চেন্নাইয়ের মারিনা বিচে ভারতীয় বিমান বাহিনীর (IAF) বার্ষিক এয়ার শো দেখতে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের ভিড় জমেছিল। কিন্তু এই বিশাল জনসমাগমের ফলে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
৬ অক্টোবর ২০২৪ রবিবার চেন্নাইয়ের মারিনা বিচে IAF-এর ৯২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এই এয়ার শো আয়োজন করা হয়েছিল। ২১ বছর পর চেন্নাইতে এই ধরনের প্রথম অনুষ্ঠান হওয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষ এটি দেখতে এসেছিলেন।
সকাল ৭টা থেকেই মানুষ মারিনা বিচের ২ কিলোমিটার এলাকায় জমা হতে শুরু করেন। সকাল ১১:৩০ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এয়ার শো চলে। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে যখন সবাই একসঙ্গে বেরিয়ে আসেন, তখন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
রাফাল-সুখোই-তেজস: ভারতীয় বায়ুসেনার অস্ত্রাগারে যে মারণাস্ত্র রয়েছে তা আপনাকে অবাক করবে!
পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ৪০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ডিহাইড্রেশন ও চাপের কারণে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”
মৃতদের মধ্যে রয়েছেন:
১. জন বাবু (৫৬), ওমানদুরার হাসপাতালের প্রাক্তন কর্মী
২. কার্তিকেয়ান (৩৪)
৩. শ্রীনিবাসন (৪৮)
৪. দিনেশ
৫. মণি (৫৫)
এছাড়া প্রায় ৩০০ জন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। রাজীব গান্ধী সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ৪৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আরও ২০০ জনকে ঘটনাস্থলেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এয়ার শোতে ৭২টি বিমান ও হেলিকপ্টার অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল LCA তেজস, রাফাল, সুখোই ৩০ MKI, জাগুয়ার মিরাজ ২০০০, মিগ ২৯, HTT ৪০, ALH Mk-I, হক MK, চেতক, ডাকোটা ও হার্ভার্ড।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন, উপ-মুখ্যমন্ত্রী উদয়নিধি স্টালিন, এয়ার চিফ মার্শাল এ পি সিং-সহ অনেক মন্ত্রী ও সামরিক কর্মকর্তারা এই অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন।
এই অনুষ্ঠান লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে। কারণ ১৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ একসঙ্গে এই এয়ার শো দেখেছেন।
কিন্তু এত বড় জনসমাগমের জন্য কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত ছিল না। ফলে অনুষ্ঠান শেষে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মারিনা বিচের আশপাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। মেট্রো স্টেশন ও বাস স্টপগুলোতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে[5]।
অনেকে পানির অভাবে ও গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা ছিল না।
AIADMK-এর সাধারণ সম্পাদক এডাপ্পাদি কে পালানিস্বামী DMK সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, “রাজ্য সরকার আগেই জানিয়েছিল যে যাতায়াত ও মৌলিক সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বাহিনী অপর্যাপ্ত থাকায় মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। দেশের অনেক শহরে এ ধরনের অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু চেন্নাইতে প্রাণহানি ঘটা খুবই দুঃখজনক।”
এই ঘটনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, এত বড় জনসমাগমের জন্য আয়োজকদের আরও ভালভাবে প্রস্তুত থাকা উচিত ছিল। পর্যাপ্ত পানীয় জল, চিকিৎসা সুবিধা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল। ভবিষ্যতে এ ধরনের বড় অনুষ্ঠানের আগে সব দিক বিবেচনা করে পরিকল্পনা করা জরুরি।