Common mistakes during Chhath Puja: ছটপুজো হল বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তর প্রদেশের একটি জনপ্রিয় উৎসব। এই উৎসবে সূর্যদেবতার পূজা করা হয় এবং প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। তবে এই পবিত্র দিনে কিছু নিষিদ্ধ কাজ রয়েছে যা করা উচিত নয়। এই নিবন্ধে আমরা জানব ছটপুজোর দিন কোন কাজগুলি করা থেকে বিরত থাকা উচিত এবং কেন।
ছটপুজোর ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। এটি হিন্দু ধর্মের একটি প্রাচীন উৎসব যা সূর্যদেবতা এবং ছঠী মাতাকে সম্মান জানানোর জন্য পালন করা হয়। এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং জীবনের জন্য অপরিহার্য উপাদান যেমন সূর্যালোক ও জলের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।ছটপুজো সাধারণত কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে পালিত হয়। এই সময় ব্রতধারীরা কঠোর উপবাস পালন করেন এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় নদী বা জলাশয়ে দাঁড়িয়ে পূজা করেন। এই উৎসব চার দিন ধরে চলে এবং প্রতিটি দিনের নিজস্ব তাৎপর্য রয়েছে।
ছটপুজোর পবিত্রতা রক্ষার জন্য কিছু কাজ থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এমন কিছু কাজের তালিকা দেওয়া হল যা ছটপুজোর দিন করা উচিত নয়:
ছটপুজোর সময় মাংস খাওয়া ও মদ্যপান করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই সময় শুদ্ধ ও সাত্ত্বিক খাবার গ্রহণ করা উচিত। মাংস ও মদ্যপান করলে উৎসবের পবিত্রতা নষ্ট হয় এবং দেবী-দেবতার অসন্তোষ লাভ করা যায়।
ছটপুজোর সময় কোনও প্রকার অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়। এই সময় সকলের সাথে সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা উচিত। অশোভন ভাষা ব্যবহার করলে তা দেবী-দেবতার অপমান হিসেবে গণ্য হতে পারে।
Bangladeshi Minority Security: হুমকি ও আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে দুর্গাপূজা,সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরা
ছটপুজোর সময় কারও সাথে ঝগড়া-বিবাদ করা উচিত নয়। এই সময় শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়ানো উচিত। কোনও প্রকার বিবাদ বা অশান্তি সৃষ্টি করলে তা উৎসবের পবিত্রতা নষ্ট করে।
ছটপুজোর সময় কোনও অপবিত্র স্থানে যাওয়া উচিত নয়। এই সময় শুদ্ধ ও পবিত্র স্থানে থাকা উচিত। অপবিত্র স্থানে গেলে তা ব্রতের পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে।
ছটপুজোর সময় নিজেকে ও পরিবেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরিষ্কার থাকলে তা দেবী-দেবতার অসন্তোষ লাভ করতে পারে।
ছটপুজোর দিন যেমন কিছু কাজ করা নিষিদ্ধ, তেমনি কিছু কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এমন কিছু কাজের তালিকা দেওয়া হল যা ছটপুজোর দিন করা উচিত:
ছটপুজোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল উপবাস পালন। ব্রতধারীরা কঠোর উপবাস পালন করেন। এই উপবাস শুধু খাদ্য থেকে বিরত থাকা নয়, বরং মন ও আত্মাকে শুদ্ধ করার একটি প্রক্রিয়া।
ছটপুজোর মূল উদ্দেশ্য হল সূর্যদেবতার পূজা করা। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় জলাশয়ে দাঁড়িয়ে পূজা করা হয়। এই পূজার মাধ্যমে সূর্যদেবতার আশীর্বাদ কামনা করা হয়।
ছটপুজোর জন্য বিশেষ প্রসাদ তৈরি করা হয়। এই প্রসাদ তৈরি ও বিতরণ করা একটি পুণ্যের কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রসাদ হিসেবে ঠেকুয়া, খাজা, নারিকেল ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
ছটপুজোর সময় পরিবেশ পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে জলাশয় ও তার আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখা উচিত। এটি প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি উপায়।
ছটপুজোর সময় দান-ধ্যান করা একটি পুণ্যের কাজ। গরিব ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করা উচিত। এছাড়া ধ্যান করে মনকে শান্ত ও একাগ্র করা উচিত।
ছটপুজো শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও বটে। এই উৎসব সমাজে সম্প্রীতি ও ঐক্য বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রিত হয়ে এই উৎসব উদযাপন করে।ছটপুজোর সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। লোকগীতি, নৃত্য ও নাটকের মাধ্যমে উৎসবের আনন্দ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি ও বিতরণ করা হয়।
ছটপুজো প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি উৎসব। তবে এই উৎসবের কারণে পরিবেশের উপর কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। জলাশয়ে পূজার সামগ্রী ফেলার কারণে জলদূষণ হতে পারে। এছাড়া প্লাস্টিক ও অন্যান্য অজৈব পদার্থের ব্যবহার পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে।এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অনেক জায়গায় কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করা হচ্ছে যাতে প্রাকৃতিক জলাশয়ের দূষণ রোধ করা যায়। এছাড়া জৈব পদার্থের ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে।
প্রতিবাদের মুখে দুর্গাপুজো: RG Kar কাণ্ডের ছায়ায় বাংলার উৎসব
সময়ের সাথে সাথে ছটপুজোর রূপও পরিবর্তিত হচ্ছে। আধুনিক যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পূজার লাইভ সম্প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উৎসবের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে।তবে এই আধুনিকতার মধ্যেও ছটপুজোর মূল ভাবনা ও আদর্শ অক্ষুণ্ণ রয়েছে। মানুষ এখনও প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং সূর্যদেবতার আশীর্বাদ কামনা করে।
ছটপুজো একটি পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ উৎসব। এই উৎসবের মর্যাদা রক্ষা করার জন্য কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছটপুজোর দিন নিষিদ্ধ কাজগুলি থেকে বিরত থেকে এবং করণীয় কাজগুলি সম্পাদন করে আমরা উৎসবের পবিত্রতা রক্ষা করতে পারি।
মন্তব্য করুন