Srijit Mukherji’s Podatik movie review: সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘পদাতিক’ সিনেমাটি গত ১৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা হলগুলিতে মুক্তি পেয়েছে। কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেনের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিতে মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ছবিটি মুক্তির পর থেকেই দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
‘পদাতিক’-এ চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় নিয়ে সমালোচকরা একবাক্যে প্রশংসা করেছেন। আনন্দবাজার পত্রিকার সমালোচনায় বলা হয়েছে, “অভিনয়ে চঞ্চল চৌধুরী ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন”। চঞ্চলের মেকআপ এবং অভিনয় দুটোই এতটাই নিখুঁত যে দর্শকরা তাকে দেখে হুবহু মৃণাল সেনকেই দেখছেন বলে মনে হয়েছে।
‘পদাতিক’ শুধু মৃণাল সেনের জীবনীচিত্র নয়, এটি একজন শিল্পীর সংগ্রামের গল্পও বটে। ছবিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে মৃণাল সেন “ফিল্মমেকিং ছেড়ে দেব” থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পুনরায় চলচ্চিত্র নির্মাণে মনোনিবেশ করেন। সৃজিত মুখোপাধ্যায় মৃণাল সেনের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন – তাঁর কাজ, সিনেমা সম্পর্কে তাঁর ধারণা, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক, এবং সহকর্মীদের সঙ্গে বিশেষত সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক।
স্বর্ণযুগের সুরস্রষ্টা: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জীবনের অনন্য পরিক্রমা
ছবির কয়েকটি দৃশ্য বিশেষভাবে দর্শকদের মন জয় করেছে:
ছবিতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন:
সমালোচকদের মতে, এই সকল অভিনেতারাও তাঁদের চরিত্রের সাথে পুরোপুরি ন্যায় করেছেন।
‘পদাতিক’-এর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল এর চিত্রনাট্য। ছবিটি ইতিমধ্যেই নিউ ইয়র্ক ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার জিতেছে। এছাড়া, ছবিতে মৃণাল সেনের নিজের ছবির অংশগুলোর ব্যবহার অত্যন্ত সুপ্রযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেছেন সমালোচকরা।
আনন্দবাজার পত্রিকা ‘পদাতিক’-কে ১০-এর মধ্যে ৭ রেটিং দিয়েছে। অন্যদিকে, Eisamay পত্রিকা ছবিটিকে ৫-এর মধ্যে ৪ রেটিং দিয়েছে। সামগ্রিকভাবে, ছবিটি দর্শক ও সমালোচকদের কাছে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।
মানিকবাবুর মেঘ: বাংলা সিনেমার আকাশে এক অনন্য মেঘমল্লার!
‘পদাতিক’ শুধু একটি জীবনীচিত্র নয়, এটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কেও তুলে ধরেছে। মৃণাল সেনের জীবন ও কর্মের মাধ্যমে, ছবিটি দর্শকদের বাংলা চলচ্চিত্রের সুবর্ণযুগের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।সৃজিত মুখোপাধ্যায় নিজেও স্বীকার করেছেন যে মৃণাল সেনের কাজ তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি বলেছেন, “সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ এবং মৃণাল সেন— এই তিন জনের কাজই আমায় যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে।” এই ছবির মাধ্যমে সৃজিত যেন সেই ঋণ শোধ করার চেষ্টা করেছেন।
‘পদাতিক’ শুধু একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার গল্প নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের একটি আহ্বানও বটে। ছবিটি দেখিয়েছে কীভাবে চলচ্চিত্র শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, সমাজ পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ারও হতে পারে। Eisamay পত্রিকার সমালোচনায় বলা হয়েছে, “নিছক বিনোদন টপকে সিনেমা সমাজ বদলাবে, এই লক্ষ্যে মৃণালের সঙ্গে সৃজিতের যে বন্ধুত্ব, তার ছাপ ছবিতে সর্বত্র।”
যদিও ছবিটি সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে, তবুও কিছু সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেছেন যে চঞ্চল চৌধুরীর মেকআপে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গে চলমান শ্রমিক আন্দোলনের কারণে ছবিটির প্রদর্শনী ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
‘পদাতিক’ শুধু একটি জীবনীচিত্র নয়, এটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিলও বটে। চঞ্চল চৌধুরীর অসাধারণ অভিনয়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের দক্ষ পরিচালনা, এবং মৃণাল সেনের জীবন ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি – এই সবকিছু মিলে ‘পদাতিক’-কে একটি স্মরণীয় চলচ্চিত্র অভিজ্ঞতায় পরিণত করেছে।ছবিটি দর্শকদের মৃণাল সেনের জীবন ও কর্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কেও ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এভাবে ‘পদাতিক’ শুধু অতীতের স্মৃতিচারণ নয়, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুপ্রেরণাও বটে।
মন্তব্য করুন