চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়: পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম কতটা কার্যকর?

Chandrabora snake venom cure research: চন্দ্রবোড়া বা Russell's viper সাপের কামড় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মারাত্মক সাপের কামড়। এর বিষের প্রতিষেধক হিসেবে পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই অ্যান্টিভেনমের কার্যকারিতা…

Debolina Roy

 

Chandrabora snake venom cure research: চন্দ্রবোড়া বা Russell’s viper সাপের কামড় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মারাত্মক সাপের কামড়। এর বিষের প্রতিষেধক হিসেবে পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই অ্যান্টিভেনমের কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রেই এটি কাম্য ফলাফল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। এর বিষ শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, যার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। এছাড়া কিডনি ও স্নায়ুতন্ত্রের উপরও এর প্রভাব পড়ে। চিকিৎসায় মূলত পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হয়, যা একাধিক বিষাক্ত সাপের বিষের বিরুদ্ধে কাজ করে।
ভিমরুলের কামড়ে প্রাণ যাচ্ছে! জানুন কীভাবে বাঁচবেন এই মারাত্মক আক্রমণ থেকে

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই অ্যান্টিভেনম সব ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। নেপালে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিভেনম দেওয়া হলেও তা নিম্ন মাত্রার চেয়ে বেশি কার্যকর নয়। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ব্যবহৃত অ্যান্টিভেনম চন্দ্রবোড়া সাপের বিষের সব উপাদানের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়।বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের ঘটনা বেড়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে দেশের ১৭টি জেলায় অন্তত ২০টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু দেশে এখনও নিজস্ব অ্যান্টিভেনম উৎপাদন হয় না, আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়। এটি চিকিৎসায় জটিলতা সৃষ্টি করছে।

অ্যান্টিভেনমের কার্যকারিতা বাড়াতে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন:

১. স্থানীয় প্রজাতির সাপের বিষ ব্যবহার করে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা
২. বিষের বিভিন্ন উপাদানের বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি করা
৩. অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের সময় ও মাত্রা নির্ধারণে আরও গবেষণা করা
৪. রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা

তবে অ্যান্টিভেনমের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এটি এখনও চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের চিকিৎসায় সর্বোত্তম পদ্ধতি। শ্রীলঙ্কায় পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিভেনম ব্যবহারে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দ্রুত কেটে যায়।

তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিভেনমের পাশাপাশি সহায়ক চিকিৎসা দিয়ে রোগীর অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব।চন্দ্রবোড়া সাপের কামড় প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি। কৃষকদের জন্য বুট ও দস্তানা ব্যবহার, রাতে টর্চ লাইট নিয়ে চলাচল, ঘরের আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি উপায়ে এই ঝুঁকি কমানো যায়। সাপের কামড় পড়লে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের চিকিৎসায় আরও উন্নতি প্রয়োজন। সরকার ইতিমধ্যে ভেনম রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করেছে, যেখানে দেশীয় প্রজাতির সাপের বিষ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।