তি: অজ্ঞাতসারে করা পাপ থেকে মুক্তি মিলে
- পিতৃদোষ নিবারণ: পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ লাভ হয়
- আধ্যাত্মিক উন্নতি: মানসিক শান্তি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে
- শনি দোষ নিবারণ: শনি গ্রহের প্রতিকূল প্রভাব কমে যায়
- সাড়ে সাতির প্রভাব হ্রাস: শনি গ্রহের সাড়ে সাতি প্রভাব থেকে রাহত মিলে
- সৌভাগ্য বৃদ্ধি: জীবনে সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি পায়
পুরাণ অনুসারে, চৈত্র অমাবস্যার দিন গঙ্গা স্নান এবং দান-ধ্যানের ফল অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান বলে বিবেচিত।
চৈত্র অমাবস্যার পরের দিন: নববর্ষের শুরু
চৈত্র অমাবস্যার পরের দিন, অর্থাৎ চৈত্র শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে হিন্দু নববর্ষের শুরু হয়। এই দিনটির বিশেষ তাৎপর্য:
- চৈত্র নবরাত্রি শুরু হয় চৈত্র অমাবস্যার পরের দিন থেকে
- গুড়ি পড়বা (মহারাষ্ট্র) ও উগাদি (তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, আন্ধ্রপ্রদেশ) হিসেবে নববর্ষ উদযাপন করা হয়
- গুজরাটি পঞ্জিকায় চৈত্র অমাবস্যাকে ফাল্গুন অমাবস্যা হিসেবেও অভিহিত করা হয়
- নববর্ষের প্রথম দিন থেকে নতুন কর্ম শুরু করার জন্য শুভ বলে বিবেচিত
২০২৫ সালের চৈত্র অমাবস্যা আসছে বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে। ২৯ মার্চ শনিবার পড়ায় এটি শনি অমাবস্যা হিসেবে বিশেষ ফলদায়ক হবে বলে বিশ্বাস করা হয়। অমাবস্যা তিথি শুরু হবে ২৮ মার্চ সন্ধ্যা ৭:৫৫ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৯ মার্চ বিকাল ৪:২৭ মিনিটে। এই বিশেষ দিনে পবিত্র স্নান, পিতৃ তর্পণ, দান-ধর্ম এবং পূজা-অর্চনার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতি, পাপমুক্তি, পিতৃ দোষ নিবারণ এবং শনি দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে শাস্ত্রে উল্লেখ আছে। চৈত্র অমাবস্যা হিন্দু নববর্ষের পূর্বদিন হওয়ায় এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যথাযথ বিধি-বিধান মেনে এই দিনটি পালন করে থাকেন। শাস্ত্রোক্ত বিধি-বিধান মেনে এবং পূর্ণ শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের সাথে এই দিনটি পালন করলে ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনেই শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়।