ছট পূজা হিন্দু ধর্মের একটি প্রাচীন উৎসব যা সূর্য দেবতার উপাসনা এবং প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে পালিত হয়। এই বছর ছট পূজা ১৭ নভেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে এই উৎসব বিশেষ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়।
ছট পূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য:
ছট পূজার ইতিহাস বৈদিক যুগ পর্যন্ত প্রসারিত। ঋগ্বেদে সূর্য দেবতার উপাসনার উল্লেখ পাওয়া যায়, যা কালক্রমে ছট পূজায় রূপান্তরিত হয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষ সূর্যের জীবনদায়ী শক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
ছট পূজার মূল উদ্দেশ্য হল পরিবারের সুস্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করা। প্রাচীনকাল থেকেই মায়েরা তাদের সন্তানদের মঙ্গলের জন্য এই পূজা করে আসছেন। বর্তমানে সকল বয়সের মানুষ নিজেদের সার্বিক কল্যাণের জন্য এই উৎসব পালন করেন।
ছট পূজার রীতিনীতি:
ছট পূজা চার দিন ব্যাপী পালিত হয়। প্রতিটি দিনের নির্দিষ্ট রীতিনীতি রয়েছে:
১ম দিন (নহায় খায়): ব্রতধারীরা পবিত্র নদী বা জলাশয়ে স্নান করে উপবাস শুরু করেন। তারপর লাউ ও ভাত রান্না করে খান।
২য় দিন (খারনা): সারাদিন উপবাস পালন করে সন্ধ্যায় খীর, পুরি ও রুটি তৈরি করে দেবতাদের নিবেদন করা হয়।
৩য় দিন (সন্ধ্যা অর্ঘ্য): ৩৬ ঘণ্টার কঠোর উপবাস শুরু হয়। সূর্যাস্তের সময় নদী বা জলাশয়ে দাঁড়িয়ে অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য দেওয়া হয়।
৪র্থ দিন (উষা অর্ঘ্য): সূর্যোদয়ের সময় উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য দিয়ে উপবাস ভঙ্গ করা হয়।
জগদ্ধাত্রী পূজা: মা’র আশীর্বাদ পেতে জানুন পূজা পদ্ধতি ও ফর্দমালা
ছট পূজার বিশেষ খাবার:
ঠেকুয়া: গম, ঘি, চিনি বা গুড়, এলাচ, নারকেল ও বাদাম দিয়ে তৈরি করা হয়।
খীর: চাল, দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি মিষ্টি পায়েস।
কাসার: চিনি বা গুড় দিয়ে তৈরি মিষ্টি।
এছাড়াও ফল, সবজি ও অন্যান্য প্রসাদ নৈবেদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ছট পূজার কয়েকটি অজানা তথ্য:
১. এটি হিন্দু ধর্মের প্রাচীনতম উৎসবগুলির একটি।
২. চার দিন ব্যাপী এই উৎসবে কঠোর নিয়ম-কানুন পালন করতে হয়।
৩. একবার শুরু করলে এই পূজা বংশ পরম্পরায় চালিয়ে যেতে হয়।
৪. পরিবারে কারও মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনও কারণে পূজা বন্ধ করা যায় না।
৫. পূজার সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা পেঁয়াজ-রসুন খেতে পারেন না।
ছট পূজা ২০২৩ এর শুভেচ্ছা বার্তা:
১. ছট পূজার শুভেচ্ছা। সূর্য দেবতা আপনাকে সমৃদ্ধি, সুখ ও সাফল্যে ভরিয়ে দিন।
২. আপনি ও আপনার পরিবারের জন্য আশীর্বাদপূর্ণ ছট পূজার শুভেচ্ছা জানাই।
৩. এই পবিত্র দিনে আপনার জীবন আনন্দ, শান্তি ও প্রাচুর্যে ভরে উঠুক। শুভ ছট পূজা!
৪. আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য সুখময় ও সমৃদ্ধিশালী ছট পূজার শুভেচ্ছা। আশীর্বাদপুষ্ট থাকুন!
৫. ছঠী মাইয়ার দিব্য আশীর্বাদ আপনার জীবনে সুখ ও সৌভাগ্য বয়ে আনুক। শুভ ছট পূজা!
৬. সূর্য দেবতার প্রতি প্রার্থনা করার সময়, আপনার জীবন আশা ও ইতিবাচকতায় আলোকিত হোক। শুভ ছট পূজা!
৭. ছট পূজার এই পবিত্র উৎসব আপনার জীবনে চিরস্থায়ী আনন্দ ও সন্তোষ বয়ে আনুক। আপনার ও প্রিয়জনদের জন্য শুভেচ্ছা।
৮. এই পবিত্র উৎসবে, আপনার ভক্তি গভীর হোক এবং প্রার্থনা পূরণ হোক। শুভ ছট পূজা!
৯. আপনার প্রিয়জনদের সাথে একত্রিত হওয়া, ভালোবাসা ও দৈবী আশীর্বাদে ভরা একটি ছট পূজা কামনা করি।
১০. ছঠী মাইয়ার দিব্য আশীর্বাদ আপনার বাড়িতে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। শুভ ছট পূজা!
১১. সূর্য দেবতা উদয় হওয়ার সাথে সাথে আপনার সকল ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণ হোক। শুভ ছট পূজা!
১২. ছঠী মাইয়ার দিব্য উপস্থিতি আপনার জীবনে স্বাস্থ্য, সম্পদ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। শুভ ছট পূজা!
১৩. ভক্তি, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতায় ভরা একটি ছট পূজা এবং প্রচুর আশীর্বাদের কামনা করি।
১৪. সূর্যের রশ্মি আপনার জীবনে সুখ ও সাফল্য বয়ে আনুক। শুভ ছট পূজা!
১৫. এই শুভ অবসরে, আপনার বিশ্বাস দৃঢ় হোক এবং হৃদয় ইতিবাচকতায় পূর্ণ হোক। শুভ ছট পূজা!
১৬. আশীর্বাদপূর্ণ ও আনন্দময় ছট পূজার শুভেচ্ছা। আপনি ভালোবাসা ও সুখে পরিবেষ্টিত থাকুন।
১৭. ছঠী মাইয়ার দিব্য আশীর্বাদ আপনার পরিবারে সমৃদ্ধি ও সামঞ্জস্য বয়ে আনুক। শুভ ছট পূজা!
১৮. আপনি ও আপনার পরিবারের জন্য আনন্দ, সমৃদ্ধি ও ইতিবাচকতায় ভরা একটি ছট পূজার শুভেচ্ছা।
১৯. ছট পূজার উৎসব আপনার জীবনকে সুখ ও সাফল্যে আলোকিত করুক। শুভ উদযাপন!
২০. এই বিশেষ দিনে, আপনার প্রার্থনা শোনা যাক এবং আপনার জীবন আশীর্বাদে ভরে উঠুক। শুভ ছট পূজা!
২১. সূর্যের দিব্য আলো আপনার জীবনকে অসীম সুখ, সাফল্য ও সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে তুলুক। শুভ ছট পূজা!
২২. একত্রিত হওয়া, ভালোবাসা ও সূর্য দেবতার অসংখ্য আশীর্বাদে আলোকিত একটি ছট পূজা কামনা করি।
২৩. ছট পূজার এই পবিত্র অবসর আপনার জন্য আশার আলো হয়ে উঠুক, যা আপনাকে শান্তি ও পরিপূর্ণতায় সজ্জিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।
২৪. আপনি যখন সূর্য দেবতার কাছে প্রার্থনা করবেন ও আশীর্বাদ চাইবেন, আপনার জীবন ইতিবাচকতা ও বিশ্বাসে উদ্ভাসিত হোক। শুভ ছট পূজা!
২৫. প্রশান্তি, কৃতজ্ঞতা ও দৈবী অনুগ্রহের মুহূর্তে ভরা একটি ছট পূজার আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশীর্বাদপুষ্ট থাকুন!
২৬. এই ছট পূজায়, আমরা সূর্য দেবতার কাছে প্রার্থনা করি যেন আমাদের জীবন আনন্দ, সমৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্যে ভরে ওঠে। শুভ ছট পূজা!
২৭. সূর্যের দিব্য শক্তি আমাদের জীবনকে ইতিবাচকতা, শক্তি ও প্রাচুর্যে পূর্ণ করুক। ছট পূজার শুভেচ্ছা!
২৮. ছট পূজা হল প্রকৃতির দান-এর জন্য আশীর্বাদ চাওয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সময়। এই উৎসব সকলের জীবন আলোকিত করুক। শুভ ছট পূজা!
২৯. ছঠী মাইয়ার দিব্য আশীর্বাদ আপনার জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। এই পবিত্র উৎসবে আপনার সকল মনোবাসনা পূরণ হোক।
৩০. সূর্য দেবতার কৃপায় আপনার জীবন উজ্জ্বল হোক, আপনার পথ সুগম হোক এবং আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক। শুভ ছট পূজা!
Surya Mantra in Bengali: রবিবারে এই শক্তিশালী মন্ত্র জপ করলে জীবনে আসবে সাফল্য ও সমৃদ্ধি
ছট পূজার সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব:
ছট পূজা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক সংহতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। এই উৎসব পালনের সময় মানুষ প্রকৃতির সাথে নিবিড় সংযোগ স্থাপন করে এবং পরিবেশের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
সামাজিক সংহতি:
ছট পূজা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে একত্রিত করে। এই সময় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে একসাথে উৎসব পালন করে। এটি সামাজিক সম্প্রীতি ও ঐক্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
পরিবেশ সংরক্ষণ:
ছট পূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল জলাশয় পরিষ্কার করা। উৎসবের আগে স্থানীয় লোকেরা নদী, পুকুর বা অন্যান্য জলাশয় পরিষ্কার করে, যা পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা করে।
অর্থনৈতিক প্রভাব:
ছট পূজার সময় স্থানীয় অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। পূজার প্রয়োজনীয় সামগ্রী, প্রসাদ ও অন্যান্য জিনিসপত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক হয়।
স্বাস্থ্য সচেতনতা:
ছট পূজার কঠোর উপবাস ও নিয়ম-কানুন পালন করার মাধ্যমে মানুষ শারীরিক ও মানসিক শুদ্ধতা অর্জন করে। এটি স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ছট পূজার চ্যালেঞ্জ ও সমাধান:
১. পরিবেশ দূষণ:
চ্যালেঞ্জ: পূজার সময় জলাশয়ে বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে পরিবেশ দূষণের সমস্যা দেখা দেয়।
সমাধান: জৈব-বিঘটনযোগ্য সামগ্রী ব্যবহার করা এবং পূজার পর জলাশয় পরিষ্কার করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
২. ভিড় নিয়ন্ত্রণ:
চ্যালেঞ্জ: বড় শহরগুলোতে ছট পূজার সময় বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হয়, যা ভিড় নিয়ন্ত্রণের সমস্যা সৃষ্টি করে।
সমাধান: উপযুক্ত পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং বিভিন্ন স্থানে পূজার ব্যবস্থা করা।
৩. স্বাস্থ্য ঝুঁকি:
চ্যালেঞ্জ: দীর্ঘ সময় ধরে উপবাস পালন ও ঠাণ্ডা জলে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
সমাধান: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপবাস পালন করা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা।
৪. নিরাপত্তা:
চ্যালেঞ্জ: জলাশয়ে অর্ঘ্য দেওয়ার সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।
সমাধান: নিরাপত্তা কর্মীদের মোতায়েন করা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা।
৫. অতিরিক্ত খরচ:
চ্যালেঞ্জ: পূজার প্রস্তুতি ও উপকরণের জন্য অনেক সময় অতিরিক্ত খরচ হয়ে যায়।
সমাধান: সামর্থ্য অনুযায়ী পূজা করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সামাজিক সহযোগিতা বাড়ানো।
ছট পূজার ভবিষ্যৎ:
ছট পূজা একটি প্রাচীন ঐতিহ্য হলেও এর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এই উৎসব শুধু বিহার বা নেপালেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং সারা ভারত এবং বিদেশেও পালিত হচ্ছে। আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ছট পূজার রীতিনীতিতেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
ভবিষ্যতে ছট পূজা আরও বেশি জনপ্রিয় হবে বলে আশা করা যায়। তবে এর সাথে সাথে পরিবেশ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার বিষয়গুলোর প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়ে অনলাইনে পূজার লাইভ স্ট্রিমিং, ভার্চুয়াল অর্ঘ্য প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী স্থান থেকেও লোকেরা এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
ছট পূজা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার প্রতীক। এই উৎসব মানুষকে প্রকৃতির সাথে সংযুক্ত করে এবং জীবনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করে। ছট পূজার মাধ্যমে আমরা শিখি যে, প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন করলে তা আমাদের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই প্রাচীন ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করি এবং এর মাধ্যমে আমাদের জীবন ও সমাজকে আরও সমৃদ্ধ করি।